Saturday, March 8

রাত নামলেই কাওরানবাজারে ডাকাডাকি আর টানাটানি

ঢাকা: ইট কাঠ আর পাথরের শহর এই ঢাকা। কথিত আছে বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলির এই শহর। সেই শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানান রকম গল্প। ঢাকার দিনের গল্প এক রকম আর রাতের গল্প আরেক রকম। সেই রাতের ঢাকা নিয়ে লিখতে গিয়ে সামনে চলে আসে বৃহৎ মিডিয়া পাড়া কাওরান বাজার এলাকা। শুধু বাংলামেইলের প্রতিবেদক হিসেবেই নয় একজন দর্শনার্থী হিসেবেও ঢাকা আমার আগ্রহের জায়গা। 
 
কাওরান বাজার এলাকায় প্রবেশ করতেই দুম করে নাকে এসে লাগে আধপচা সবজির ঘ্রাণ। এর পরপরই যে বিষয়টি নজরে এলো তা হলো ডাকাডাকি আর টানাটানির হিড়িক। যারা এই ডাকাডাকি করছেন তারা বয়সে সবাই উঠতি তরুণ-তরুণী। এদের ভেতর কেউ যৌনকর্মী আবার কেউ মাদক ব্যবসায়ী। এ যেন ধাঁ চকচকে ঢাকার মধ্যেই এক অন্য জগৎ। 
 
এভাবেই প্রতিরাতে মিডিয়াপাড়া কাওরান বাজারে চলে খদ্দের ধরার প্রতিযোগিতা। তাও আবার সরকারি উর্দিধারী পুলিশ বাহিনীর সামনেই। কিন্তু তাদের ভাবখানা এমন যেন তারা কিছুই দেখছে না কিংবা এখানে কিছুই হচ্ছে না। কাওরান বাজার এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো যৌন ব্যবসা পরিচালনার দায়ে সিলগালা করা থাকলেও হোটেলগুলোর নিচে যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত দালালরা সর্বদা ঘোরাফেরা করেন। সুযোগ পেলেই পথচারীদের ডাকতে থাকেন। প্ররোচিত করতে চেষ্টা করেন সাধারণ পথচারীদের। আর তাদের এই ডাকে যদি কেউ না বুঝেও থামে তাহলে আর তার রেহাই নেই। এতে একদিকে যেমন বিপাকে পড়েন কাওরান বাজারে নতুন আসা ব্যবসায়ীরা, ঠিক তেমনই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাজার করতে আসা মানুষগুলোও।
 
অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে গেলে প্রতিবেদকেই টানাহেঁচড়া শুরু করেন হোটেল মেট্ররাজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা দালালরা। একটু থামতেই চারিদিক থেকে জড়ো হতে শুরু করেন দাললরা। এসময় পলাশ নামের এক তরুণ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মামা লাগবে নাকি?’ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খালাদের সাথে দেখা করবেন না?’ কোথায় দেখা করতে হবে জানতে চাইলে পলাশ নামের ওই দালাল জানান, বেশ কিছুদিন ঝামেলার কারণে এখানে আর এখন খালাদের সঙ্গে দেখা করা যায় না। তবে একটু সামনেই অর্থাৎ মালিবাগ ও এর আশপাশের অভিজাত এলাকাগুলোতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে যৌনব্যবসা। যেখানে গেলেই মেলামেশা করা যাবে খালাদের সাথে।
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু হোটেল মেট্ররাজের নিচেই নয়, এভাবে টানাটানি চলে সানরাইজ, গোল্ডেন জুবলিসহ কাওরান বাজারের অনান্য সব আবাসিক হোটেলের নিচেই। 
 
আবাসিক হোটেলগুলো পেরিয়ে একটু সামনে গেলেই কাওরান বাজারের লোহাপট্টি, যেখানে রাতের পাশাপাশি দিনে দুপুরেও চলে মাদক বিক্রির ধুম। মূলত সরকারি জমির ওপর গড়ে ওঠা রেলওয়ে বস্তির কল্যাণেই জমজমাট হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সুন্দর পরিপাটি পরিবেশে শীতল পাটির ওপর বিছিয়ে চলে গাঁজার প্রদর্শনী ও বিক্রি। আর এই কাজের প্রধান ভূমিকায় থাকেন তরুণীরা। কথা হয় এমনই এক তরুণীর সঙ্গে। নাম তার শাবনূর। তিনি থাকেন কাওরান বাজার রেলবস্তির ধারে। শবনূর জানান, তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরখানেক এখানে মাদকের ব্যবসা করছেন। সারাদিন রেলের ধারে বেচাকেনা করেন। আর সন্ধ্যা হলেই চলে আসেন বাজারের প্রধান রাস্তায় আর ডাকতে থাকেন খদ্দের।
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাওরান বাজারে এক শ্রেণীর মাদকাসক্ত যুবক রয়েছেন। যাদের কাজ প্রশাসনের দালালি করা। সাধারণত নতুন চেহারার কেউ কাওরান বাজারে মাদক কিনতে এলে এরা তাদের কাছে নিরাপদে পার করে দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করে। যা না দিলেই তারা প্রশাসনের লোকদের কাছে জানিয়ে দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্রেতাকে গ্রেপ্তারের ভয় ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। রাত হলেই কাওরান বাজারে সৃষ্টি হয় এমন সব অদ্ভুত দৃশ্যের। যার মূল নায়ক ও খলনায়ক হিসেবে কাজ করেন পুলিশ ও স্থানীয় দালাল চক্র।
 
এ ব্যাপারে কথা হলে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা তেজগাঁও থানার এসআই শহীদুল দায় এড়িয়ে জানান, এগুলো নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। তারা শুধু জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে দায়িত্ব পালন করেন। আর পুলিশের দালালের ব্যাপারটি সরাসরি অস্বীকার না করে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ এখানে অনেকেই আছেন যারা আইন শৃঙ্খলা বাহীনিকে নানাভাবে সহায়তা করতে বিভিন্ন সময় অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে নানা ধরনের তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা।’
 
বাংলামেইল২৪ডটকম/ এ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়