Sunday, June 30

আমতলীসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

আমতলী (বরগুনা): আষাঢ়ের পূর্ণিমার জোয়ারে ও প্রবল বৃষ্টি পাতে পায়রা নদীতে অস্বাভাভিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে প্রায় ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ার উপজেলার বালিয়াতলী, ঘোপখালী,ও পশুর বুনিয়া জয়ালভাঙ্গা তুলাতলা, গুলিশাখালীর জেলেপাড়া, আবাসন, আঙ্গুলকাটাসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে গুলিশাখালীর আবাসন ও জেলে পাড়া এবং আরপাঙাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙ্গা বেড়িবাধঁ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় ঐসব এলাকা এখন প্রায় ৩ ফুট পানির নিচে। গুলিশাখালী এবং বালিয়াতলী এলাকার অনেক দরিদ্র জেলে পরিবারের ঘর-বাড়ি তলিয়ে রান্না করতে না পাড়ায় এখন তাদের না খেয়ে পানিবন্ধি অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নারী এবং শিশুদের ভোগান্তি বেড়েছে সব চেয়ে বেশি। পানি বৃন্ধির ফলে আমতলী ফেরির পল্টুনের গ্যাংওয়ে প্রায় ৩ ফুট তলিয়ে যাওয়ায় এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি  পোহাতে হয়েছে। অনেক কে ভিজেপুরে গ্যাংওয়েপার হতে দেখা গেছে।গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে ও শনিবার সারা রাতের অব্যাহত বষ্টিতে আমতলী তালতলী উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আমতলীর বালিয়াতলী, নিশানবাড়ীয়া, গুলিশাখালী, বড়বগি, আমতলীর চাওড়া, হলদিয়া আরপাঙ্গাশিয়া সহ উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর কারনে ঘূর্র্নিঝড় মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে আমতলী, তালতলীর নিম্নাঞ্চল ও হাজার হাজার ফসলী জমি প্ল¬াবিত হচ্ছে। এদিকে অনেক পরিবার উচু বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। পায়রা  নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়ীবাঁধের উপর দিয়ে এ সব গ্রামগুলো প¬াবিত হয়েছে। এতে সমুদ্র উপকূলীয় আমতলীর  জয়ালভাঙ্গা, তেতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়ার তুলাতলার  ৪ টি স্থানে ২৫০ ফুট ভেরী বাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়ে। এ গ্রামের পানিবন্দি শতাধিক পরিবার উচু বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ণিমার জোয়ার ও অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চল ও ফসলী জমি তলিয়ে গেছে।
আমতলী উপজেলার তুলাতলী গ্রামের গৃহবধূ মাহমুদা বেগম  বলেন, বাড়ির মধ্যে হাঁটু পানি ওঠার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। সরকার আমাদের এ দুর্দশা দেখেও কেন যে কোন ব্যবস্থা নেয়না তা আমরা এখনো বুঝতে পারিনা। এছাড়া সোনাকাটা, নিশানবাড়ীয়া, বড়বগী, ছোটবগী, পচাঁকোড়ালিয়া, আড়পাংগাশিয়া, চাওড়া,  হলদিয়া, গুলিশাখালী ইউনিয়নের ভাঙা বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে এলাকাবাসীরা  জানিয়েছেন।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পূর্ণিমার জোয়ার থাকায় আমতলীর পায়রা নদীসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার ৩.৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবার কারণে এসব নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের চাপ কমে গেলে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধগুলো পুনরায় মেরামত করা হবে।
আমতলীসহ উপকূলের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও পূর্ণিমার জোয়ারে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমতলীতে  প্লাবিত হয়েছে  অর্ধশতাধিক গ্রাম। পায়রা-  নদীতে বুধবার  পানি ্ ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছ্ উপজেলার বেশ ক’টি আবাসন প্রকল্প। পানির অস্বাভাবিক চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। 
এদিকে দিন-রাতে দুইবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় গভীর রাতে আতংকে থাকে উপকূলের হাজার হাজার মানুষ। দিনের পাশাপাশি রাতে আবারও প্লাবিত হবে এসব এলাকা। তলিয়ে যাবে ঘর-বাড়ি। তাই পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বসে থাকে দুর্গত মানুষেরা। রান্না নাই, খাবার নাই চরম উৎকন্ঠা নিয়ে কাটবে নির্ঘুম রাত। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপকূলের অধিবাসীরা।
গতকালও উপজেলার  কয়েকটি সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অতি জোয়ারের কারণে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের ১ টি ফেরী (আমতলী-পুরাকাটা) পল্টুন তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ প্রায় ৬  ঘন্টা বন্ধ ছিল। 
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বরগুনায় জোয়ারের মোট উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার  বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ছিল। 
 উপজেলার তক্তাবুনিয়া   আবাসনের  সালমা  বেগম  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোরা রানতেও (রান্না) পারি না, আর খাইতেও পারিনা, মোগো কতা (কথা) শুইন্না আর লাভ কি? পায়খানায় (টয়লেট) যাওয়ারও জাগা নাই। 
উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দুলাল ফরাজী জানান, ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বসত-বাড়িসহ ফসলের সকল জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার জানালেও কোন উপকারে আসছে না।
বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক  জানান, দুর্গত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আপরদিকে আমতলী গাজিপুর সড়কের তুলাতলা নামক স্থানে হাইওয়ে সড়কের রাস্তা পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম প্প্লাবিত হয়েছে। রবিবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পানির কাছে বন্ধী হয়ে পড়েছে আমতলীর উপজেলার  হাজার হাজার পরিবার। চুলোয় রান্না চলছে না ঘরের মাচায় রন্না করতে হয়। অন্যদিকে, আমতলী পৌরসভার ১,৩,৪,৫,৮,৯ নং ওয়ার্ডের বাড়ী ঘর তলিয়ে গেছে।এর মধ্যে ৩ .৪.৫ নং ওয়ার্ডের অবস্থা সোচনীয় রাস্তাঘাট সব তলিয়ে গেছে। বাসা বাড়িতে পানি উঠে গেছে। এ ব্যাপারে আমতলী পৌরসভার মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জলাবদ্ধতা থেকে পৌরবাসীকে রক্ষার জন্য শিঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়