ঢাকা: ব্রাক ব্যাংকের ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। অপহরণকারীরা কিংবা চাঁদাবাজরা বিকাশের মাধ্যমে তাদের মুক্তিপণ ও চাদার টাকা গ্রহণ করায় এদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমন স্বল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সহজ রেজিস্ট্রেশনের কারনে বিকাশের অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে। আর এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।-খবর একটি অনলাইন গণম্যাধ্যমের।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত ২৩ মে বিকাল ৫টায় রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে বাসে ওঠার কালে মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল ইসলামকে ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাকে থাকলেও বাকি ৩-৪ জন ছিল সাদা পোশাকে। ওই রাতেই স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘বিকাশ’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণকারীদের হাত থেকে ছাড়া পান ব্যবসায়ী ওহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পল্টন মোড় থেকে তাকে ধরার পর ব্যাগের মধ্যে অবৈধ মালামাল আছে বলে দাবি করে ওই ব্যক্তিরা। কিন্তু ব্যাগ তল্লাশি না করে তাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত এলাকার ভবনের কক্ষে নিয়ে রাখে অপহরণকারীরা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোন থেকে তার ভাই বড় বাবুর নম্বরে ফোন করে লাউড স্পিকার দিয়ে মারধর ও চিৎকারের শব্দ শোনায়। ওহিদুলকে ছেড়ে দিতে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা পাঠানোর জন্য একটি মোবাইল নম্বর (০১৯৩১২৭৩০৭৯) দেয় অপহরণকারীরা। এক ঘণ্টার মধ্যে টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। বাবু সন্ধ্যা সাতটার দিকে ৭০ হাজার টাকা ওই বাংলালিংক নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর পর ওহিদুলকে চোখ বেঁধে কমলাপুর এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ায় পুলিশের কাছে আর অভিযোগ করার সাহস করেননি ওহিদুল কিংবা তার ভাই বাবু।
এরকম আরও অনেকেই প্রতিনিয়তই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিপণের জন্য অপহরণের শিকার হচ্ছেন। কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর পরিচয়ে, আবার কেউ অপহৃত হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। আর এই মুক্তিপণের অর্থ নিরাপদে নিতে টাকা পাঠানোর দ্রুততম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘বিকাশ’কে। কেবল অপহরণের মুক্তিপণ আদায়েই নয়, বর্তমানে চাঁদাবাজির টাকা আদায়েও বিকাশ মাধ্যমটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মোটা অংকের চাঁদাও আদায় করা হচ্ছে বিকাশের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকাশ সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত ও নিরাপদে টাকা পাঠানোর একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এর জনপ্রিয়তা শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। বিকাশের মাধ্যমে ঝুঁকি ও ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজেই সাধারণ মানুষ টাকা লেনদেন করতে পারছে। কিন্তু জনপ্রিয় এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে অপরাধীরা চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায় এবং অস্ত্র ও মাদক কেনাবেচায় টাকা ব্যাপক হারে লেনদেন করছে।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে, তার বেশিরভাগ টাকাই সন্ত্রাসীরা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করছে। শুধুমাত্র একটি মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে স্বল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থায় টাকা উত্তোলন করার সুযোগ থাকায় সন্ত্রাসীরা এই মাধ্যম লুফে নিয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণকারী ও চাঁদাবাজদের ধরতে পারছেন না। টাকা উত্তোলন করা সহজ হওয়ায় চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে। বিকাশের ব্যাপারে দ্রুতই বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। গত মাসে পুরনো ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। অপহৃত ব্যক্তিকে ফিরে পেতে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহৃতের পরিবার বিকাশের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি সানোয়ার হোসেন জানান, অপহরণের ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে ঘটনার তদন্তে জানা যায় যে, বিকাশের যে মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে তা সাভার এলাকায় রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। আর টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে দিনাজপুরের একটি বিকাশ সেন্টার থেকে। ফলে অপরাধীকে ধরা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি জানান, ঘরে বসে একটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বিকাশের মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে। ফলে সন্ত্রাসীরা চাঁদা ও মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিতে নিরাপদ মনে করছে। বর্তমানে যেসব চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা আদায় করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই বিকাশের মাধ্যমে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এ ধরনের একাধিক চক্র রয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকাশের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা উত্তোলন বন্ধ করতে হলে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়াতে হবে। অপরাধীরা সাধারণত ভুয়া পরিচয়পত্র ও ছবি ব্যবহার করে বিকাশের অ্যাকাউন্ট খোলে। এক্ষেত্রে যে মোবাইল নম্বরে বিকাশ করা হয়, তার রেজিস্ট্রেশনও থাকে ভুয়া। একবার চাঁদা কিংবা মুক্তিপণ আদায়ের পর তা ফেলে দেয় অপরাধী চক্র। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের সহজে শনাক্ত করতে পারে না। এজন্য পাসপোর্টের মতো বিকাশ কেন্দ্রে ছবি তুলে এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা প্রয়োজন। এতে বিকাশের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ২/১ বছর আগেও কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা হাতে হাতে চাঁদা ও মুক্তিপণের টাকা আদায় করা হতো। এতে ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে ওঁৎ পেতে থাকত। ফলে মুক্তিপণ কিংবা চাঁদার টাকা নিতে আসলে খুব সহজেই অপরাধী ধরা পড়ত। কিন্তু বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে টাকা তোলার সুবিধা থাকায় অপরাধীদের পুলিশ ধরতে পারছে না। ফলে এ ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
সর্বশেষ সংবাদ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়