Sunday, June 9

মিরসরাইয়ে গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও

মিরসরাই (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গ্রাহকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ‘পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতি’ নামক একটি ভুয়া এনজিও উধাও হয়ে গেছে। রবিবার গ্রাহকরা ঋণের টাকা আনতে গিয়ে তাদের কার্যালয় বন্ধ দেখেন। এসময় গ্রাহকদের মারধর করেছে ভবন মালিকের শ্যালক। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঋণের আশায় সঞ্চয় জমা দেওয়া অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। প্রতারক চক্রের সাথে এনজিওটির ভবন মালিক জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা। 
জানা গেছে, জোরারগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী হানিফ মিয়ার বাড়িতে একটি ফ্যামিলি বাসা ভাড়া নিয়ে কার্যালয় খুলেন পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতি নামক একটি এনজিও। সহজ শর্তে কম জামানতের বিপরীতে মোটা অংকের ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জোরারগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায় শুরু করেন এনজিও’র কর্মকর্তারা। প্রতারক চক্রকে হানিফ মিয়া ও তার স্ত্রী পারভীন সহযোগিতা করেন। আশপাশের বাড়িতে গিয়ে তাদের ভবনে একটি এনজিও অফিস নিয়েছে এবং ওই এনজিও থেকে জামানত জমা দিয়ে ঋণ নেওয়ার জন্য হতদরিদ্র মানুষদেরকে বলেন। গ্রামের নিরীহ মানুষদেরকে মন ভোলাতে রেজিষ্টার্ড খাতায় ভবন মালিকের মেয়ে বৃষ্টি মহিলা সমিতি’র নাম ব্যবহার করা হয়। প্রতারকদের এই কথায় বিশ্বাস করে এলাকার গরীব মানুষেরা ভূয়া এনজিও পল্লী প্রগতির কর্মকর্তাদের ফাঁদে পড়েন। তারা জনপ্রতি সর্বনিম্ম ৫ হাজার থেকে ৬০/৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দেয়। জামানত সংগ্রহ করে রবিবার (৯জুন) গ্রাহকদের ঋণ নিতে হানিফ মিয়ার বাড়ির কার্যালয়ে যেতে বলেনএনজিও কর্মকর্তারা। সকালে গ্রাহকরা ঋণের টাকা নিতে ওই ঠিকানায় গিয়ে তাদের কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখতে পান। আর কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত মোবাইলগুলিও বন্ধ পান। শনিবার কোন এক সময় প্রতারক চক্র ভবন মালিককে তালা চাবি বুঝিয়ে দিয়ে গা ডাকা দেয়। প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের শত শত লোক। তারা হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। 
সরেজমিনে জোরারগঞ্জে হানিফ মিয়ার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত রেজিঃ নং সি-৫৮৯২২(৯৯৮)০৫ আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন উল্লেখ করে সংস্থাটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করে বলে লেখা রয়েছে। সংগঠনটিকে পিকেএসএফ আর্থিক সহায়তা করছে বলেও সাইনবোর্ডে উল্লেখ আছে। অসংখ্য গ্রাহক বৃথা আশা নিয়ে ওই বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে। অনেক দরিদ্র নারী-পুরুষ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভবন মালিকের স্ত্রী পারভীন আক্তার এনজিওটির কার্যালয়ের তালা খুলে দিলে ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, সামান্য কিছু রেজিষ্টার্ড খাতা ও আসবাবপত্র পড়ে আছে। পাশ বইতে পল্লী প্রগতির ফরিদপুরের কমলপুর উপজেলার ঠিকানা লেখা রয়েছে । 
মোঃ রফিক রফিক, জোৎস্না আক্তার, শামসুন্নেহার, পারভীন আক্তার, আফিয়া খাতুন, শামসুল হুদা সহ অসংখ্যা ভূক্তভোগী জানান, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতির পরিচয় দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম জামানতে সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার কথা বলে কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে এনজিও ভবনের মালিক হানিফ মিয়া ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তারও আমাদেরকে অভয় দিয়ে জামানত জমা দিতে বলে। আকৃষ্ট করতে রেজিষ্টার্ড খাতায় হানিফ মিয়ার মেয়ের নাম দিয়ে ‘বৃষ্টি মহিলা সমিতি’ ব্যবহার করে। রবিবার (৯জুন) সকালে ঋণের টাকা নিতে হানিফ মিয়ার বাড়ীতে গেলে তার শ্যালক জানে আলম ওরফে সুমন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে এবং আমাদের মারধর করে। এছাড়াও এনজিও কর্মকর্তাদের পলিয়ে যেতে সহযোগিতা করার পর রাতের আঁধারে বাড়িওয়ালা এনজিওটির সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলারও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা
প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে হানিফ মিয়া বলেন, ৩ লক্ষ টাকা সেলামী ও ১২ হাজার টাকা ঘর বাড়া দেওয়ার কথা বলে ঘর ভাড়া নেয় দুই ব্যক্তি। তারা একটি এনজিও খোলেন। এনজিও কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে রহস্যজনকভাবে তাদের পরিচয় গোপন রাখেন এবং তাদের কোনো ফোন নাম্বার নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখার হাসান জানান, এনজিও’র প্রতারণার বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি অবগত নন। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়