Monday, May 6

১০ মিনিটের ‘শাপলা’ অভিযান যেভাবে...

ঢাকা : মুর্হুমুহু গুলি। সাউন্ড গ্রেনেড আর আর টিয়ারশেল নিক্ষেপ। বিস্ফোরণ। বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশের দশ হাজারের ফোর্স গত রাতে যখন শাপলা চত্বরে অভিযান চালায় তখন সেখানে গুলি আর বিস্ফোরণ ছাড়া আর কোন শব্দই শোনা যায়নি। মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের অভিযানে হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বর ছেড়ে টিকাটুলি ও আশপাশের গলিতে ঢুকে পড়েন। শাপলা চত্বর ছাড়লেও রাত আড়াইটা চারটা পর্যন্ত থেমে থেকে চলে অভিযান। শেষ পর্যন্তও বিভিন্ন গলি থেকে হেফাজতকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারসেল ছুড়ছিলেন। অভিযান শেষে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের খবরে পাঁচ জন নিহতের কথা বলা হয়। তবে আমাদের মেডিকেল প্রতিবেদক জানিয়েছেন, আটজনের মৃতদেহ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও অন্তত ৬০জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাদের কারও কারও অবস্থা গুরুতর। অভিযানে আহত হয়েছেন অসংখ্য হেফাজত কর্মী। ভোরে হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তাদের ২০জন কর্মী মারা গেছেন।
রাত তখন পৌনে দুইটা। দুই দিক থেকে ঘিরে ফেলা হলো শাপলা চত্বর। একদিকে পল্টন মোড়, অন্যদিকে নটর ডেম কলেজ। খোলা রাখা হয় শুধু মতিঝিল থেকে টিকাটুলীমুখি রাস্তাটি। পুলিশের ওয়ারলেস সেটে ভেসে উঠলো ওদের বেরুতে দাও ওই রাস্তাটি বন্ধ করো না। পুলিশ পৌঁছে গেল সমাবেশের একেবারে কাছে। কিন্তু অ্যাকশনে গেল না। সমাবেশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকলো র‌্যাব পুলিশ। তাদের পেছনে বিজিবি। সমাবেশের পাশে পুলিশ দেখে নিজেদের বক্তৃতা আর স্লোগানের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন হেফাজত কর্মীরা। রাত ঠিক আড়াইটা। তখন পুলিশের হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা এলো আপনার শাপলা চত্বর ছেড়ে চলে যান। কে শুনে পুলিশের কথা ,নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে তখন মুখরিত শাপলা চত্বর। হঠাৎ এক যোগে গর্জে উঠলো টিয়ারসেল, গুলি সাউন্ড গ্রেনেড। কেঁপে উঠলো মতিঝিল এলাকা। প্রথম আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ইটপাটকেল হাতে নেয় হেফাজত কর্মীরা। কিন্ত দাঁড়াতেই পারেনি তারা। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায় মতিঝিল শাপলা চত্বর। দক্ষিণের ফাঁকা সড়ক দিয়ে হেফাজত কর্মীরা যেতে থাকেন টিকাটুলীর দিকে । তাদের পিছু নেয় পুলিশ। দীর্ঘ সময় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এলিকো বিল্ডিংয়ের পাশের গলিতেও আশ্রয় নেয় বিপুল সংখ্যক হেফাজত কর্মীরা তারাও সেখান থেকে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল মারতে থাকে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অ্যাকশনে টিকাটুলির দিক থেকেও এক পর্যায়ে হেফাজত কর্মীরা পিছু হবে। ভোর ছয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পুরো মতিঝিল ও আশপাশের এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে শাপলা চত্বর এলাকায় দেখা গেছে অসংখ্য জুতা, জামা ও ব্যাগ পড়ে থাকতে। এসবের বেশিরভাগই ছিল রক্তাক্ত। এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ভোরেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়। --মানব জমিন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়