Sunday, April 28

ভয়াবহ সেশনজটের মুখে রাবি

রাবি :  ঘন ঘন হরতাল, অবরোধ, শীতকালীন অবকাশ এবং সরকারী ছুটিতে বিপর্যস্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে প্রতিটি বিভাগের একাডেমিক রুটিন। ঘন ঘন হরতালের ফাঁদে চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষনার কাজ। সে কারণে বিভাগগুলো যেমন সময়মতো সিলেবাস শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছে তেমনি বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা গ্রহনেও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। হরতালের কারণে চলমান প্রায় ২০টি বিভাগের পরীক্ষা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এরফলে এরই মধ্যে প্রায় তিন মাসের সেশনজটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরেও আসছে মে মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব নির্ধারিত গ্রীষ্মকালীণ ছুটি শুরু হতে যাচ্ছে। ছুটিতে হল ভ্যাকেন্ট করার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যার ফলে আবারো দীর্ঘ ৪০ দিনের ক্লাশ-পরীক্ষাহীন ছুটি কাটাতে হবে শিক্ষার্থীদের। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সেশনজটকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। যা একদিকে বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ভাবিয়ে তুলছে অন্যদিকে অভিভাবকদেরকেও করছে উদ্বিগ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি হতে ২৫ এপ্রিল  পর্যন্ত শীতকালীন ছুটিসহ নানা দিবস বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মদিবস ছিল ৮০ দিন। এর মধ্যে সারাদেশে ও শুধুমাত্র রাজশাহী বিভাগে সর্বমোট হরতাল ছিল ৪৭ দিন। অর্থাৎ চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ক্লাশ হয়েছে মাত্র ৩৩ দিন।
বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, রাবি’র ৪৮টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ২৯টি বিভাগের কোন না কোন বর্ষের পরীক্ষা চলছে। হরতালের কারণে একটি কোর্সের পরীক্ষার জন্য দুই তিনটি তারিখ নির্ধারণ করেও সময়মত পরীক্ষা নিতে পারছেন না বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। হরতালে ক্লাস বা একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। এদিকে একই কারণে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, পরিবহন ও ইনস্টিটিউটগুলো বন্ধ থাকায় চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে গবেষণা কার্যক্রম। যার ফলে এরই মধ্যে প্রায় ৫ মাসের দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
 বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান সেশনজন নিরসনের জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটির দিকে তাকিয়ে থাকলেও প্রশাসন ভবছে ভিন্নভাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পহেলা মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত টানা ৪০ দিনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হতে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটি কমানোর দাবী জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তার ঠুনকো অজুহাতে বন্ধ এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রশাসনের একজন উর্ধ্বতন ব্যক্তি জানিয়েছে। যা পহেলা মে’র পরিবর্তে আগামী শনিবার থেকে শুরু হবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও ছুটিতে আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখা হবে বলেও তিনি জানান। ফলে দীর্ঘ ৪০দিনের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাশ-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যা বিদ্যমান সেশনজটকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে।
এদিকে হরতালে শিক্ষার পাশাপাশি চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে গবেষনা কার্যক্রম। হরতালে নিয়মিতভাবে বন্ধ থাকছে ইনস্টিটিউটগুলো। এরফলে গবেষকরা তত্ত্বাবধায়কদের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না । যা তাদের গবেষনা কর্মকে বাঁধাগ্রস্থ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আক্ষেপ করে বলেন, তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত একাডেমিক রুটিন মাফিক সব পরীক্ষা শেষ হলেও এবার চতুর্থ বর্ষে এসে আটকে গেছি। দুই মাস আগে আমাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো আমাদের সিলেবাসই শেষ হয়নি। আমরা সবাই এখন গ্রীষ্মকালীন অবকাশের দিকে চেয়ে আছি যাতে সেসময় আমরা আমাদের পিছিয়ে যাওয়া পড়াগুলো শেষ করতে পারি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য  প্রফেসর ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল বলেন, আমরা সিন্ডিকেটে বন্ধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহন করব। তবে বিভিন্ন কারণে ছুটি কমানোর সম্ভবনা কম রয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়