Sunday, April 28

রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে পশুর নদী শুকিয়ে যাবে

খুলনা : সুন্দরবনের অদূরে রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে এক বছরে পশুর নদী শুকিয়ে যাবে। প্রতিদিন এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ঘন্টায় ২৫ হাজার মিটার পানির প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুষিত পানিতে পশুর নদীর জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে। এই কেন্দ্র থেকে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার ছাই এবং ৩ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিন টন তরল বর্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য একটা বড় সমস্যা হবে দাঁড়াবে। গত শনিবার ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যুৎ কোম্পানীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালেল ৭ ডিসেম্বর জীববৈচিত্রের জন্য সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। পাশাপাশি ১৯৯৯ সালে ৩০ আগষ্ট পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চতুর্দিকের ১০ কিলোমিটার এলাকা পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করে। এই ঘোষণার আওতায় মাটি, পানি ও শব্দ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিকারক বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. এনামুল হক তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ৩ কিলোমিটার দূরে রামপালের শাপমারি ও কাটাখালী মৌজায় ৪ হাজার একর জমির ওপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন পাওয়ার প্রশ্ন আসে না।
২০১০ সালের ৮ অক্টোবর ভারতের দ্যা হিন্দ পত্রিকায় মধ্য প্রদেশে এনটিপিসির কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প বাতিল শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জনবসতি সম্পন্ন এলাকায় কৃষি জমির ওপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই ভারতের কেন্দ্রীয় গ্রীন প্যানেল এনটিপিসির ১৩২০ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়নি। তাহলে কৃষি জমি, নিকটবর্তী জনবসতি, পাশ্ববর্তী নগরী, নদীর পানির স্বল্পতা এবং পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করে ভারত সরকার মধ্যপ্রদেশে এনটিপিসির কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে দেয়। সেই এনটিপিসির বাংলাদেশের সাথে যৌথ বিনিয়োগে তার দ্বিগুন ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণ করা হচ্ছে।
পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় না। যে ভারতীয় এনটিপিসি বাংলাদেশে সুন্দরবন ধ্বংস করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে সেই ভারতেই ওয়ার্ল্ড লাইফ প্রটেকশন এ্যাক্ট ৭২ অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোন বাঘ, হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জীব বৈচিত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য কিংবা অন্য কোন ধরনের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা চলবে না। প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের ৯ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে হওয়ায় তরল বর্জ্যরে দুষণে সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ঘন্টায় ২৫ হাজার মিটার পানির প্রয়োজন হলে এক বছরের মধ্যে পশুর নদীর শুকিয়ে যাবে এমন অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রকৌশলী ম. এনামুল হক জানান, শাপমারী ও কাটাখালী এলাকায় মিষ্টি পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলন করলে মাটির স্তরের পরিবর্তন ঘটবে।
উল্লেখ্য, রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য গত শনিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ ভবনে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ অনুষ্ঠানে দু’দেশের সচিব উপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়