Sunday, April 28

জলবায়ু পরিবর্তনে সুন্দরবনে বড় আঘাত আসবে

খুলনা : জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেইঞ্জ বর্তমান বিশ্বের একটি আলোচিত বিষয়। এর প্রভাব থেকে নিস্তার পাওয়ার কোন পথ নেই বাংলাদেশেরও। শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা করা মাত্র। তবে উদ্বেগের বিষয় আমাদের সুন্দরবন নিয়ে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনে সুন্দরবনের উপর বড় আঘাত আসবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৫ হেক্টর বা প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মোট আয়তনের বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৮০০ বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ বাংলাদেশে ও ভারতের আনুপাতিক হার দাড়ায় প্রায় ৬ ঃ ৪। সুন্দরবনের বন এলাকা হচ্ছে ৪ লাখ ১ হাজার ৬০০ হেক্টর এবং জলাভূমি বা নদী-খাল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর। সুন্দরবনের যতটা এলাকা জুড়ে বনভূমি রয়েছে তার মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৪০ হেক্টর উন্নত বনভূমি এবং ২৬ হাজার ৮০৭ হেক্টর অপ্রধান বনভূমি।
‘লিভিং উইথ চেইঞ্জিং ক্লাইমেট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এখনই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের প্রতি একটি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) মতে, দুই দেশের মধ্যে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আরও বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবন ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রতিক্রিয়া এটি এখন রুগ্ন বালকের মতো হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারকে এখনই এই সমস্যায় গুরুত্ব দিয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে সুন্দরবন বড় ধরনের হুমকির মধ্যে পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবন এলাকায় পানির উচ্চতা গত এক দশকে সমুদ্রসীমা থেকে প্রায় ১০ মিলিমিটার বেড়েছে। একই সঙ্গে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা (এসএসটি) শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দশকওয়ারি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। গত ১০০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে ২৬ শতাংশ। এছাড়া সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে অনেক বেশী। এর নিচু ভূমিতে মাটির উর্বরতা কমছে। পাশাপাশি ভূমিক্ষয়ও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখানকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীবিকা মৎস্য চাষ। এর ফলেও মিঠাপানির মাছ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে নতুন আবাসস্থল খুঁজছে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, এ অবস্থা থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে একটি ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট) আওতায় এর গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিজ্ঞানভিত্তিক ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সেকেলে। তাছাড়া আমরা অপেক্ষায় থাকি বিপর্যয় ঘটার জন্য। বিপর্যয় ঘটে গেলে কর্তৃপক্ষ উদ্ধার তৎপরতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেজন্য কার্যকরী ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট থাকা উচিত, যার মাধ্যমে আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস জানতে পারব এবং তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে পারব।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম সীমান্তে বঙ্গোপসাগরের তীরে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা, এই পাঁচটি জেলা এবং ভারতের পঞ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবনের অবস্থান। ভৌগলিক ভাবে এর অবস্থান ২১ ডিগ্রী ৩০ মিনিট থেকে ২২ ডিগ্রী ৩০ মিনিট উত্তর দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত এবং ৮৯ ডিগ্রী থেকে ৯০ ডিগ্রী পূর্ব অক্ষাংশের মধ্যে। বাংলাদেশের ৫টি জেলার মধ্যে রয়েছে ১৭টি উপজেলা এবং যার মধ্যে প্রায় ২০০টি ইউনিয়ন। তবে উল্লেখ্য ৫টি জেলার মধ্যে উত্তরে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট এই তিনটিতে বনের বিস্তৃতি অনেক বেশী। যার উপজেলা গুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ এবং বাগেরহাট জেলার মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা। পূর্বে পিরোজপুর জেলার মাঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা। সুন্দরবনের দক্ষিনে কোন জনবসতি নাই। আছে শুধু অগাধ জলরাশির বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যের সুন্দরবনকে বিভক্ত করেছে হরিণভাঙ্গা ও রায়মঙ্গল নদী।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়