নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাটের বহুল আলোচিত একাধিক দল বদলকারী পাথর ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল মালিক (মালিক ট্রেডার্স) নানা কর্মকান্ডের জন্ম দিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে অবশেষে কানাইঘাট থানা পুলিশ লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে অবস্থিত স্থানীয় সাউদ গ্রামের নিরীহ সামছুদ্দিনের ভূমি থেকে মামলা-হামলার ভয় দেখীয়ে জোরপূর্বকভাবে কয়েক ল টাকার পাথর উত্তোলনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। নিরীহ সামছুদ্দিন কর্তৃক আদালতে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী হাজী আব্দুল মালিকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন যে কোন সময় আদালতে পাঠানো হবে বলে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল হাই জানিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী ও মালিক ট্রেডার্সের হাতে নির্যাতিতরা জানিয়েছেন বিগত ৪দলীয় জোট সরকারের আমলে বিএনপি’র কিছু প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় সে সময় থানা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিএনপি নামধারী পাথর ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল মালিক কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য লোভা কোয়ারী এলাকায় অবস্থিত স্থানীয় লোকজনের ভূমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে খরিদ করে কোয়ারী এলাকায় মুর্তিয়ান আতংক হিসেবে পাথরখেঁকো পরিচিতি লাভ করেন। জোট সরকারের সময় মতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে অসংখ্য নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে হাজী আব্দুল মালিক তার লোকজনদের বাদী বানিয়ে কোয়ারীতে একক আধিপত্য বিস্তার করার জন্য চাঁদাবাজি, বিষ্ফোরকসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেক পাথর ব্যবসায়ী, পাথর শ্রমিক ও দিনমজুরদের হয়রানী ও জেল খাটিয়েছেন। প্রভাবশালী ও মামলাবাজ প্রকৃতির লোক হওয়ায় প্রাণের ভয়ে জোট সরকারের সময় এই মানিক ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। আ’লীগ সরকার মতায় আসার পর প্রথম দিকে পাথর কোয়ারীতে নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য তার নির্যাতন নিপীড়ন অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে কোয়ারীর আশপাশ এলাকার লোকজন হাজী মালিক ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে দাড়ান। মামলা হামলার শিকার নির্যাতিতকারীরা তাকে পাথর কোয়ারী এলাকায় অবাঞ্চিত করে তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি শুরু করলে নিজেকে রা এবং পাথর কোয়ারীতে দখলধারীত্ব বজায় রাখতে হাজী আব্দুল মালিক আ’লীগে যোগদান করার জন্য পায়তারা করেন। কিন্তু স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীদের তীব্র বাধার মুখে তিনি আ’লীগে যোগদান করতে পারেন নি। গত দু’বছর ধরে কানাইঘাট পৌর বিএনপি’র সিনিয়র সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরীর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিএনপি’র তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকে সুবিধাবাদী মামলাবাজ ও দলের জন্য তিকর আখ্যায়িত করে প্রত্যাখান করেন। মামলা থেকে রা পেতে মালিক ট্রেডার্স স্থানীয় আ’লীগের কিছু নেতাদের সাথে ভিতরে ভিতরে সখ্যতা গড়ে তোলেন। কিন্তু শেষ রা হয়নি তার। পাথর কোয়ারী এলাকায় ভূমি দখল করে জোরপূর্বকভাবে কয়েক ল টাকার পাথর উত্তোলন এবং মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে নিরীহ লোকজনকে জেল খাটানোর অভিযোগ এনে উপজেলার সাউদ গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর পুত্র সামছুদ্দিন বাদী হয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তৃতীয় আদালতে গত ৩০/০১/১২ ইং তারিখে হাজী আব্দুল মালিকসহ ৬ জনকে আসামী করে সি.আর মামলা নং- ২৩ দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য কানাইঘাট থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল হোসেইনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সে সময় দীর্ঘদিন মামলাটি কোন প্রকার তদন্ত না করে ওসি তার টেবিলে আটকে রাখেন। বর্তমান কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল হাই থানায় যোগদানের পর হাজী আব্দুল মালিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান। তিনি আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নিলে হাজী আব্দুল মালিক মামলা থেকে রা পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তদবীর শুরু করেছেন। এছাড়া পাথর কোয়ারী এলাকায় অবস্থিত স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভূমি জালজালিয়াতির মাধ্যমে খরিদ করায় তারা মালিক ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে বর্তমানে আলোচিত এ পাথর ব্যবসায়ী চরম বেকায়দায় পড়ে কানাইঘাটের কতিপয় স্থানীয় আ’লীগ নেতাদের সাথে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে আ’লীগের যোগদানের চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে গত ৩০ নভেম্বর জেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের হাতে ফুল দিয়ে হাজী আব্দুল মালিক আ’লীগে যোগদান করেছেন এমন সংবাদ উপজেলা সদরে ছড়িয়ে পড়লে তৃণমূল পর্যায়ের আ’লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ােভের সৃষ্টি হয়। আ’লীগ নেতাকর্মী মালিক ট্রেডার্সকে দলে অন্তর্ভুক্তি করা হলে প্রতিহত করা হবে এমন হুমকি দিলে যোগদানের বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়নি। স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মালিক ট্রেডার্স সব সময় যে সরকার মতায় যায় তাদের ছাত্রছায়ায় প্রেজেন্ট গভর্মেন্ট পার্টির নেতা সাজিয়ে নিজের আধিপত্য ধরে রাখেন। বিগত জোট সরকারের সময় তার হাতে নির্যাতনের শিকার যারা হয়েছেন তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
হাজী আব্দুল মালিক (মালিক ট্রেডার্স) যা বললেন : এ ব্যাপারে হাজী আব্দুল মালিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের সময় তিনি লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে বৈধ ভাবে পাথর ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন বর্তমানেও আছেন। সে সময় বৈধ ভাবে অনেকের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। মতা প্রভাব দেখিয়ে কাউকে তিনি হামলা-মামলা দিয়ে হয়ারানী করেননি। মতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতাদের কথা না শুনায় বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। সামছুদ্দিনের দায়েরকৃত মামলাটি মিথ্যা বলে তিনি জানান। আ’লীগে যোগদানের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আ’লীগের স্থানীয় অনেক নেতার সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। আ’লীগ থেকে যোগদানের অফার আসছে, এখনো যোগদান করেননি, তবে যোগদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
.jpg)
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়