Wednesday, December 12

:: মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইন্তেকাল, দাফন স্বম্পন্ন ::

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী গত মঙ্গলবার রাতে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছি ৬৭ বছর। মরহুমের পরিবারের সদস্যরা জানান, গতরাত ১২টা ১৫ মিনিটে ইবনে সিনা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন মুফতি আমিনী। গতকাল এশার নামাজের পর তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে হঠাৎ করেই তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তখন তাকে প্রাথমিক চিকিৎ্সা দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যথা না কমায় রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হলে হাসপাতালে এক ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর সোয়া ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ফজলুল হক আমিনী স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৪ মেয়ে রেখে গেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে মুফতি আমিনী শারীরিক নানান জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত পুলিশি প্রহরায় গৃহবন্দি ছিলেন। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় লালবাগ শাহী মসজিদ সংলগ্ন জামেয়া কোরআনিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে। এর আগে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও মুফতি আমিনীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে লালবাগ মাদরাসায় দাফন করা হয় বলে জানান, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহলুল ওয়াসেল।



জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর জানাজায় উপস্থিত হন লক্ষাধিক লোক। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী ও সহপাঠী মাওলানা আব্দুল হাই। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিভিন্ন দলসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দ। ১৮ দলীয় জোটের প্রধান শরীক বিএনপি নেতাদের মধ্যে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, এমকে আনোয়ার, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু এমপি এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, চরমোনাইয়ের পীর মাওলানা রেজাউল করীম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা ইসহাক, মাওলানা শাহ আহমেদুল্লাহ আশরাফীসহ দেশের প্রায় সব ইসলামী রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দ জানাজায় অংশ নেন। জানাজায় জড়ো হওয়া লক্ষাধিক লোকের জমায়েত জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও সংলগ্ন রাজপথ ছাপিয়ে একদিকে মৎসভবন ও অপর দিকে শিক্ষাভবন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। জানাজায় সমবেত লোকের ভিড়ের কারণে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর ও দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে জানাজা শেষে ঈদগাহ মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার সময় কওমী মাদ্রাসার বেশ কিছু ছাত্র আমিনীর মৃত্যুর জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করে সরকার বিরোধী স্লোগান উচ্চারণ করতে থাকে। তারা দাবি করেন সরকারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণেই মুফতি আমিনীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে।



মুফতি আমিনী বিএনপি নেতৃত্বাধীন বর্তমান ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। রাজধানীর লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়া এবং বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। আমিনী ১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের আমিনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশে এবং পাকিস্তানেব করাচিতে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি কামরাঙ্গীরচরে মরহুম হাফেজজী হুজুর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই বছরে হাফেজজী হুজুরের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিনী। ১৯৭২ সালে কর্মজীবনে মাত্র ৯ মাসে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন তিনি। ১৯৭৫ সালে তিনি জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক ও সহকারী মুফতি হিসেবে যোগ দেন। পরে একই প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রধান মুফতির দায়িত্ব পান। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি ওই মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মাওলানা আমিনী ১৯৮১ সালে খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলন শুরু করেন। পরে ওই দলের সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হন। পরে তিনি উলামা কমিটি বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই সময় তিনি ইসলামী মোর্চারও মহাসচিব ছিলেন। এক পর্যায়ে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও মাদরাসা হেফাজত কমিটি বাংলাদেশের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুফতি ফজলুল হক আমিনী অষ্টম জাতীয় সংসদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। মুফতি আমিনীর মৃত্যুতে তার দল, জোট ও অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।(ফেয়ার নিউজ)




শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়