টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে ভয়াবহ পাহাড়ী ঢলে পুরো কানাইঘাট উপজেলা ডুবে গেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কানাইঘাট উপজেলা সদরের সাথে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাশাপাশি পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কানাইঘাট, দরবস্ত সড়ক ও গাজী বুরহান উদ্দিন সড়ক সিলেট, জকিগঞ্জ সড়কের কানাইঘাট অংশের অধিকাংশ রাস্তা ৪/৫ ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট বাজারে কোমর পানি বিরাজ করছে। বাজারের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার খাদ্য দ্রব্য ও পণ্য সামগ্রী ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বাজারের সবধরণের দোকান পাট বন্ধ থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। আকস্মিক ভয়াবহ পাহাড়ী ঢলের কারণে পানির তীব্র স্রোতে সুরমা নদীর ও গৌরিপুর বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। উপজেলার অনেক স্থানে সুরমা নদীর বিভিন্ন বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে প্রবল স্রোতে বন্যার পানি ফসলের পর ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। অপরদিকে বন্যার পানি ঢুকে প্রায় শতাধিক গ্রামের বাড়ি ঘর আক্রান্ত হয়েছে। শত শত পুকুর ও খামার ডুবে গিয়ে মৎস্য সেক্টরের কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কয়েক শত বাড়ি ঘর তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয়ের সন্ধানে মানুষ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, রামিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ, কানাইঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনসুরিয়া কামিল মাদ্রাসায় বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য আশ্রয় সেন্টার খোলা হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে। উপজেলাদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, নিবাহী কর্মকর্তা এস.এম সোহরাব হোসেন, কানাইঘাট পৌরসভার মেয়র লুৎফুর রহমান,উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান ইকবাল, বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতের মধ্যে চিড়া, গুড়, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়া সরকারী ভাবে বন্যা দুর্গতদের জন্য ৬ টন চাউল প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে কানাইঘাট পৌরসভা, ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, ২নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, ৩নং দীঘিরপাড়, ৪নং সাতবাঁক, ৫নং বড়চতুল এবং ৬নং সদর ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৯০ ভাগ বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে পানির তোড়ে প্রায় ৫০০ শতাধিক কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার সাথে ৯টি ইউনিয়নের সব ধরণের সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রায় লাখো মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। মাঠ ঘাট ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে যে, ২৮০০ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে প্রায় ২২০০ হেক্টর, ৩০০ হেক্টর বীজ তলার মধ্যে ২০০ হেক্টর, ৭০০ হেক্টর আমন হেক্টরের মধ্যে ৬৮০ হেক্টর এবং ৬৫০ হেক্টর সবজি বাগানের মধ্যে ৪৬০ হেক্টর পানির নীচে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম সোহরাব হোসেন জানান বন্যার ভয়াবহতা তুলে ধরে ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় এম.পি হাফিজ আহমদ মজুমদারকে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ভারী বর্ষণের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এদিকে কানাইঘাটকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও পানিবন্দী মানুষের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী দ্রুত প্রেরণের জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ জোর দাবী জানিয়েছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়