স্বামী স্বীকৃতি ও নবজাতক কন্যা সন্তানকে কোল থেকে কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় কানাইঘাট পৌরসভার বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী সুলতানার মৃত্যুর রহস্য ময়না তদন্তের রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে। ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে অনেকে আতংকের মধ্যে রয়েছেন। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কানাইঘাট পৌরসভার বিষ্ণুপুর গ্রামের আমিনা বেগমের কন্যা প্রতিবন্ধী সুলতানা (১৮) বিষপানেই আত্মহত্যা করেছে বলে ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যুর ৩ মাস ২৩ দিন পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট কানাইঘাট থানা পুলিশের কাছে পৌছলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিক খান এ প্রতিবেদককে জানান, পৌরসভার বিষ্ণুপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা আমিনা বেগমের প্রতিবন্ধী কন্যা সুলতানার সাথে পাশের বাড়ীর মাদ্রাসা পড়–য়া রুবেল আহমদ (১৭) এর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল সুলতানার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোললে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে সুলতানার মা রুরেলের পরিবারকে বিষয়টি অবগত করে তার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এতে রুবেলের স্বজনরা ঘটনাটি অস্বীকার করে তাড়িয়ে দেন। কোন উপায় না পেয়ে আমিনা বেগম গ্রাম্য মাতব্বরদের কাছে বিচার প্রার্থী হলে বার বার সালিশ বৈঠক বসলেও কোন সমাধান হয়নি। এক পর্যায়ে রুবেলকে অভিযুক্ত করে কানাইঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি স্থানীয় পৌর মেয়র লুৎফুর রহমানের কাছে গড়ালে তিনি পৌর ও গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন এবং আমিনা বেগম ও তার অন্তঃসত্ত্বা সুলতানাকে এই বলে আশ্বস্থ করেন যে, সন্তান প্রসবের পর ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তার বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু সন্তান প্রসবের পর পৌর কার্যালয়ে সেই পৌর ও গ্রাম্য সালিশদের সিদ্ধান্তে সুলতানাকে ৩০ হাজার টাকা হাতে তুলে দিয়ে তার কোলের সন্তানটিকে কেড়ে নিয়ে সিলেট শহরতলীর জনৈক মহিলার কাছে দত্তক দেন। এ ঘটনায় নিরাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়ে সুলতানা ও তার মা। বিয়ের বিষয়টি নিয়ে সালিশ বোর্ডের কাছে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ধরণের ভৎসনা ও অপমান নিয়ে বাড়ী ফিরে সুলতানা ২২ সেপ্টেম্বর নিজগৃহে রহস্যজনকভাবে মারা যায়। পরদিন সুলতানার মা আমিনা বেগম তার মেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে অভিযোগ এনে কানাইঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ খবর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারিত হলে পুলিশ সুলতানার প্রেমিক রুবেলকে গ্রেফতার করে এবং বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে স্থানীয় পুলিশ ২৯ সেপ্টেম্বর সুলতানার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। এরপর মামলাটি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার তদন্ত করলে প্রায় ১ মাস পর দত্তক দেওয়া নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ। নবজাতক এ সন্তানের পিতৃ পরিচয় নির্ধারণের জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হলেও অদ্যাবধি এ রিপোর্ট পুলিশের কাছে পৌছেনি। এমনকি সুলতানাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই. শফিক খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলার চার্জশীট আদালতে প্রেরণ করা হবে।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট সুলতানা বিষপানেই মারা গেছে
নিজাম উদ্দিন/কাওছার আহমদঃ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়