Wednesday, May 29

কানাইঘাটে হু হু করে বাড়ছে পানি, বন্যার আশঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বন্যার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১২০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে সুরমা ও লোভা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। সকাল ১১টা থেকে কানাইঘাট বাজারে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করলে উত্তর বাজার, দক্ষিণ বাজার ও পূর্ব বাজারে হাটু থেকে কোমরপানি বিরাজ করছে। অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

বিভিন্ন এলাকা থেকে খবরে আরো জানা যায়, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়কের গড়াইখাই ব্রীজ হতে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত সড়ক উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের লোকালয় সহ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।

এছাড়াও পৌরসভার কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা ডাইকের পাকা সড়কে পূর্বের ভাঙ্গনের স্থানে পানির স্রোতের ভয়াবহ আকারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানির স্রোতে পাকা সড়ক ভেঙে তলিয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় ভাঙ্গনের স্থান দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে বিস্তৃর্ণ এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সুরমা ডাইকের গুরুত্বপূর্ণ ডালাইচর, গৌরিপুর হতে লক্ষীপ্রসাদ উত্তর ও দক্ষিণ গ্রাম পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকা তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকার লোকজন এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তারা বলছেন যেভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে যে কোন সময় ডাইক ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিবে। পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতের কারনে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, দিঘীরপাড়, সাতবাঁক, দক্ষিণ বাণীগ্রাম, রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের সুরমা ডাইকে বেশ কিছু স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বিগত ২০২২ সালে এসব এলাকার সুরমা ডাইক ভেঙে পুরো উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারনে তখন রাস্তাঘাট, ফসল, খামার সহ মানুষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারনে সুরমা ও লোভা এবং আমরি নদীর পানি হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারনে সুরমা ডাইক ভেঙে যাতে করে কোন ধরনের বড় ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন ও থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার নদী ভাঙ্গন কবলিত সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন সুরমা ডাইকের ভাঙ্গন সহ ডাইকের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী হঠাৎ করে সুরমা নদীর পানি প্রবল স্রোতে বেড়ে যাওয়ার কারনে সুরমা ডাইকের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সার্বক্ষণিক তদারকি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উজান থেকে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারনে সুরমা ও লোভা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। সুরমা ডাইকের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভেঙে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে তা মোকাবেলায় উপজেলার সবকটি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়