Monday, May 6

কানাইঘাটে তিন ভাই হত্যার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ এলাকা


নিজাম উদ্দিন ::

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের হারাতৈল মাঝবড়াই গ্রামের জামে মসজিদের সীমানার জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে আপন ভাই-ভাতিজাদের হাতে ৩ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকে স্তব্দ পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ পুরো কানাইঘাট। 

দীর্ঘদিন পর কানাইঘাটে কোনো সংঘর্ষে একসঙ্গে ৩ ভাই হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা। কানাইঘাট থানা পুলিশ ত্রিপল হত্যাকান্ডের ৪ আসামীকে গ্রেফতার করলেও হত্যাকান্ডের মুলহুতা আনসার সদস্য আলমাছ উদ্দিনসহ অপর আসামীরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় নিহতদের পরিবার-আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

তবে ত্রিপল হত্যাকান্ডের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেছেন, এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শীঘ্রই মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, কেউ ছাড় পাবে না। 

স্থানীয়রা জানান, হারাতৈল মাঝবড়াই গ্রামের মৃত আছদ আলীর ৭ ছেলে। তারমধ্যে সমছুল হক পিতার বসত বাড়ি ছেড়ে হারাতৈল মাঝবড়াই জামে মসজিদের পাশে আলাদা বাড়ি করে সেখানে ছেলে-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। গ্রামের জামে মসজিদের সীমানার জায়গার মাপজোক নিয়ে সমছুল হকের সাথে গ্রামের অনেকের ও তার আপন ছোট ভাই সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীনের বিরোধ দেখা দেয়।

এ নিয়ে উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি দরখাস্ত দায়ের করে। এ নিয়ে যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে সেজন্য থানা পুলিশ দু’পক্ষের বিরুদ্ধে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আদালতে প্রসিকিউশন দেন। কিন্তু তারপরও মসজিদের সীমানার জায়গা সনাক্ত নিয়ে বিরোধ থামেনি। এর জের ধরে গত ২২ এপ্রিল সকাল ১১টায় মসজিদের ইমামের পাকা ঘর নির্মাণের জন্য সীমানা চিহ্নিত করার জন্য গ্রামবাসী অনেকের সাথে সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন একমত পোষন করেন। এতে মসজিদের পাশে বসবাসরত তার আপন বড় ভাই সমছুল হক ও ভাতিজা আলমাছ উদ্দিন, কামাল আহমদ, সুহেল আহমদ, রুহুল আহমদসহ অন্যান্যরা জয়নাল আবেদীনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

একপর্যায়ে তারা বাড়িতে এসে ভাই ও ভাতিজারা জয়নাল আবেদীনকে ডাকাডাকি শুরু করে হামলার জন্য। জয়নাল আবেদীন ঐ দিন বিকেল ২টায় ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের পূর্ব পাশের রাস্তায় যাওয়া মাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভাই সমছুল হক ও ভাতিজা আলমাছ উদ্দিন গংরা জয়নাল আবেদীনের উপর অকর্তিক হামলা চালায়। তারা ধারালো লম্বা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জয়নাল আবেদীনকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। তার চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে ভাইকে প্রাণে বাঁচাতে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের একাধিক জায়গায় কুপিয়ে জয়নাল আবেদীনের আপন বড় ভাই দুবাই প্রবাসী ছয়ফুল্লাহ ও ওমান প্রবাসী আব্দুল্লাহসহ আরো ২ জনকে গুরুতর আহত করে।

সংঘর্ষের দিন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে মারা যান সাবেক ইউপ সদস্য জয়নাল আবেদীন। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ এপ্রিল মারা যান বড় ভাই ছয়ফুল্লাহ এবং সিলেট ইবনেসিনা হাসপাতালের আইসিউতে থাকা ভাই আব্দুল্লাহ গত ২ মে মারা যান। 

মসজিদের সীমানার জায়গা চিহ্নিত নিয়ে আপন ভাই-ভাতিজাদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পর্যায়ক্রমে ৩ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা পুরো এলাকার মানুষ স্তব্দ হয়ে গেছেন। এমন পৈশাচিক নির্মম ত্রিপল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন এলাকার সর্বস্তরের লোকজন। 

একই পরিবারের আপন ৩ ভাইয়ের নিহতের ঘটনায় শোকে পাথর হয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা। বাকরুদ্ধ নিহতদের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের কান্না যেন থামছে না। এলাকায় গিয়ে দেখা যায় তিন ভাইয়ের হত্যাকারী বড় ভাই সমছুল হক ও তার দুই ছেলে সুহেল আহমদ, কামাল আহমদ হত্যাকান্ডের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকায় পরিবারে অন্যান্য সদস্যরা গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন এক এক করে তিন ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার সাথে গ্রেফতারকৃত বড় ভাই সমছুল হকের পরিবারের মহিলাদেরও মদদ ছিল। তবে ত্রিপল হত্যাকান্ডের মূল মদদদাতা আনসার সদস্য আলমাছ উদ্দিন এখন পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, মসজিদের সীমানার জায়গা নিয়ে সংঘর্ষে আপন ভাই-ভাতিজাদের হাতে পর পর মারা যাওয়া ৩ ভাইয়ের হত্যাকারী ৪ আসামীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করা হয়েছে, কেউ ছাড় পাবে না। মামলার অপরাপর আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের ষাড়াসি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত পূর্বক যারাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল এবং মদদ দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়