নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউরোপের দেশ গ্রীসে পাঠানোর নাম করে ইরানে আটক রেখে টর্চার সেলে নির্যাতন করে প্রাণে হত্যার ভয় দেখিয়ে এক ওমান প্রবাসীর পরিবারের কাছ থেকে আর্ন্তজাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য ও তার পরিবার কর্তৃক ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় কানাইঘাটের এক ভুক্তভোগী পরিবার প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাট প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির মৃত ফয়েজ উল্লাহর ছেলে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অনুমান ২ বছর পূর্বে তার আপন ভাতিজা আকিল আহমদ জীবন-জীবিকার তাগিদে ওমানে যায়। ওমান অবস্থানকালে জৈন্তাপুর উপজেলার ছাতারখাই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তজম্মুল আলীর পুত্র ইরান প্রবাসী সায়েম আহমদের সাথে বছর খানেক পূর্বে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের সূত্র ধরে সায়েম আহমদ ওমান প্রবাসী আমার ভাতিজা আকিলকে ইরান থেকে ইউরোপের দেশ গ্রীসে ভিসার মাধ্যমে পাঠানোর কথাবার্তা বলে। এ বিষয়টি আমার ভাতিজা আকিল আমাকে জানালে বিগত মার্চ মাসে সায়েম আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে আমি কয়েকবার কথাবার্তা বলি এবং সে ৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভিসার মাধ্যমে আমার ভাতিজাকে গ্রীসে পাঠাবে বলে জানায় এবং অনেক প্রবাসীকে ইরান থেকে সে গ্রীসে পাঠিয়েছে বলে বলে।
সংবাদ সম্মেলনে রিয়াজুল ইসলাম আরো বলেন, কথাবার্তা চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর গত ২৪ মার্চ ইরান প্রবাসী সায়েম আহমদের কথামতো তারই গ্রামের চতুল বাজারের ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনেকের উপস্থিতে তার মা পিয়ারা বেগমের কাছে ৮০ হাজার টাকা প্রদান করি। এরপর আরো ৪টি কিস্তিতে পিয়ারা বেগম ও তার ছেলে জবরুল আহমদের কাছে নগদ আরো ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করি। সায়েম আহমদ আমার ভাতিজাকে গ্রীসে পাঠানোর নাম করে ২৫ মার্চ ওমান থেকে ইরানে নিয়ে তার কাছে রাখে। এরপর আমার ভাতিজা আকিলকে আর্ন্তজাতিক মানবপাচারকারী চক্রের দালাল সায়েম আহমদ ও সহযোগীরা ইরানে তাদের টর্চার সেলে বন্দী রেখে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। মানবপাচারকারী সায়েম আহমদ আরো দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে তাকে না দিলে আমার ভাতিজাকে হত্যা করে ইরানের সমুদ্রে ফেলে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে। মানবপাচারকারীদের কবল থেকে ভাতিজাকে প্রাণে রক্ষা করার জন্য সায়েম আহমদের কথামতো তার মা ও ভাইয়ের কাছে দাবীকৃত দেড় লক্ষ টাকা প্রদানের পর আমার ভাতিজাকে ইরানের টর্চার সেল থেকে ছেড়ে দিলে সে সিলেটের ছাতক উপজেলার এক ইরান প্রবাসীর কাছে আশ্রয় নেয়। গ্রীসে পাঠানোর নামে প্রতারনা সহ নির্যাতন করে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আমার ভাতিজা আকিল আহমদ বিগত ১৮ অক্টোবর ইরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস তেহরানে মানবপাচারকারী চক্রের দলনেতা সায়েম আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে এবং গ্রীসে পাঠানোর নামে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধারের জন্য সায়েম আহমদের পরিবারের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েও টাকা ফেরত পাইনি। মানবপাচারকারী চক্রের দলনেতা সায়েম আহমদ ও তার সহযোগী এবং প্রতারনার মাধ্যমে গ্রীসে পাঠানোর নাম করে তার মা এবং ভাই কর্তৃক টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বাদী হয়ে সিলেটের আদালতে ১২ নভেম্বর আমি দরখাস্ত মামলা দায়ের করি, যা বর্তমানে কানাইঘাট থানায় তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। মামলা দায়ের এবং ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করার কারনে আমার ভাতিজা আকিল আহমদকে বর্তমানে প্রাণে হত্যা করার জন্য মানবপাচারকারী চক্রের দলনেতা সায়েম আহমদ ও তার সহযোগীরা ইরানের বিভিন্ন শহরে খোঁজে বেড়াচ্ছে। এমনকি সায়েম আহমদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলে আমার ভাতিজা আকিল আহমদকে ইরানে কেউ ধরিয়ে দিতে পারলে নগদ ২ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দিবে। এমন প্রাণনাশের হুমকির মুখে ইরানে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছে আমার ভাতিজা। তার কোন সঠিক সন্ধানও আমরা পাচ্ছি না। মানবপাচারকারী সায়েম আহমদ দীর্ঘদিন থেকে ইরানে অবস্থান করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সাথে মোবাইল ফোনের পরিচয়ের সূত্র ধরে গ্রীসে পাঠানোর নামে ইরানে নিয়ে টর্চারসেলে আটক রেখে এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমতাবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে ইরানে অবস্থানরত ভাতিজা আকিল আহমদের জীবন রক্ষা সহ আর্ন্তজাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য সায়েম আহমদ ও তার সহযোগী এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ সিলেটের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং থানা পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেছেন রিয়াজুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামিল আহমদ, রিয়াজুল ইসলামের গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন, শাহিন আহমদ, বদরুল ইসলাম।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়