Wednesday, June 21

নৌকার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটের মেয়র


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক :

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করে ১০ বছরের ডুবন্ত নৌকাকে উদ্ধার করলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ছিলেন সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সিলেটে চলে ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণের সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত থাকলেও কয়েকটি কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের লাইন থাকায় ৪টার পরে আরও কিছুক্ষণ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। 

সাড়ে ৪টা থেকে আসতে শুরু করে ফলাফল। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেসরকারিভাবে পাওয়া ফলাফলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সবকি'টি অর্থাৎ- ১৯০টি কেন্দ্রে পেয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ ভোট। আর তাঁর নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫১ হাজারের একটু বেশি ভোট। 


একনজরে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী :

নেতৃত্বের সহজাত দক্ষতায় তৃণমূল রাজনীতির বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আজ একজন জনপ্রিয় ও চৌকস রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর চিন্তা ও চেতনায় রাজনীতি ও জনসেবার ভাবনা বহমান প্রতিনিয়ত। তাই ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া কখনই তার কাছে মুখ্য হয়ে ওঠেনি। সকাল থেকে রাত অবধি রাজপথে কর্মীদের সাথে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে থাকাতেই যেন তার যত আনন্দ। দলের দুর্দিনে নিজেকে আরো সুসংগঠিত করে দলের জন্য নিরলস কাজ করেছেন। আপসকামিতায় নিজেকে গুটিয়ে নেননি বরং নির্ভীক থেকে দলের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।

১৯৭০ সালের ১ জুন সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম তিলাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নৌশা মিয়া চৌধুরী এবং মায়ের নাম মোছা. গহিনুন্নেছা চৌধুরী।

কৈশোরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে এবং তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন।

ছয় ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সবার ছোট। তিনি পশ্চিম তিলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পড়াশোনা ও রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন।

তিনি দেশে মৌসুমী সমাজকল্যাণ সংঘ ও খেলাঘরের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। বালাগঞ্জ ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে তার রাজনৈতিক সাংগঠনিক দায়িত্বের হাতেখড়ি। ‘সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ’ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্র-মিলনায়তন সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

প্রবাসে গেলেও দেশ ও মানুষের প্রতি তার টান এতটুকুও কমেনি। প্রবাসে রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে তিনি প্রথমে লন্ডন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে  কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। যুবলীগের রাজনীতি থেকে তিনি সরাসরি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং বিভিন্ন সময় অন্তর্বর্তীকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

প্রবাসে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি দেশের রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সিলেট সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। 

এর আগে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১১ জন। 

তারও আগে গত ২২ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘোষণা দেন, মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দল তাঁকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছে। 

২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ওই দিন হাজারো কর্মী-সমর্থক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরে নিয়ে আসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। 

পরে ২৬ জানুয়ারি তিনি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন। এর পর থেকেই জোরেশোরে আলোচনায় আসে তাঁর নাম।

দল প্রার্থী ঘোষণার আগে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া আরও ১০ জন দলের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন। তাঁরা ছিলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও আবদুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ ও ছালেহ আহমদ, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাসে ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি। 

১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে সিলেট পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার টানা ১২৪ বছর পরে ২০০২ সালের ২৮ জুলাই প্রতিষ্ঠা হয় সিলেট সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিসিকের ৪র্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের ২০০৮ সালে সিসিকের দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের আগেই গ্রেফতার হন কামরান। কারাগারে বন্দি কামরানকেই মেয়র পদে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। কারাবন্দি কামরান আনারস প্রতীকে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে আ ফ ম কামালকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।

২০০৩ সালে সিসিকের প্রথম নির্বাচনেও কামরান বাইসাইকেল প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন। বিএনপির এম এ হক মাছ প্রতীকে কামরানের কাছে পরাজিত হন।

প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছর পর ২০২১ সালে সিসিককে বর্ধিত করা হয়েছে। বর্তমানে সিসিকের মোট আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। নতুন করে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড বেড়েছে। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে সিসিকের পঞ্চম এই নির্বাচন থেকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিরত থাকেন।


সৌজন্যে : সিলেট ভিউ


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়