Sunday, July 24

হাকালুকি হাওরে দেখা মিলল ‘প্রলয়ংকারী’ টর্নেডোর!

 


সিলেট-মৌলভীবাজারের ছয় উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি।সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় হাকালুকি পানিতে টইটম্বুর। মিনি কক্সবাজার খ্যাত হাকালুকি অল্পবাতাসেও দেখা যায় ঢেউয়েরা গর্জন। এবার হাকালুকি হাওরে দেখা মিললো টর্নেডোর।

শনিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলা অংশের চাতলার পাড় বা চাতল বিল এলাকায় এ দৃশ্য দেখতে পান চারপাশের তীরবর্তী এলাকার লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, সৃষ্ট টর্নেডোতে হাকালুকির পানি জোয়ারের ন্যায় টেনে আকাশে তুলে নেয়। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে, বিজলী চমকে গর্জন করতে থাকে। জল আর আকাশে পানির পিলারের তৈরী হওয়া স্তম্ভ দেখতে হাকালুকির তীরবর্তী লোকজন কৌতুহল ভরে দেখতে থাকেন।  

ওই সময় হাওরে উপস্থিত অনেকে ছবি তোলেন এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।স্থানীয়রা এটিকে আলৌকিক কিছু তথা কুদরতের নিশানা হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকেন।

হাকালুকির তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নের সেলিম আহমদ বলেন, গত ৪ বছর আগে একবার হাকালুকির হাওরের গোলাপগঞ্জ উপজেলার পাশ্ববর্তী নইয়রপুর এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা মিলে। তবে শনিবার যে টর্নেডোর দেখা মিলে সেটি বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী ছিল। তখন আকাশ কালো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। হাওরে নৌকা নিয়ে থাকা অনেকে সেটি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তীরে চলে আসেন।

তবে এলাকাবাসীর অনেকে বলেন, হাকালুকিতে এমন দৃশ্য খুবই বিরল। আগে কখনো দেখা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেকটা ঘুর্ণি তুফানের মতো পানি শোষন করে আকাশে তুলতে থাকে বাতাসে সৃষ্ট জল পিলার। জলের উপরে প্রবল বেগে ঘুর্ণিয়মান গতি তৈরী হয়।

আবহাওয়াবিদরা জানান, জলভাগের পানি শোষণ করে উপরে তুলে সৃষ্ট টর্নেডো শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। যে কারণে সেটি ছেড়ে দেয়। নয়তো সেটি ধ্বংসাত্নক হতে পারতো। স্থলভাগের স্পর্শে আসলে সবকিছু গুড়িয়ে দিতো।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মোকামবাজার উপজেলার বাসিন্দা লিটন আহমদ বলেন, এদিন বিকেলে ঘন্টাখানেক অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায় হাকালুকির উপরিভাগ। বিকট শব্দে গর্জন হতে থাকে। অনেকে এটিকে কুদরতি খেলা বা আলৌকিক কিছু বললেও মূলত টর্নেডো ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে হাকালুকিতে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, হাকালুকি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর। এখানে জলরাশিতে যেটা দেখা গেছে, সেটি মূলত টর্নেডো ছিল। এ ধরণের টর্নেডো অন্তত ১০/১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। সেটি হয়তো আরো বেশি বিস্তৃত হতে পারতো। এছাড়া যে লোক ভিডিওচিত্র ধারণ করেছে, সেও এটার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেনি, এর ঘুর্ণিয়ন গতি বিস্তৃত হতে থাকলে নৌকাসহ তাকেও আকাশে তুলে উড়িয়ে নিতে পারতো। কয়েক বছর আগে নেত্রকোনা হাওরেও ১০/১২ কিলোমিটার জুড়ে এরকম টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শক্তি সঞ্চার ঘটাতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তেমনি হাকালুকি হাওরেও ঘুর্ণিয়মান তীব্রগতিতে পানি আকাশে উঠেছিল। সেটি কোনো দিকে মুভ করলে প্রলয়ংকারী হতে পারতো।    

তিনি বলেন, এদিন সাইক্লোন সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকায় একটি সেমিনার ছিল। ওই সেমিনারে জাপানের কাইটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রফেসর ড. শি থাইচি হায়াসি ও বাংলাদেশী আরেকজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তারা ঘটনাস্থল হাকালুকিতে সরেজমিন দেখতে ঢাকা সিলেটে এসেছেন। রোববার তারা হাকালুকি হাওরে যাবেন।

প্রফেসর ড. শি থাইচি হায়াস ‘রবরাত দিয়ে তিনি বলেন, এটি টর্ণেডো ছিল। মুলত টর্নেডোর কারণে পানির ঘুর্ণিপাক সৃষ্টি হয় এবং স্তম্ভ বা পিলারের মতো আকাশে তুলে নেয়। যদিও হাওরাঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা সচরাচর দেখা মিলে না।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়