ভারতের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের বিতর্কিত স্থানে নির্মাণ করা হবে রাম মন্দির। আর মুসলিমদের মসজিদ নির্মাণের জন্য আলাদা জমি দেয়া হবে।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান
বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারকদের এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়াও আরো ছিলেন বিচারপতি
এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির।
এই রায়ের ফলে প্রায় তিন দশক ধরে চলমান এই বিতর্কের অবসান ঘটলো। মামলার
রায়ে বলা হয়েছে, অযোদ্ধার বিতর্কিত রাম মন্দির-বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭
একর স্থানে রাম মন্দির নির্মিত হবে, বিকল্প হিসেবে বাবরি মসজিদ নির্মাণের
জন্য মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি অন্যত্র দেয়া হবে।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের
শাসনামলে নির্মিত এই মসজিদটি কোনো খালি স্থানে নির্মাণ করা হয়নি, এখানে আগে
একটি মন্দির ছিল।
রায় পাঠ করার সময় প্রধান বিচারপতি গগৈ বলেন, বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে
জমির মালিকানা ঠিক করা সম্ভব নয়। কাঠামো থেকে কোনো কিছুর মালিকানা দাবি করা
যায় না। কারো বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার হরণ না হয়।
তিনি বলেন, ভারতের প্রত্মতাত্ত্বিক সংস্থা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব
ইন্ডিয়ার খননের ফলে যেসব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট, সেগুলো
ইসলামিক নয়।
প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ধরে কয়েকদশকের পুরোনো এই মামলায় রায় পড়ে শোনান
বিচারপতি গগৈ। এ সময় তিনি বলেন, যে রায় ঘোষণা করা হলো, তা বিচারক বেঞ্চের
সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
অযোধ্যার বিতর্কিত এই ভূমি মালিকানাকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালে
হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দুরা
অযোধ্য়ায় মন্দির নির্মাণ করতে গেলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।
হিন্দুরা মনে করেন, তাদের দেবতা রামের জন্মভূমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা
হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের দাবি, বাবরি মসজিদের স্থানে রামের জন্মের কোনো
আলামত নেই।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী নয়াদিল্লির
পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরে অতিরিক্ত
নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব রাজ্যের স্কুল-কলেজও শনিবার বন্ধ
রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রধান ও পি সিং ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, এখন পর্যন্ত
৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের প্রধান বার্তা হচ্ছে যেকোনো উপায়ে
শান্তি রক্ষা করা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর
অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯২ সালে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস
করা হয়; তখন বিজেপির বর্তমানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা পৃথকভাবে সেই
ধ্বংসযজ্ঞে ভূমিকা রেখেছিলেন।
২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড,
নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগে করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দু’ভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ। কিন্তু এই
রায়ের বিরুদ্ধে সব পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন।
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়