Sunday, September 1

তানিয়া সুলতানার অবদান কানাইঘাটবাসী মনে রাখবে!

নিজাম উদ্দিন :
দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে পদোন্নতি প্রাপ্ত কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা যে অবদান রেখেছেন কানাইঘাটবাসী তা মনে রাখবে। 

কানাইঘাট উপজেলার দ্বিতীয় নারী নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা দায়িত্বকালীন সময়ে অত্যন্ত সাহসিকতা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে কাজ করে গেছেন। উপজেলার সর্বোচ্চ একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও আচার আচরণে এবং সেবার মাধ্যমে তানিয়া সুলতানা ছিলেন অন্যান্য ইউএনওদের চেয়ে ব্যতিক্রম। তাঁর অফিস ছিল সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। কোন ধরনের অন্যায় কর্মকান্ড, তোষামোদ ও প্রভাব বিস্তার কিংবা পেশী শক্তিকে কখনো প্রশ্রয়-আশ্রয় দেননি । 

দূর্নীতি মুক্ত প্রশাসন এবং সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার মাধ্যমে বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন একজন নির্বিক কঠোর যোদ্ধা। এক্ষেত্রে কাহারো সাথে তিনি কোন আপোষ করেননি।

নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লোভনীয় হলেও বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা ছিলেন একজন দূর্নীতি মুক্ত মানুষ। কানাইঘাটের লোভা পাথর কোয়ারি, হাওর কেন্দ্রীক খাস জায়গা, অবৈধ ক্রাসার মেশিনের ছড়াছড়ি ও নানা ধরনের অবৈধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এখানে থাকলেও নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার সাথে এক্ষেত্রে কোন মহল আপোষ করতে পারেনি। ক্রাসার মেশিন উচ্ছেদ ও খাস জায়গা দখল মুক্ত এবং জন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি সব সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেন। 

দূর্নীতি মুক্ত একজন ইউএনও হিসাবে তিনি সবার কাছে ছিলেন একটি প্রিয় মুখ। 

কানাইঘাটে যোগদান করার পর থেকে একজন নারী হয়েও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। লোভা পাথর কোয়ারিতে পরিবেশ বিরোধী তৎপরতা বন্ধ, সরকারি খাস জায়গা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে উদ্ধার, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সহিত খাস জয়গা প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে দলিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্টন, সরকারি সব ধরনের প্রদত্ত সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারিভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি সততার এক উজ্জল নজির সৃষ্টি করেছেন। 

এছাড়া বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক ভাল কাজ করে গেছেন। দেশের যে কোন উপজেলা পরিষদের চাইতে কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন পাড়াকে সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে সবার মন জয় লাভ করেছেন তিনি। নানা ধরনের চমৎকার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় সকল মহল তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সরকারি ফান্ডের টাকা সঞ্চিত করে প্রশাসন পাড়ায় কানাইঘাটের শিশুদের আনন্দ বিনোদনের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ব্যায়ে ‘চাঁদের হাট’ নামক একটি শিশুপার্ক নির্মাণ করেছেন। তিনি সেখানে বিনোদনের জন্য নানা ধরনের সামগ্রী কিনেছেন। এর আগে এ ধরনের কোন উদ্যোগ কেউ নেননি। শিশুপার্ক স্থাপন করায় প্রতিদিন সেখানে শিশুদের আনন্দ বিনোদনের জন্য তাদের অভিভাবকরা শিশুপার্কে নিয়ে আসেন। এছাড়া উপজেলা পুকুরগুলোর পাকা ঘাটের সৌন্দর্য বর্ধন, নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ডিজিটাল আধুনিক সাইনবোর্ড স্থাপন, উপজেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাস্তায় নানা ধরনের ল্যাম্পপোষ্ট স্থাপন এবং বিভিন্ন বনজ-ফলজ-ফলদ বৃক্ষের সৌন্দর্য মন্ডিত বাগান করেছেন তিনি। 

জ্ঞানের ভান্ডার কে সমৃদ্ধ করার জন্য জরাজীর্ণ উপজেলা গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম সচল করার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে গণগ্রন্থাগার সংস্কার সহ গ্রন্থাগারে অসংখ্য বই প্রদান এবং সেখানে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ক্লাবের ও শাখা খোলেছেন। গণগ্রন্থাগার সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করেছেন তিনি। বিশেষ করে প্রতিটি সরকারি দপ্তর কে দূর্নীতি মুক্ত করার জন্য তিনি নিবিড় ভাবে ফাইল তদারকী করতেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারের সব ধরনের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড স্বচ্ছতার সহিত বাস্তবায়ন করতে তিনি মাঠ পর্যায়ে তদারকী করতেন। যার কারনে বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা কানাইঘাটে থাকাকালীন সময়ে সরকারি উন্নয়নে দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা অনেক কম হয়েছে। নারী ও শিশুদের তিনি অত্যন্ত ভালো বাসতেন। তার অফিসে কোন অসহায় নারী কোন ধরনের অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।

স্থানীয় কর্মরত সাংবাদিকরা উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড সহ যে কোন অনিয়ম দূর্নীতির সংবাদ নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা কে তার কর্ম তৎপরতার মূল্যায়ন করে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সমিতি, কানাইঘাট প্রেসক্লাব, কানাইঘাট শিক্ষক সমিতি সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক মহল, সুধিজন, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা তানিয়া সুলতানা কে একজন সৎ, আদর্শবান, দূর্নীতি মুক্ত কর্মকর্তা হিসাবে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। 

ইউএনও থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে পদোন্নতি প্রাপ্ত বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা আজ রবিবার কার্য দিবস শেষ করে মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে সেখানে যোগদান করবেন। 

এক প্রতিক্রিয়ায় বিদায়ী পদোন্নতি প্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা বলেন, আমি কানাইঘাটবাসীর জন্য কি করেছি আপনারা সেটা মূল্যায়ন করবেন। একজন মানুষ হিসাবে সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। এখানকার সবাই আমাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেছেন। কানাইঘাটের মানুষকে আমি সব সময় স্মরণ রাখবো। কারণ এই জনপদের মানুষ অত্যন্ত সহজ সরল ও ধর্মপ্রাণ। তারা সব সময় প্রয়োজনের তাগিদে প্রশাসন কে নানা ভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। 

কানাইঘাট নিউজ ডটকম/০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়