Wednesday, July 17

মিয়ানমার সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা ছিল এমন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার সেনা কর্মকর্তারা হলেন, মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ বা সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং, ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং আং এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ব্যবস্থা নিলো যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। 
জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখে।
২০১৯ সালের মে মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানায় দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশন। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার কোনও ভূমিকাই পালন করেনি। 
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান জানান, ‘পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।’ জাতিসংঘ মিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে সামরিক বাহিনী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় চাপিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর।
এক বিবৃতিতে মিশনের সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, ‘অতীত থেকে এখনও চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করে তাদের অর্থপ্রবাহ বিচ্ছিন্ন করতে চাই আমরা। যেন তাদের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং সহিংসতা কমে যায়।
মিয়ানমারের দাবি, তারা কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি। তাদের নিরাপত্তা বাহিনী বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেনি বরং সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের হামলার জবাব দিয়েছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা মিয়ানমার বাহিনীর এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। 
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার নামে মানবাধিকার পরিষদের নতুন গ্রুপের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া স্থাপনে এই গ্রুপটি তৈরি করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়