Sunday, July 14

কত সম্পদ রেখে গেলেন এরশাদ?

নিউজ ডেস্ক:
চলে গেলেন বাংলাদেশের উন্নয়নের কারিগর কিংবদন্তি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রোববার (১৪ জুলাই) সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন তিনি। দীর্ঘ ৯ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার নেয়া কার্যক্রম ও সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে।
এরশাদ কত টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছেই; কোন সম্পত্তি তিনি কাকে দিয়ে গেছেন, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
তবে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি তার সম্পদের একটি অংশ ট্রাস্টে দান করেছেন এবং বাকিটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে গেছেন বলে তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৪ এপ্রিল নিজের স্বাক্ষর জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কার কথা জানিয়ে বনানী থানায় জিডি করেছিলেন এরশাদ।
জিডিতে তিনি বলেন, তার বর্তমান ও অবর্তমানে স্বাক্ষর নকল করে পার্টির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, দলের বিভিন্ন পদ-পদবী বাগিয়ে নেওয়া, ব্যাংক হিসাব জালিয়াতি এবং পারিবারিক সম্পদ, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য হাতিয়ে নেওয়া ও আত্মীয়-স্বজনদের জানমাল হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে তিনি মনে করেন অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন এমন অপরাধ করতে না পারে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দরকার।
থানায় জিডি করার পাঁচদিন পর গত ২৯ এপ্রিল রাতে বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের কক্ষের লকার ভেঙে ৪৩ লাখ টাকা লুট হয়ে যায়।
নিজের গড়া দল জাতীয় পার্টিতে উত্তরাধিকার হিসেবে ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করে যান এরশাদ। দলে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান পদে রওশনও রয়েছেন।
এরশাদের সম্পদের পরিমাণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এরশাদ নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সংসদ সদস্য, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ও ব্যবসা থেকে তার এই অর্থ আসে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এছাড়া ব্যবসা থেকে তার আয় দেখান দুই লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা।
এরশাদ বছরে ১ কেটি ৫ লাখ টাকা বেতন-ভাতাদি বাবদ পেতেন। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা; সংসদ সদস্যের সম্মানী ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।
এরশাদ তার গুলশান ও বারিধারায় দুটি ফ্ল্যাটের দাম দেখিয়েছিলেন এক কোটি ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি।
এর বাইরে ৭৭ লাখ টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে তার। স্ত্রীর গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের দাম ছয় কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর বাইরে বসুন্ধরায় একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার পূর্বাচল ও রংপুরে ৫০ লাখ টাকার বেশি দামের দুটি জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে।
ছয় মাস আগে নির্বাচনী হলফনামার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এরশাদের হাতে নগদ অর্থ ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা।
এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এরশাদের জমা ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিন একাউন্টে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৩১ টাকা; ৮ লাখ ৫৮ হাজার ২১ টাকা এবং ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩২ টাকা।
দুই একাউন্টে সোনালী ব্যাংকে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৫ টাকা ও ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৩ টাকা; ব্র্যাক ব্যাংকে ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ২৭ হাজার ৫২৪ টাকা ছিল এরশাদের।
এর বাইরে শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা; ডিপিএস ৯ লাখ টাকা।
এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে।
নিজের কোনো স্বর্ণালঙ্কার না থাকলেও ৩০ হাজার টাকা দামের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৩০ হাজার টাকার আসবাব ছিল তার।
ব্যবসায় মূলধন আছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা; জমির বিক্রি করে রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এরশাদের কোনো কৃষি ও অকৃষি জমি নেই। তবে ৭৭ লাখ টাকা দামের দোকান; বারিধারায় ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট এবং গুলশানে ৬২ লাখ টাকা দামের আরেকটি ফ্ল্যাটের কথা হলফনামায় লেখেন তিনি।
স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ টামা দামের রংপুরে এবং ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দামের জমি রয়েছে ঢাকার পূর্বাচলে।
পূর্বসুত্রে পাওয়া বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট রয়েছে এরশাদের। গুলশানের দুটি ফ্ল্যাটের একটির মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা; আরেকটির দাম ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়