Monday, June 24

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় কুলাউড়ার ট্রেন দুর্ঘটনা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একটি ব্রিজ ভেঙে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭টি বগির মধ্যে ৩টি লাইনচ্যুত হয়, ২টি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে ও ২টি ব্রিজের নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন ও কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া অন্তত ২৫০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
রবিবার (২৩ জুন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
এখন পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- ফাহমিদা ইয়ামসিন ইভা, সানজিদা নাসিম ও মনোয়ারা বেগম।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক জানিয়েছেন, ফাহামিদা ইয়াসমিন ইভা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আবদুল্লাপুর এলাকার আবদুল বারীর মেয়ে ও ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও শেখেরটিলার মৃত চেরাগ মিয়ার মেয়ে মনোয়ারা পারভীন লায়লন (৫৫) এবং সানজিদা আক্তার বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার ভানদর খোলা গ্রামের মো. আকরাম মোল্লার মেয়ে।
জানা যায়, সোমবার সকালে তাহমিদা ও মনোয়ারার মরদেহ পরিবার নিয়ে গেছে। তবে অপর নিহত পুরুষের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মৌলভীবাজারে ঢাকাখী একটি ট্রেন কালভার্ট ভেঙে দুর্ঘটনায় পড়ার পর উদ্ধার কাজ এখনো চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছিল।
পেশায় গাড়ির চালক জনি চৌধুরী বাদশা প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন। যার বাড়ি দুর্ঘটনাস্থলের বেশ কাছে এবং দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজে ছুটে আসাদের মধ্যে একজন তিনি।
তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ‘ট্রেনটা খুব দ্রুতগতিতে চলছিল। হঠাৎ করে বিকট শব্দ। তারপর দৌড়ে ছুটে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেখি ব্রিজের ওপরে ট্রেনটা কাত হয়ে পড়ে আছে… মধ্যে দিয়ে ভেঙে একটা বগি নিচে পড়ে আছে …দুইটা বগি লাইনের ওপরে খাড়া আছে। মানুষজন চিৎকার করছে, কারো মাথা, হাত-পা কেটে গেছে…।’
‘উপবন এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটি রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় একটি সেতু পার হওয়ার সময় সেতুটি ভেঙে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এরপরই তারা উদ্ধার সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
‘লোকজন চিৎকার করছিল। আমরা ভেতরে আটকে পড়া লোকদের বের করে আনি। ট্রেনের নিচে কয়েকজন আটকা পড়ে। ফায়ার সার্ভিস এসে এরপর উদ্ধারকাজ শুরু করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেলা ১২টার দিকে মিস্টার চৌধুরী জানান, ‘এখনো সেখানে তিনটি বগি কাত হয়ে পড়ে আছে। একটা বগি লাইনের ওপর খাড়া হয়ে আছে।’
ঘটনার পরপর ফেসবুক লাইভ করছিল অনেকে। সেটা স্থানীয় মানুষদের মধ্যে একধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং উদ্ধারকাজে অসুবিধার সৃষ্টি করে বলেও তিনি জানান।
এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিক হয়নি রেল যোগাযোগ।
রেল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনায় নিহত তিন নারীসহ চারজনের মৃতদেহ কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্থানীয় কর্মকর্তারা ৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। কুলাউড়া সাব স্টেশন থেকে বলা হয়, হাসপাতালে নেয়ার পর একজন মারা যান।
দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে কুলাউড়া হাসপাতালে অর্ধশতাধিক এবং সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জনের বেশি চিকিৎসাধীন আছেন।
সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপু জানান, ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন, হঠাৎ তারা একটি দুলুনি টের পান এবং এর পরেই বিকট শব্দ শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানান, ট্রেনটি অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিলো।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তিতাস নদীর উপরে একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে সড়কপথে যাত্রা ব্যাহত হওয়ার কারণে কয়েকদিন ধরে ট্রেনের ওপরে চাপ বেড়ে যায় বলে তিনি জানান। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়