নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে প্রতিদিন যে মাতৃমৃত্যু ঘটে তার ৩১ শতাংশ রক্তক্ষরণে। আর
এক্লাম্পসিয়ায় (খিঁচুনি) মারা যায় ২৪ শতাংশ এবং বাধাগ্রস্ত বা অবিরাম প্রসব
বেদনায় মারা যায় তিন শতাংশ। এমনই তথ্য জানিয়েছেন অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড
গাইনিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক
ডা. সামিনা চৌধুরী।
তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে দুটি। এর মধ্যে একটি
রক্তক্ষরণ অপরটি এক্লাম্পসিয়া। এছাড়াও পরোক্ষ কারণে (উচ্চরক্তচাপ,
ডায়াবেটিস, হার্ডডিজিজ ইত্যাদি) ২০ শতাংশ, প্রত্যক্ষ ৭ শতাংশ, গর্ভপাতজনিত ৭
শতাংশ এবং অজানা কারণে ৮ শতাংশ মাতৃমৃত্যু ঘটে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মর্যাদা ও অধিকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি সেবায় অঙ্গীকার’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, একটি সুন্দর ও অর্থবহ
জীবনের জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ গুরুত্ব অনুধাবন করেই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২৮ মে দিনটিকে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’
হিসেবে ঘোষণা দেন। বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন
লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ বছর
মেয়াদি চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
জরুরি প্রসূতি সেবা কার্যক্রমসহ মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও
পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের ৬ মাসব্যাপী সিএসবি প্রশিক্ষণ, মাতৃস্বাস্থ্য
ভাউচার স্কিম ও ৩ বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারি কোর্স চালু করা হয়েছে। সামাজিক
নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় স্তন্যদানকারী দরিদ্র মায়েদের বিশেষ ভাতা প্রদান
করা হচ্ছে। বিগত এক দশকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য
খাতে বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বিগত দশকে বাংলাদেশে
মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
প্রধান স্বাস্থ্যসূচক শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস
পেয়েছে। আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন
লক্ষ্যমাত্রা’ (এসডিজি) অর্জনের মাধ্যমে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লক্ষ জীবিত
জন্মে ৭০-এর নিচে এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ১২ তে
নামিয়ে আনা।
এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে জাতীয় ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও রূপকল্প
২০২১-এর আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চতুর্থ
স্বাস্থ্যসেক্টর কর্মসূচি (২০১৭-২২) বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এতে
মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা
হয়েছে। সর্বোচ্চ গুণগত মান বজায় রেখে সেবার পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন
হাসপাতাল নির্মাণ, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ ও
অন্যান্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, মাতৃস্বাস্থ্য টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি)
পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। মাতৃমৃত্যু রোধে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ
নিতে হবে। এর মধ্যে ই-ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে সব গর্ভবতী মাকে অনলাইন
রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। প্রসব প্রস্তুতি পরিকল্পনা গর্ভবতী ও তার
পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই
ডেলিভারি পাশের জরুরি প্রসব কেন্দ্রে করা প্রসব দুর্গম অঞ্চলের জন্য
সিএসবিএদের প্রাথমিক বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল অর্থাৎ ২৫
বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। যদিও বৈশ্বিকভাবে মাতৃমৃত্যুর
হার কমেছে ৪৪ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হারের
অনুপাত প্রতি লাখে ৭০ এর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় সন্তান জন্মদানের সময় এবং
সন্তান জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে মায়ের মৃত্যু হলে সেটা ‘মাতৃমৃত্যু’
হিসেবে গণ্য হবে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়