Tuesday, May 7

সেকালে সেহরিতে যেভাবে ডেকে তোলা হতো

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:

পুরান ঢাকার কোনো মহল্লার মসজিদেই মাইকের প্রচলন গড়ে উঠেনি তখনো। সেহরি খাওয়ার জন্য ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তোলা হতো সুরের মূর্ছনায়। ‘ক্বাসীদা’ বা ‘কাসিদা’ নামে পরিচিত ছিল ওই গানগুলো। ‘আমার সাত দশক’-এর লেখক আনোয়ার হোসেনের স্মৃতিচারণায় এসব তথ্যের প্রমাণ মেলে।

শায়লা পারভীনের ‘ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ক্বাসীদা’ থেকে জানা যায়, এই গানগুলোর ভাষা ছিল উর্দু। রমজানের প্রথম পাঁচ রোজা পর্যন্ত গাওয়া হতো ‘চানরাতি’ (চাঁদকে অভ্যর্থনা জানিয়ে) কাসিদা। ১৫ রোজা পর্যন্ত চলত ‘খুস আমদিদ’ (রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে) কাসিদা। ১৬ রোজার পর গাওয়া হতো ‘আলবিদা’ (রমজান বিদায়ের প্রাক্কালে) কাসিদা।
সেসময়ে পুরান ঢাকার প্রতিটি পাড়ায় ১০-১৫ জনের কৈশোর দল বের হতো কাসিদা গেয়ে রোজাদারদের ঘুম ভাঙানোর জন্য। এসব গান লিখতেন তারা নিজেরাই। শবেবরাতের দু-এক দিন পর থেকেই চলতো খো ও সুরের কাজ। বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানের অনুকরণে ‘কাসিদা’ গানগুলোর সুর করা হতো। তবে গাওয়ার সময় কোনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হতো না। তখন ঢাকার লোকজন শায়েরদের (কাসিদা রচয়িতা) খুবই সম্মানের চোখে দেখতো।
অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তানরাও রোজাদারদের ঘুম ভাঙাতে সাহরির সময় কাসিদা গাইতে বের হতো। তাদের গাওয়া কাসিদা ছিল এ রকম—
‘আল্লাহ্ কা বান্দেকো হাম আয়ে জাগানে কো হার দিল মে রামজান কি পায়গাম পওচায়েঙ্গেহো যায়েগি ইয়ে দুনিয়া রামজান মুবারাককি আল্লাহ্ কা রাহমাত কি হাম তুফান উঠায়েঙ্গে...’
‘আমার সাত দশক’ বইয়ের তথ্যমতে, আরেক ধরনের লোক ছিল, যারা মহল্লার মধ্যে ঘুরে ঘুরে ‘উঠো রোজদারো, সেহরিকা ওয়াক্ত হো গিয়া’, ‘উঠো রোজদারো, চার বাজ গায়া’ কিংবা ‘উঠো রোজদারো, সেহরিকা ওয়াক্ত খাতাম হো নে চালা’ বলে চেঁচিয়ে ঘুম থেকে তুলত লোকদের। তাদের হাতে থাকত টিনের একটা চোঙা। এ রকম মানুষ পুরান ঢাকায় এখনো আছে, তবে সংখ্যায় অনেক কম।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়