কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ত্রি-ভুবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ
‘মা’। মা হচ্ছেন অকৃত্রিম স্নেহ মমতা, ভালোবাসা ও নির্ভরতার ছায়াবৃক্ষ। মা
সন্তানের শক্তির উৎস, প্রেরণার উৎস, ভবিষ্যৎ পথ প্রদর্শক। মা সন্তানের
জন্মদাতা। সন্তানের বেড়ে ওঠায়, লালন পালনে মা-ই মমতার হাত বাড়িয়ে রাখেন
অহর্নিশ। সন্তানের বিজয়ে-সাফল্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হন মা। সন্তানের দুঃখে
কষ্টে সান্ত¦নার সুশীতল হাত মাথায় বুলিয়ে দেন মা-ই। মা সন্তানের স্নেহের
বন্ধন। পৃথিবীর সকল সম্পর্কের উর্ধে।
আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। বিশ্ব মা দিবস।
সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য,
মাকে যথাযথ সম্মান দেয়া, ভালোবাসা। দিনটি উপলক্ষে দেশে নানা অনুষ্ঠানের
আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরই মধ্যে মাকে
ভালোবাসা জানিয়েছেন বহু সন্তান।
মা দিবসের সূচনা হয় কয়েক হাজার বছর
আগে গ্রীসে। প্রাচীন গ্রীসবাসীরা এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করতো। এই দিনটি
এক পর্যায়ে উৎসবে রূপ নেয়। পরবর্তীতে সেই উৎসব ছড়িয়ে পড়ে রোম ও এশিয়ার
বিভিন্ন দেশে। প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৮ই মার্চ রোমানরা মায়েদের ভক্তি ও
শ্রদ্ধা জানাতো। সন্তানরা মায়েদের হাতে তুলে দিতো সুন্দর সুন্দর উপহার। মন
দিয়ে শুনতো মায়েদের মূল্যবান উপদেশ। তখন সে দেশে থাকতো সরকারি ছুটি।
ব্রিটেনে মা দিবস পালন শুরু হয় ১৬শ’ শতাব্দীতে। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে
দোসরা মার্চ খ্রিস্টান মায়েরা সন্তানদের নিয়ে হাজির হতো গীর্জায়। সেখানে
মায়েরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাদের সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতেন। এ জন্য
সন্তানেরা মায়েদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো। ইউরোপে বড়দিন উৎসবের পর
সবচেয়ে জমকালোভাবে পালিত হয় মা দিবস।
ইউরোপের সীমানা ছাড়িয়ে বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকাতেও মা দিবস
পালিত হয় ব্যাপকভাবে। তবে দিবসটি পালিত হয় একেক দেশে একেক তারিখে। অবশ্য মে
মাসের দ্বিতীয় রবিবারই বেশির ভাগ দেশে পালিত হয় মা দিবস।
ব্রিটিশদের অনুকরণে আমেরিকানরা মা দিবস পালন শুরু করলেও সেখানে একটি
রাজনৈতিক ঘটনা সম্পৃক্ত হওয়ায় সে দেশে মা দিবস পালনের গুরুত্ব বেড়ে যায়।
১৮৭০ সালে সে দেশে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে মায়েদের সোচ্চার হওয়ার
জন্য সে সময়ের সমাজ হিতৈষী জুলিয়া ওয়ার্ড হাউয়ি আহ্বান জানান। সেই দিনটিকে
স্মরণীয় করে রাখার জন্য সে দেশে পালিত হয় মা দিবস। সেখানে মা দিবস পালিত হয়
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় বিশ্ব মা
দিবস। তবে মা দিবস যে দেশে যে দিনই পালন করা হোক না কেন, এই দিবসের গুরুত্ব
ও তাৎপর্য সব দেশে একই। সেটা হলো মাকে সম্মান জানানো, তার প্রতি ভালোবাসা
প্রকাশ করা।
আমাদের সমাজ বাস্তবতায় মা দিবসের মাহাত্ম্য অনেক বেশি। সময়ের তাগিদে
মায়ের প্রতি সন্তানের গভীর ও চিরন্তন মমত্ববোধ, শ্রদ্ধা আজকাল অনেক
ক্ষেত্রেই শিথিল হয়ে আসছে। একদিকে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সন্তানকে থাকতে
হচ্ছে মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে, অপরদিকে সন্তানের অবহেলার শিকার হয়েও অনেক
মা বাবার ঠিকানা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম বা একাকী নিঃসঙ্গ নিবাস।
সমাজসভ্যতার যতোই অগ্রগতি হোক না কেন, তার সাথে পাল্লা দিয়ে মা, বাবা,
ভাই, বোনকে নিয়ে যৌথ পরিবারে বসবাসের যে ঐতিহ্য আমাদের সমাজে রয়েছে, সেটা
ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে অনেক পরিবারের কাছে বৃদ্ধ মা বাবা হয়ে
উঠছেন বাড়তি ‘বোঝা’। আমরা মায়েদের এই অসম্মান দেখতে চাই না। পৃথিবীতে মায়ের
সম্মান সবার ওপরে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বাণী- ‘মায়ের পদতলে সন্তানের
বেহেশত’।
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়