নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট উপজেলার হাওর এলাকার বাউয়ারকান্দি মৌজার সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় সাড়ে ৩শত একর গোচরণ পতিত ভূমি জবর দখল হয়ে যাচ্ছে।
সরকারি এসব ভূমি দখল করে সেখানে মৎস্য খামার গড়ে তোলার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল ইতিমধ্যে একাধিক স্কেভেটর দিয়ে মাটির কাজ করে সরকারি ভূমি দখল করার জন্য মাটির বাঁধ দিয়েছে বলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়।
সরকারি ভূমির দখল নিয়ে এলাকায় যে কোন সময় দু’টি পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
বাউয়ারকান্দি মৌজার বেদখলকৃত সাড়ে ৩শত একর ভূমি দ্রুত উদ্ধার এবং জবর দখলের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, বাউয়ারকান্দি মৌজার ভূমি প্রভাবশালীদের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য গত ১০ মার্চ কানাইঘাট বানীগ্রাম ইউনিয়নের ৮ মৌজার জনসাধারণের পক্ষে লামা দলইকান্দি গ্রামের মৃত তজম্মুল আলীর পুত্র যুব নেতা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার বরাবরে বাউয়ারকান্দি মৌজার গোচরণ সরকারি ভূমির উপর জোরপূর্বক ভাবে ৫নং বড়চতুল ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও পবর্তপুর গ্রামের আজিজুল হক, ফরিদ উদ্দিন, ছিদ্দেক আলী, হাজী আব্দুল ওহাব, আব্দুল মজিদ, আব্দুল মুছব্বির, নুরুল হক, হাজী একরাম আলী, আব্দুল মান্নান, সমছুল হক গং বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বাউয়ারকান্দি মৌজার সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় ৩শত একর ভূমির চারিদিকে একাধিক স্কেভেটর দিয়ে মাটির বাঁধ দিয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিরা জবর দখলের চেষ্টা করে আসছেন। গাছবাড়ী এলাকার কয়েকটি গ্রামের একমাত্র গোচরণ ভূমিতে মাটির বাঁধ দেওয়ার কারণে উজানে অবস্থিত কয়েক হাজার ফসলী জমি চাষ করার অনুপযোগী ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এলাকার জনসাধারণ সহ গবাদী পশুর চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।
অভিযোগ দায়ের করা হলেও অদ্যাবধি পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা প্রভাবশালীদের কবল থেকে ভূমি উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
জানা যায়, হাওর এলাকার বাউয়ারকান্দি মৌজায় হাওরে সব চেয়ে বড় বিল দিয়ালাইন যাহা শিয়ালাইন বিল নামে এলাকায় পরিচিত। উক্ত বিলটি মহাল সামিল জলকরের অন্তর্ভূক্ত। চতুল এলাকার দূর্গাপুর সহ আরো কয়েকটি গ্রামের লোকজন বিলটি তাদের মালিকানা দাবী করে দখল করে আছেন। কয়েক মাস পূর্বে শিয়ালাইন বিলটি বিধি লঙ্গন করে ৭২ লক্ষ টাকায় ৩ বছরের জন্য একটি মহল লীজ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতি বছর বিধি লঙ্গন করে বিলটি শুকিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করে থাকেন দখলদাররা।
বর্তমানে শিয়ালাইন বিলের শ্রেনী পরিবর্তন বা পরিবর্ধন না করার জন্য উচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্ট্যাস্কো জারী রয়েছে। কিন্তু দখলদার কিছুই মানছেন না। লীজ গ্রহীতা সহ প্রভাবশালী মহলরা শিয়ালাইন বিলের সাথে বাউয়াকান্দি মৌজার প্রায় সাড়ে ৩ শত একর সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত গোচরণ ও পতিত ভূমি দখল করে তিন দিকে উচু মাটির বাঁধ দিয়েছে যাহা সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে।
বাউয়ারকান্দি মৌজার আশপাশ এলাকায় অবস্থিত নিজ দলইকান্দি, লামা দলইকান্দি, আকুনী, খাসের মাটি, লামার তালুক গ্রামের সর্বস্তরের লোকজন জানিয়েছেন বাউয়ারকান্দি হাওর এলাকার চারিদিকে তাদের পাট্টা খরিদা হাজার হাজার একর ভূমি রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাউয়ারকান্দি মৌজার গোচরণ পতিত ভূমিতে তারা গরু-মহিষ চরিয়ে আসছেন এবং শিয়ালাইন বিল থেকে পানি সেচের মাধ্যমে জমি চাষ করে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২/৩ মাস পূর্ব থেকে চতুল দূর্গাপুর ও পর্বতপুর গ্রামের উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিরা বাউয়ারকান্দি মৌজার গোচরণ ভূমির সাড়ে ৩শত একর জায়গা দখল করে সেখানে মাটির বাঁধ দিয়েছে।
এতে করে এলাকার হাজার হাজার জন সাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
তবে দূর্গাপুর, পর্বতপুর সহ কয়েকটি গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, শিয়ালাইন বিলটির সম্পত্তি তাদের দখলীয় ও নিজের। হাওরের বাউয়ারকান্দি মৌজার সরকারি ভূমি তারা দখল করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজংয়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাউয়ারকান্দি মৌজার ভূমি সরকারি খাস খতিয়ানের। আমরা শুনেছি সেখানে কিছু লোকজন সরকারি ভূমি দখলের চেষ্টা করছেন তাদের কে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও শীঘ্রই সরেজমিন পরিদর্শন করে কেউই সরকারি ভূমি দখল করে রাখলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিয়ালাইন বিলে স্ট্যাটাস্কো রয়েছে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা সহ জমির শ্রেনী পরিবর্তন না করার নির্দেশ আদালতের রয়েছে সেটি কেউ লঙ্গণ করলে আমরা দেখব।
কানাইঘাট নিউজ ডটকম/১২ এপ্রিল ২০১৯ ইং
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়