Sunday, October 28

গোলাপগঞ্জে অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন হওয়া সেই ব্যক্তি কানাইঘাটের মুহিবুর রহমান


নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাঘা ইউনিয়নের রস্তমপুর ব্রিজের নীচ থেকে গত ৮ অক্টোবর ভোরে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত নামা লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া লাশটি কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের ফয়জুর রহমানের পুত্র মাওলানা মুহিবুর রহমান (৫০) বলে জানা গেছে ।

গত ৮ অক্টোবর গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি সিলেট নগরীর মানিক পীর টিলায় দাফন করা হয়।


মুহিবুর রহমানের পরিচয় সনাক্তের পর তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের এসআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শংকর দাস অাজ রবিবার বিকেলের দিকে নিহতের ভায়রা কানাইঘাট দলকিরাই গ্রামের সিরাজুল হকের পুত্র সিলেটের শাহপরান এলাকায় বসবাসরত রিয়াজ উদ্দিনকে আটক করে। 


অপর দিকে কানাইঘাট থানা পুলিশ রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিহত  মুহিবুর রহমানের শ্বাশুড়ী কানাইঘাট বানীগ্রাম ইউনিয়নের নিজ বাউরভাগ গ্রামের রইছ উদ্দিনের স্ত্রী পিয়ারা বেগমকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পিয়ারা বেগম ও তার মেয়ের জামাই রিয়াজ উদ্দিনকে মুখোমুখি করে কানাইঘাট থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর নিহত মুহিবুর রহমান তার নিজ বাড়ী গোরকপুর গ্রাম থেকে সকাল ৯টার দিকে সিলেট শহরে তার ভায়রা রিয়াজ উদ্দিনের বাসায় যাওয়ার জন্য ফুফা শফিকুল হককে সাথে নিয়ে বের হন। দুপুরে মুহিবুর রহমান তার ফুফা শফিকুল হককে নিয়ে ভায়রার বাসায় শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগমের উপস্থিতিতে খাওয়া-দাওয়া করেন। এরপর ঐ দিন ফুফা শফিকুল হক তার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসলে ও মুহিবুর রহমান ভায়রার বাসায় থেকে যান। এর পর থেকে তার কোন সন্ধান না পেয়ে পরিবারের লোকজন মুহিবুর রহমানের শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম, ভায়রা রিয়াজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, মুহিবুর রহমান ৪ অক্টোবর বিকেলের দিকে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন।

মুহিবুর রহমানের কোন সন্ধান না পেয়ে গত ২৪ অক্টোবর বুধবার কানাইঘাট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী দায়ের করেন তার ভাই সাহাব উদ্দিন। থানা পুলিশের এসআই সুরঞ্জিত নিখোঁজ সাধারণ ডায়রীর সূত্র ধরে জানতে পারেন, গত ৮ অক্টোবর গোলাপগঞ্জের বাঘায় এক ব্যক্তির অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে মুহিবুর রহমানের পরিবারের লোকজন কে থানায় ডেকে এনে সেই অজ্ঞাত নামা লাশটি এসআই সুরঞ্জিত লাশের ছবি তাদের দেখালে গোলাপগঞ্জ পুলিশের হাতে অজ্ঞাতনামা উদ্ধার হওয়ার লাশটি মুহিবুর রহমানের বলে তার পরিবারের লোকজন সনাক্ত করেন। এই সূত্র ধরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের এসআই নিহত মুহিবুর রহমানের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শংকর দাস এবং কানাইঘাট থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে মুহিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহে তার শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম ও ভায়রা রিয়াজ উদ্দিনকে রবিবার রাত্রে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুনু মিয়া জানিয়েছেন। দূবৃর্ত্তদের হাতে নিহত মুহিবুর রহমান গত ১৫ অক্টোবর সৌদি আরব প্রবাসে যাবার কথা ছিল। মুহিবুর রহমানের স্ত্রী কানাইঘাট মহিলা কলেজের অফিস সহকারি সাবানা ইয়াসমিন শাম্মী অনুমান ৯ মাস পূর্বে মারা যান। মুহিবুর রহমানের ৩ সন্তানের জনক। মুহিবুর রহমানের ভাই সাহাব উদ্দিন সহ আত্মীয় স্বজনরা জানিয়েছেন, মুহিবুর রহমানের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তার শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম তার আর এক মেয়ের সাথে মুহিবুর রহমানকে বিয়ে দিতে চেয়ে ছিলেন। এতে মুহিবুর রহমান রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার শ্বাশুড়ী পিয়ারা বেগম ও ভায়রা রিয়াজ উদ্দিন পরিকল্পিত ভাবে মুহিবুর রহমান কে হত্যা করেছে।  



কানাইঘাট নিউজ ডটকম/২৮ অক্টোবর ২০১৮

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়