Thursday, September 20

কারবালার ঘটনাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
নিঃসন্দেহে কারবালা প্রান্তরে নবী-দৌহিত্র হুসাইন (রা.)-এর স্ব-পরিবারে শাহাদাত ইসলামের ইতিহাসে এক বেদনাবহ অধ্যায়। এটি ছিল উম্মতের ওপর নেমে আসা সবচে বড় বিপদগুলোর একটি। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এ সম্বন্ধে বলেন, ‘হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনাটি মহা বিপদগুলোর একটি। কারণ, হুসাইন (রা.) এবং তার আগে উসমান (রা.)-এর শহীদ হওয়ার ঘটনার মধ্যদিয়েই পরবর্তীতে উম্মতের ওপর নেমে এসেছে অনেক মহাদুর্যোগ। আর তাদের শহীদ করেছে আল্লাহর নিকৃষ্ট বান্দারা।’ (মাজমাউল ফাতাওয়া ৩/৪১১)
তবে যে মুসলিম আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য হুসাইন (রা.)-এর নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে বিলাপ করা, শরীর জখম করা, গাল, মাথা ও বুক থাবড়ানো বা এ রকম অন্য কিছু করা জায়েয নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ليس منا من لطم الخدود و شق الجيوب»
“যে ব্যক্তি মুসীবতে পড়ে নিজ গালে চপেটাঘাত করল এবং শরীরের কাপড় ছিঁড়ল, সে আমাদের দলের নয়।” (বুখারী)
তিনি আরও বলেন: “মুসীবতে পড়ে বিলাপকারী, মাথা মুণ্ডনকারী এবং কাপড় ও শরীর কর্তনকারীর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«إن النائحة إذا لم تتب فإنها تلبس يوم القيامة درعاً من جرب و سربالاً من قطران»
“মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন খাঁজলীযুক্ত কোর্তা পরানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পরানো হবে।” (মুসলিম)
তিনি আরও বলেন,
«أربع في أمتي من أمر الجاهلية لا يتركونهن: الفخر في الأحساب و الطعن في الأنساب و الاستسقاء بالنجوم و النياحة»
“আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। তারা তা ছাড়তে পারবে না। (১) বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা, (২) মানুষের বংশের নাম তুলে দুর্নাম করা, (৩) তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং (৪) মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা।
তিনি আরও বলেন,
“মানুষের মাঝে দুটি জিনিষ রয়েছে, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মানুষের বংশের বদনাম করা এবং মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা।” (মুসলিম)
তিনি আরও বলেন:
«النياحة من أمر الجاهلية و إن النائحة إذا ماتت و لم تتب قطع الله لها ثيابا من قطران و درعاً من لهب النار»
“মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আলকাতরার প্রলেপ লাগানো জামা পরাবেন এবং অগ্নি শিখা দ্বারা নির্মিত কোর্তা পরাবেন।” (ইবনে মাজাহ)
একজন বিবেকবান মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে সে এ ধরণের মুসীবতের সময় আল্লাহর নির্দেশিত কথা বলবে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন:
ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ
“যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য, এবং আমরা তারই কাছে প্রত্যাবর্তন করবো।” (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)
হুসাইন (রা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলী ইবন হুসাইন, মুহাম্মাদ এবং জাফর জীবিত ছিলেন। তাদের কেউ হুসাইন (রা.)-এর মৃত্যুতে মাতম করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তারা ছিলেন আমাদের হেদায়েতের ইমাম ও আদর্শ।
বিলাপ করা, গাল ও বুকে চপেটাঘাত করা বা এ জাতীয় অন্য কোনো কাজ কখনই ইবাদাত হতে পারে না। আশুরার দিনে ক্রন্দনের ফযীলতে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হয় তার কোনটিই বিশুদ্ধ নয়। বিলাপ করা জাহেলী জামানার আচরণ বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তাঁর ও তাঁর সম্মানিত রাসুলের নির্দেশিত পথে জীবনের সকল কাজ ও আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়