Tuesday, August 21

কানাইঘাট বাজারে পকেটমারতে এসে সুন্দরী লিলি এখন শ্রীঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বামী জকিগঞ্জ বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি সদস্য,স্ত্রী সুন্দরী রোকেয়া বেগম লিলি (৩৫) তিন সন্তানের জননী। কথা বার্তায় অত্যন্ত পারদর্শী যে কাউকে কথা বার্তার মারপ্যাঁচে ফেলে ধোকা দেওয়ার মত চতুর ও চালাক রোকেয়া বেগম একজন পেশাদার পকেটমার । দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় সুন্দরী রোকেয়া বেগম লিলি ও তার স্বামী ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম সোবহান (৪২) মিলে একটি চক্র তৈরি করে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে শপিংমলে অভিনব কায়দায় মহিলা ও পুরুষদের পকেট মেরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পেশায় লিপ্ত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি অত্যন্ত চালাক চতুর আন্তঃজেলা প্রতারক ও চোর চক্রের দুর্ধর্ষ মহিলা সদস্য সুন্দরী রোকেয়া বেগমের। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার(২০আগস্ট) পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে রোকেয়া বেগম ও তার স্বামী আব্দুস সালাম ও চোর চক্রের সদস্যদের নিয়ে কানাইঘাট বাজারের পকেট মারতে আসেন। রোকেয়া আক্তারের সাথে ছিল নবম শ্রেনি পড়ুয়া এক মেয়ে সহ আরো দুই মেয়ে। কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কান্দলা গ্রামের হারুন রশিদের স্ত্রী মিনারা বেগম (২৫) তার শ্বাশুড়ী মায়ারুন নেছা (৫৫) কে সাথে নিয়ে সোমবার দুুপুর ১ টার দিকে সোনালী ব্যাংক কানাইঘাট শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা উত্তোলন করেন। সহজ সরল মিনারা বেগম ভাতা উত্তোলনের ১৯ হাজার টাকা একটি কাপড়ের ব্যাগে রক্ষিত রেখে সেই ব্যাগ হাতে রেখে ব্যাংক সংলগ্ন একটি মুদির দোকানে কেনাকাটা করতে যান। এসময় পেশাদার মহিলা চোর রোকেয়া বেগম মিনারা বেগমের সাথে সেই দোকানে ঢুকে কেনাকাটার নাম করে মিনারা বেগমের হাতে থাকা কাপড়ের ব্যাগ ব্লেড দিয়ে কেটে ১৯ হাজার টাকা নিয়ে কৌশলে দোকান থেকে ছিটকে পড়ে। মিনারা বেগম এসময় চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে আমার টাকা ঐ মহিলা নিয়ে যাচ্ছে, তার এমন শোর চিৎকারে রোকেয়া বেগম কে বাজারের লোকজন পালানো অবস্থায় আটক করেন। এই সুযোগে রোকেয়া বেগম চুরির ১৯ হাজার টাকা তার চক্রের কাছে হাতবদল করে ফেলে। এক পর্যায়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ বাজারে গিয়ে আটক অবস্থায় রোকেয়া বেগম কে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় আসার পর রোকেয়া বেগম বলে আমি কোন চোর নয় মিথ্যা ঐ মহিলা আমার উপর অপবাদ দিচ্ছে, বলে নানা ধরনের কাথাবার্তা শুরু করে। ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া তাকে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চতুর রোকেয়া বেগম নানা ধরনের অভিনয় করতে থাকে। একপর্যায়ে সে পুলিশ কে জানায় তার বাড়ী বিয়ানীবাজারে। তার নাম শিমু, স্বামী আব্দুস সালাম সৌদি আরব থাকেন। কানাইঘাটে একটি ভাষায় তার তিন মেয়েকে নিয়ে এসেছিলো, আবার বলে কানাইঘাট বাজারে কেনাকাটার জন্য এসেছে এধরনের কথাবার্তা বলতে থাকে। পুলিশ ও থানায় উপস্থিত লোকজন রোকেয়া বেগমের অনেক কথা বিশ্বাস করেন। কিন্তু মিনারা বেগম অনড় তার ১৯ হাজার টাকা ঐ মহিলা চুরি করেছে। এক পর্যায়ে ওসি (তদন্ত) রোকেয়া বেগমের কথামতো বিয়ানীবাজার উপজেলার যে গ্রামের ঠিকানা সে দিয়েছিলো খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন সে যে শিমু ও তার স্বামীর কথা বলেছে তা সঠিক আছে কিন্তু টাকার চুরির ঘটনায় আটক রোকেয়া বেগম  লিলি বিয়ানীবাজারের সেই শিমু নয়, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সে পুলিশ কে ধোকা দিতে চেয়েছিলো। একপর্যায়ে থানা পুলিশ আটক রোকেয়া বেগম লিলির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় চুরির মামলা রয়েছে। তার স্বামী ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম সোবহানের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও চুরির মামলা রয়েছে। কয়েক মাস পূর্বে রোকেয়া আক্তার লিলি গোলাপগঞ্জ বাজারে একটি শপিংমলে ক্রেতাদের পকেট চুরির সময় হাতে নাতে আটক হয়। পরে তার বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা হয়। চতুর রোকেয়া আক্তার কে থানায় নিয়া আসার পর প্রথমে তার নাম রোকেয়া আক্তার শিমু বলে এবং তার আসল পরিচয় গোপন রাখে। রোকেয়া আক্তার থানায় আসার পর বিকেলের দিকে তার সহযোগি পকেটমার জকিগঞ্জ বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রামের মৃত মড়া মিয়ার পুত্র নিজাম উদ্দিন (৪৫) কে থানার সামনে থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মিনারা বেগমের ১৯ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রোকেয়া বেগম লিলি ও নিজাম উদ্দিন রোকেয়া বেগম স্বামী বারহাল ইউনিয়নের ০৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম সোবহান সহ ৪জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন মিনারা বেগম। রোকেয়া ও নিজাম উদ্দিন কে আজ মঙ্গলবার(২১আগস্ট) আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। থানার ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া কানাইঘাট নিউজকে জানান, গ্রেফতারকৃত রোকেয়া বেগম লিলি আন্তঃজেলা প্রতারক ও পেশাদার চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। তার স্বামী বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য আব্দুস সালাম মিলে স্বামী-স্ত্রী একটি প্রতারক ও চোর চক্র গঠন করে নানা ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড, পকেটমার ও চুরির মতো জঘন্য ঘটনার সাথে লিপ্ত রয়েছে। অত্যন্ত চতুর রোকেয়া বেগম লিলি তার নাম পরিবর্তন করে একেক সময় একেক পরিচয় দেয়। তাদের বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্র্রেফতার করা হবে। 

 কানাইঘাট নিউজ ডটকম/২১আগস্ট ২০১৮ ইং

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়