Sunday, September 10

কখনোই বালিতে মাথা গুঁজে থাকে না উটপাখি!

কখনোই বালিতে মাথা গুঁজে থাকে না উটপাখি!
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: উটপাখি বালিতে বিপদে পড়লে মাথা গুঁজে থাকে বলে আমাদের মাঝে একটি ধরণা প্রচলিত আছে। এটাকে নির্বুদ্ধিতার কিংবা গা বাঁচিয়ে চলার উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। বলা হয়, উঠপাখি এতোই নির্বোধ আর অকর্মন্য যে এরা নিজেদের মাথা বালিতে গুঁজে দিয়ে মনে করে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে এবং শিকারি তাকে দেখছে না।

কিন্তু এটি গুজব বৈ কিছুই নয়। প্রানী বিশেষজ্ঞদের মতে উটপাখি যদি বালিতে মাথা গুঁজে থাকত তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে শ্বাঁসরুদ্ধ হয়ে মারা যেত। তাহলে এর পেছনে ব্যাখ্যা কি? কেনই বা এই গুজব ছড়িয়েছে।

বিপদে পড়ুক আর যাই ঘটুক উটপাখি কখনোই বালিতে মাথা গোঁজে না। যেকোন বিপদ বা ভয়ে উটপাখির প্রথম প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ঝেড়ে দৌড় দেওয়া। এর দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমত, দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া। উটপাখি ঘন্টায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, শিকারীর নজর অন্যদিকে ফেরানো, যদি শিকারি ডিমের কাছাকাছি থাকে। তাছাড়া উটপাখি যে বিপদে শুধু পালিয়ে বেড়ায় তা-ও নয় অনেক সময় উটপাখি সম্ভাব্য বিপদের মুখোমুখি হয় এবং আক্রমনাত্মক অবস্থান নেয়। এমনকি এরা পা-এর লাথি দিয়ে সিংহকেও কাবু করে ফেলতে সক্ষম। তবে অধিকাংশ সময় এর খুব শক্ত আঘাত করে না।

বালিতে মাথা না গুঁজলেও উটপাখি তাদের ডিম বালিতে গুঁজে রাখে। এই কারণে পুরুষ পাখিটি বালিতে বড়সড় গর্ত করে। এরা ডিমগুলোকে বালির গর্তে রাখার পর দিনের বিভিন্ন সময় এগুলোকে উল্টে পাল্টে দেয়। এই সময় হয়তে তাদের দেখে মনে হতে পারে তারা বালিতে মাথা গুঁজে আছে।

বালিতে মাথা গোঁজার মিথ আরেকটি কারণে তৈরি হতে পারে। উটপাখি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ পাখি। এদের দেহ সাত থেকে নয় ফুট লম্বা হয় এবং ওজন হয় ৩৫০ পাউন্ড। তবে শরীরের আকারের তুলনায় এদের মাথাটি ছোট। উটপাখির মাথার অংশটি ধুষর ও হালকা রংএর। দূর থেকে দেখে বালি থেকে আলাদা করা যায় না। ফলে মনে হতে পারে এরা বালিতে মাথা গুঁজে আছে।

এই গুজবের উৎপত্তি উটপাখির আরো কিছু আচরণগত কারণেও হতে পারে। যেমন: যখন উটপাখি মাথা নিচু করে মাটি থেকে খাবার খায় খুব সহজেই বিশেষ করে দূর তাদের দেখে মনে হতে পারে তারা বালিতে মাথা গুঁজে আছে। একইভাবে তারা যখন নিজেদের বিপন্ন মনে করে তখন শরীর আড়াল করার জন্য অনেক সময় সটান শুয়ে পড়ে। এই অবস্থায় দূর থেকে কেবল তাদের বিশাল বপুটিই চোখে ধরা পড়ে, যা দেখে কারো কারো মনে হতে পারে এদের মাথাটি সমাহিত অবস্থায় আছে।

যদিও অন্যান্য পাখিদের মতো উটপাখির কণ্ঠ সুরেলা নয় বরং কর্কশ, তথাপি এই পাখি বেশ চমৎকার। আফ্রিকার তৃণভূমি ও মরুভূমিপ্রবণ অঞ্চলে এদের আদি নিবাস। জিরাফ, জেব্রা ইত্যাদি তৃণভোজী প্রাণীর পাশাপাশি এরা চরে বেড়ায়। বাংলায় যেমন উটপাখি নাম দেয়া হয়েছে, ইংরেজিতেও এদের একসময় camel bird নামে ডাকা হতো উটের সাথে এদের সাদৃশ্যের কারণে। শুধু শারীরিক দিক থেকেই নয়, বরং উটের মতোই এরা কষ্ট সহিষ্ণু প্রানী। এরাও উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এবং মরুভূমিতে এরা কয়েকদিন পানি না খেয়ে টিকে থাকতে পারে।

পাখী হলেও এরা উড়তে পারে না এদের শরীরের অতিরিক্ত ওজনের কারণে। তবে এরা প্রলয়ঙ্কারী দৌড়বিদ! তাদের অতিশক্তিশালী ও দৃঢ় পা দুটি ব্যবহার করে তারা ঘন্টা ৪৫ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে একটানা দৌড়াতে পারে। আর অল্প দূরত্বে এমনকি এতে গতি ৬০ কিলোমিটারের বেশি। এদের পাখা দুটো ওড়ার কাজে সহায়তা না করলেও দৌড়ানোর সময় ভারসাম্য রক্ষায় কাজে দেয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়