Wednesday, July 12

এক টাকায় চিকিত্সা সেবা দেন ডা. আসমা

এক টাকায় চিকিত্সা সেবা দেন ডা. আসমা
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: এক টাকায় চিকিত্সা সেবা দেন চিকিত্সক আসমা আক্তার। তার চিকিত্সার স্থান বেদেপল্লী, হরিজন পল্লী, বিহারি পল্লী কিংবা এমন সুবিধা বঞ্চিত এলাকার মানুষজন। রাজধানীর রামপুরা বনশ্রীর স্থায়ী বাসিন্দা ডা. আসমা আক্তার। লেখাপড়া করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে। ২০১২ সালে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর ২০১৪ সালে বিসিএস পাস করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

ডা. আসমা বলেন, 'চাকরীর পর অবসরের সবটুকো সময় আমি এক টাকার চিকিত্সা সেবায় দিতে চাই। এ কাজ করে যে আনন্দ আমি পাই তা লাখ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি। আমি একটা সরকারি চাকরী করি, সে টাকায় তৃপ্ত; আর বেশি টাকার প্রয়োজন বোধ করি না। এখানেই আমার সাফল্য অনেক অনেক বেশি বলে মনে হয়।'

এই চিকিত্সা সেবা দেওয়া হয় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে। এক টাকায় দুস্থ শিশু ও বৃদ্ধদের চিকিত্সা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখে। তবে এর অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু আরো অনেক আগেই।

ডা. আসমা বলেন, ''দেশের ৮টি জেলায় এবং রাজধানীতে সুবিধা বঞ্চিতদের চিকিত্সা দিয়ে আসছি অনিয়মিত ভাবে। আমরা রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দিই এবং ৩ দিনের ওষুধ রোগীকে বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। আমার প্রথম চিকিত্সার স্থান ছিল মিরপুরের বস্তি এলাকায়। ওইসব এলাকার মানুষজন অসুস্থ হলে ফার্মেসিতে গিয়ে সমস্যা বলে ওষুধ নিয়ে আসে। তাতে করে দেখা যায় ভুল চিকিত্সা হয়। সামান্য জ্বরের জন্যই হয়তো ফার্মেসি থেকে তাকে কিছু এন্টিবায়োটিক ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেটা দিয়েও হয়তো রোগী সুস্থ হয় না। অভাবি মানুষগুলো টাকা ব্যয় করে ঠিকই; কিন্তু ভুল চিকিত্সার শিকার হন। এই ভুল চিকিত্সা ও হয়রানি থেকে তাদের বাঁচাতে আমাদের শুরু হয় এই এক টাকার চিকিত্সা কার্যক্রম। আমাদের টার্গেট হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ। কারণ অসুস্থ হলে এই শিশু ও বৃদ্ধদের অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় চিকিত্সার জন্য।''                  

ডা. আসমা বলেন, ''বেদেপল্লীর এক শিশু জন্ম থেকে মাথায় একটা টিউমার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। অভিভাবকরা অভাবের কারণে শিশুটিকে চিকিত্সকের কাছে নিতে পারছিল না। এক টাকায় চিকিত্সার কথা শুনে শিশুটিকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে। শিশুটিকে দেখার পর তার মেডিক্যালে ভর্তি থেকে শুরু করে সব চিকিত্সায় অর্থ ব্যয় করে আমাদের বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। শিশুটির অভিভাবকরা বলেছিলেন, দূরে নিয়ে চিকিত্সা নেয়ার মতো ক্ষমতা তাদের নাই।''

অন্য একটি ঘটনা বলতে গিয়ে ডা. আসমা বলেন, ''একজন বৃদ্ধ নারী যিনি আমাদের এক টাকার আহারের নিয়মিত ক্রেতা। স্বেচ্ছাসেবকরা হঠাত্ খেয়াল করেন যে, বৃদ্ধা আর খাবার নিতে আসেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তখন তাকে আমরা ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে সব ধরনের চিকিত্সা দেবার ব্যবস্থা করি। এরপর তিনি সুস্থ হলে, বৃদ্ধাকে আমাদের রাজবাড়ির ‘পারিজাত’ অনাথ বৃদ্ধাশ্রমে রাখা হয়। এখনো সেখানেই আছেন তিনি।''

ডা. আসমা বলেন, ''কি করে তৃণমূলের দুস্থ মানুষগুলোকে সুস্থ রাখা যায় সেই চেষ্টাই করছি আমরা। ইচ্ছে আছে যারা জলে বাস করে তাদের চিকিত্সা সেবা দেওয়ার। সরকারি চাকরীর পাশাপাশি এটাই আমার প্রাইভেট প্র্যাকটিস।''

তিনি বলেন, ''এ কাজে অনেক আনন্দ পাচ্ছি। অসুস্থ অভাবি মানুষগুলো যখন আমার এক টাকার চিকিত্সা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তখন তারা অন্তর থেকে যে আশির্বাদ করেন সেটা আমার কাছে কোটি টাকার চেয়েও বেশি মনে হয়।''

সূত্র: ইত্তেফাক

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়