কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
দিনকেদিন সিলেট হয়ে পড়ছে টিলাশূন্য। বিভিন্নভাবে টিলা কাটা হচ্ছে। বিক্রি করা হচ্ছে টিলার মাটি। বালুর বিকল্প হিসেবে সিলেটে টিলার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য এর কদরও বেশি।
জানা যায়, সিলেটে ফুট হিসেবে টিলা বিক্রি হয়। আর একেকটি টিলা কমপক্ষে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিয়ানীবাজারের পাটন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিলা কেটে তৈরি করা হয়েছে আলিশান সব বাড়ি। ৫ থেকে ৮ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এসব বাড়ি। গ্রামের ‘বাংলাবাড়ি’তে গিয়ে দেখা যায়, টিলা কেটে দোতলা বিশাল অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখনো টিলার ছোট কিছু অংশ বাড়ির আশপাশে রয়ে গেছে।
বাড়ির ছোট ছেলে আবদুল করিম জানান, তাদের এই গ্রামে দুটি টিলার মধ্যে একটিতে বাড়ি বানিয়েছেন। অন্যটি এখনো কাটা হয়নি। প্রয়োজন হলে সেটিও কেটে মাটি বিক্রি করবেন।
একই গ্রামে আরেকটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে বিশাল একটি টিলার গাছ কেটে সাবাড় করেছেন সেই টিলার মালিক। এমনকি আগাছা পরিষ্কারের জন্য তিনি টিলায় আগুনও দিয়েছেন। এরই মধ্যে টিলার একটি অংশ কাটা শুরু হয়েছে। তবে শুধু বসতবাড়ি নয়, টিলা কেটে সিলেটে তৈরি করা হচ্ছে বিশাল সব রিসোর্টও। সিলেট শহর ও তার বাইরে বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলে টিলা কেটে রিসোর্ট তৈরির হার বেশি। শ্রীমঙ্গল এলাকার লাউয়াছড়া উদ্যান পেরিয়ে রাধানগর ঘুরে দেখা যায়, এ এলাকায় বেশ কটি রিসোর্ট টিলা কেটে ও চা বাগানের ওপর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান ও নভেম ইকো রিসোর্ট।
এ ছাড়া গোটা সিলেট শহরে এখন আর তেমন টিলা দেখতে পাওয়া যায় না। শহরের বেশির ভাগ টিলা কেটে আবাসিক এলাকা বানানো হয়েছে। সিলেটের শাহপরান উপজেলার খাদিমগড়ে অবস্থিত শুকতারা রিসোার্টটি পাহাড়ি টিলা কেটে তৈরি করা হয়েছে। গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি করা এ রিসোর্টের পুরোটিই বিশাল টিলার ওপর বানানো। টিলাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অতিথিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষ। এখানে আরও আছে রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল, সূর্যোদয় দেখার স্থান। নাজিমগড় রিসোর্টের ঠিক পাশেই বর্তমানে আরেকটি টিলা কেটে বাড়ি তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পরিবেশবাদীরা জানান, টিলা কাটায় উচ্চ আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই টিলাখোররা কৌশল পাল্টে এখন রাতের আঁধারে টিলা কাটছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই টিলা কাটা শুরু হয়। বর্ষায় পাহাড়-টিলার মাটি নরম হয়ে আসে। সে সময় অসাধুরা কৌশলে টিলার মাটি কেটে রাখে। এতে টিলা ধসে পড়ে। পরে টিলার মাটি চলে যায় বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির কাছে। সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল স্টেট গ্রুপের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, সিলেটের ২৫টি আবাসন প্রকল্পের অর্ধেকই টিলা এলাকায় অবস্থিত। গত এক দশকের বেশি সময়ে টিলা ধসে সিলেটে ৩০ জনের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। টিলা কাটার জন্য শাস্তির ব্যবস্থাও নগণ্য। পরিবেশ অধিদফতরকেও এ ব্যাপারে খুব একটা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জে শাহ আরেফিন টিলাসংলগ্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি টিলা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় ধসে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া একই এলাকার মতিন টিলা ধসেও পাঁচজন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, ‘পাহাড় ও টিলা কাটা নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাও আছে। পাহাড়-টিলা কেটে অবৈধ পথে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা ব্যর্থ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কাজে সিলেটে যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখলে পরিবেশ ধ্বংস ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত অনেককে চিহ্নিত করা যাবে।’
সূত্র: সিলেটভিউ২৪ডটকম
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়