Sunday, December 11

বিশ্ব ইজতেমার মাঠ যেন কালেমা তায়্যেবার বাগান


আল ফাতাহ মামুন : ‘ভাই! জীবনের প্রতিটি বাঁকে ‘সুন্নাতের ফুল’ ফোটাতে হবে। এমনকি খাওয়ার সময়ও সুন্নাতের নিয়ম মেনে খেতে হবে। যেমন ডান দিক থেকে খাওয়া শুরু করা। খাওয়ার সময় পাশের ভাইয়ের প্রয়োজন এবং সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখা। খাওয়ার আগে হাত ধোয়া। মাঝে মধ্যে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। শনিবার দুপুরের খাবারের আগে ইজতেমার মাঠে এভাবেই তালিম দিচ্ছিলেন জোড় ইজতেমায় আসা একটি জামাতের ‘মুতাকাল্লিম’। দশজনের এ জামাত এসেছে পুরান ঢাকার বংশাল থেকে। রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে অসংখ্য জামাত এসেছে জোড়ে অংশগ্রহণ করতে। জোড়ে এবং জোড়ের আগে-পরে আসা জামাতগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অল্প অল্প করে প্রস্তুত করছে ‘কালেমা তায়্যেবার বাগান’খ্যাত ইজতেমার মাঠকে। তাই জোড় ইজতেমাকে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা পর্ব বললেও ভুল হবে না। কেউ বাঁশ গেড়ে, কেউ খুঁটি বেঁধে, খেয়ে না খেয়ে, শীত-রোদ উপেক্ষা করে প্রায় দেড় মাসে হাজারও সন্তানের ঘামসিক্ত তুরাগ মাঠে গত শুক্রবার পাঁচ দিনব্যাপী শুরু হওয়া জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। ‘তিন চিল্লা দেয়া নিষ্ক্রিয় সাথী ভাইদের মাঝে নতুন উদ্যম তৈরি করাই জোড় ইজতেমার প্রধান উদ্দেশ্য’- বললেন বংশাল থেকে আসা জামাতের আমির। ‘জোড় ইজতেমা’ কী- এ প্রশ্নের উত্তর যেন এখনও পরিষ্কার হয়নি প্রতিবেদকের কাছে। তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম নাম না জানা আরেক ভাইয়ের দিকে। তিনি বললেন, ‘ভাই শোনেন! লোহায় মরিচা পড়লে মরিচা দূর করার জন্য ধার দিতে হয়, তেমনি তিন চিল্লা দেয়ার পরও যেসব সাথী ভাই আত্মায় মরিচার কারণে দ্বীনের মেহনতে সময় লাগায় না, তাদের মৃত আত্মাকে সজীব করার জোর প্রচেষ্টার নামই ‘জোড় ইজতেমা।’ ‘জোড়ে’র দ্বিতীয় প্রধান কাজ হল- আগামী এক বছর যারা চিল্লায় যাবেন তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা এবং জেলা ও থানার আমিরদের নিয়ে পরামর্শের ভিত্তিতে আগামী বছরের কর্মসূচি প্রণয়ন করা। এ ক্ষেত্রে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ বাস্তবায়নের নানা বিষয় প্রাধান্য পায়। মূলত জোড়কে কেন্দ্র করেই শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি। এ বছরের জোড় ইজতেমায় প্রায় তিন লাখ সাথীর উপস্থিতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। জোড় শেষে মাঠের আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্ত হবে তিন দিনের জামাতে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাদের অনুভব-অনুভূতি। তারা বললেন- ‘আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিশ্রমে চটের হাওয়ায় দুনিয়া দোলানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কহর দরিয়ার তুরাগ মাঠের চেয়ে সৌভাগ্যের আর কী আছে?’ ‘মাশওয়ারা’ বা পরামর্শ ইসলামী জিন্দেগির একটি অপরিহার্য বিষয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘ওয়াশা উয়িরহুম ফিল আমর- অর্থাৎ নবী হে! আপনি তাদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করুন।’ (সূরা আল ইমরান, ৩ : ১৫৯।) লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হল- ওহির জ্ঞানে জ্ঞানী নবীকে (সা.) যদি আল্লাহতায়ালা ‘মাশওয়ারা’র আদেশ করেন, তবে ‘সামান্য জানা’ মানুষদের কত বেশি পরামর্শভিত্তিক জিন্দেগি যাপন করতে হবে? আফসোস! মুসলমান আজ কোরআনের আদেশ ‘পরামর্শ করে কাজ কর’- ভুলে গিয়েছে। তাই তো তারা এখন বিশ্বের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাশওয়ারাসহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-আসয়ের চর্চা হয় তাবলিগ জামাতে। তাই তো বিশ্বব্যাপী তাদের এত গ্রহণযোগ্যতা। তাবলিগের শিক্ষাগুলো যদি মসজিদের পাশাপাশি আমরা পরিবার ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারতাম, তবে পৃথিবীই হতো আমাদের জন্য অস্থায়ী জান্নাত। লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়