নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাটে একসপ্তাহের মধ্যে দু’টি লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনায় সর্বত্র জনমনে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক অধ:পতনের কারণে এ ধরনের হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন। সম্প্রতি কানাইঘাটে বেশ কয়েকটি নেতি বাচক ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সর্বত্র আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মেয়েলি ঘটনার জের ধরে নৃশংস হত্যাকান্ডের স্বীকার হয় দর্জি ইমরান হোসেন। খুনিরা তাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে লাশ ঘুম করার উদ্দেশ্যে পুকুরে ডুবিয়ে রাখে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় গণ-ধর্ষণের পর ১১ বৎসরের এক মেয়ে জঘন্যতম হত্যাকান্ডের ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যেভাবে দু’টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তা পেশাদার খুনীদেরও হার মানিয়েছে। গত সোমবার উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির এরালীগুল গ্রামের তেরা মিয়ার মেয়ে স্থানীয় স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা বেগম (১১) কে গণধর্ষণের পর ধর্ষণকারীরা যেভাবে তাকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে লাশ আড়াইশ’ ফুট উপরে একটি টিলায় মাটি চাপা দিয়ে গুম করে রাখে সম্প্রতি কয়েক বছরের মধ্যে এধরনের ঘটনা ঘটেনি। এ নির্মম পৈশাচিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকার মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছেন। খুনীদের যেন দ্রুত আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় তাদের একটাই দাবী। এদিকে সুলতানা বেগমের পৈশাচিক হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত আবুল আহমদ, রাসেল ও ছাদেক শুক্রবার সিলেটের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সুলতানাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবির কানাইঘাট নিউজকে জানিয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সুলতানার সহপাঠী ফারহানা বেগমেরও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয় আদালত। গণধর্ষণের পর নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার সুলতানা বেগমের হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল শুক্রবার পরিদর্শন করেছেন সিলেট উত্তর সার্কেলের এএসপি ধীরেন্দ্র মহাপাত্র। স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ধীরেন্দ্র মহাপাত্র নিহত সুলতানা বেগমের বাড়ী এরালীগুল গ্রামে গেলে সেখানে হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সুলতানার মা কুলছুমা বেগম ও স্বজনরা। সুলতানার মা গগণবিধারী কান্নাজড়িত কন্ঠে তার নিষ্পাপ মেয়েকে যারা ধর্ষণ করে খুন করেছে তাদের যেন ফাঁসি হয়। সুলতানার আত্মীয় স্বজনদের শান্তনা প্রদান এবং সেখানে উপস্থিত এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে ধীরেন্দ্র মহাপাত্র বলেন যেভাবে নিষ্পাপ শিশু মেয়ে সুলতানা বেগমকে ধর্ষণ করে খুনীরা হত্যা করে লাশ টিলায় মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিল তা নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। সুলতানা নিখোঁজের প্রথম দিন পুলিশকে এব্যাপারে তথ্য দিলে আমরা তার লাশ উদ্ধার ও খুনীদের আগেই গ্রেফতার করতে পারতাম। তারপরও এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পুলিশ ধর্ষণ ও হত্যাকারী বড়খেওড় গ্রামের আবুল আহমদ (২৫), রাসেল (২৫) ও ছাদেক হোসেন (২৬) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। তিনি নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে আরো বলেন, কম সময়ের মধ্যে সুলতানা হত্যা মামলার চার্জশীট আদালতে দেওয়া হবে। খুনীদের যাতে মৃত্যুদন্ড হয় এবং ভবিষ্যতে এ এলাকায় এ ধরনের জগন্যতম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে পুলিশ সেভাবেই দ্রুততার সাথে আইনী পদক্ষেপ নেবে। ধীরেন্দ্র মহাপাত্র সুলতানা হত্যা মামলার পলাতক আসামী বাবুল আহমদকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। প্রসজ্ঞত যে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এরালীগুল গ্রামের তেরা মিয়ার ১১ বৎসরের শিশু ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা বেগম গ্রামের জামে মসজিদে মক্তব পড়ে পাশ্ববর্তী বড়খেওড় গ্রামের ইমাম উদ্দিনের মেয়ে সহপাঠী ফারহানা বেগমের বাড়ীতে যায়। উক্ত বাড়ীতে অবস্থান করার একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফারহানা বেগমের বড় ভাই বিবাহিত এক সন্তানের জনক আবুল আহমদ নিজ বাড়ীর টিলায় জঙ্গল পরিস্কার করার সময় তার বোন ফারহানা বেগমকে পানি দেওয়ার জন্য টিলার উপর থেকে ডাকাডাকি করে। ফারহানা বেগম ভাই আবুলের জন্য পানি না নিয়ে গিয়ে সহপাঠি সুলতানা বেগমকে পানি দিয়ে টিলার উপরে পাটায়। শিশু সুলতানা টিলার উপর পানি নিয়ে যাচ্ছে দেখে তার পিছু নেয় বড়খেওড় বাবুল আহমদ। সুলতানা পানি নিয়ে প্রায় আড়ই শ’ ফুট উপরে টিলায় উঠলে পাশর্^বর্তী একটি টিলার জঙ্গল পরিস্কার করছিল একই গ্রামের রাসেল ও ছাদেক। একপর্যায়ে আবুল আহমদ, বাবুল আহমদ, রাসেল ও ছাদেক একত্রিত হয়ে সুলতানা বেগমকে টিলার উপর আটকিয়ে মুখ চাপা দিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ শুরু করলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনাটি চাপা দিতে ধর্ষণকারীরা সুলতানাকে শ^াশরুদ্ধ করে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য টিলার উপরে মাটি খোঁড়ে চাপা দিয়ে রাখে। সুলতানা যে খুনী ধর্ষণকারী আবুল আহমদের বাড়ীতে গিয়েছিল তার পরিবার বিষয়টি গোপন রাখে। নিখোঁজের তিনদিন পর সুলতানার ভাই একলিম উদ্দিন কানাইঘাট থানায় তার বোনকে অপহরন করে লাশ গুমের ঘটনায় আবুল আহমদ সহ কয়েকজনকে আসামী করে অভিযোগ দিলে থানা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার আবুল আহমদকে গ্রেফতার করলে তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির সূত্র ধরে তার বাড়ীর আড়াই শ’ ফুট উপরের টিলায় মাটি চাপা দিয়ে রাখা সুলতানার অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত বাবুল আহমদের সহযোগী রাসেল ও ছাদেককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়