Wednesday, September 23

প্রতিপক্ষকে প্রশাসন দিয়ে মোকাবেলা করছে সরকার


ঢাকা: রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা না করে সরকার বিরোধী দলকে প্রশাসন দিয়ে বেআইনিভাবে মোকাবেলা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লন্ডনে দেয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ গঠন করা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে দলটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এমন অভিযোগ করেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রতিবাদে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান লন্ডনের বেতনাম গ্রিনইয়র্ক হলে এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু নন পাকবন্ধু। তিনি জাতির জনক হতে পারেন না, তিনি হত্যাকারী। যা পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তার এই বক্তব্যর পর ওই বছরের ১৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক বাদী হয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি মামলা করেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী কমিশনার জুয়েল রানা। রিপন বলেন, “আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি-আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এর একটি বক্তৃতার কিছু অংশকে কেন্দ্র করে সরকারের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ ‘সেডিশন’ একটি অভিযোগ গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আনা অভিযোগের মামলায় ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ এর ‘সেডিশন’ এর অভিযোগ গঠন করায় আমরা বিস্মিত ও উদ্বিগ্নও। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ, সমালোচনা রাজনৈতিকভাবেই হওয়া উচিত-এটাই সাধারণত: মানুষের প্রত্যাশা। রাজনীতি, ইতিহাস এবং ইতিহাসের যারা অংশ তাদের ভূমিকা নিয়ে কখনোই বিতর্ক ছিল না-এটা বোধ হয় কেউই দাবি করবেন না।” কারও বক্তব্যে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক বক্তব্য ও বিবৃতির মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করতে পারেন এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “বক্তব্য অসত্য কিংবা বস্তুনিষ্ঠ না হলে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য দিয়ে অভিযোগসমূহকে অসত্য প্রমাণ করে অভিযোগকারীকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করবেন। এটাই গণতান্ত্রিক সমাজের রীতি।” বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের বিষয়টি আইনের অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য তাকে হয়রানি করার শামিল বলেও দাবি করেন রিপন। একের পর এক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, “এটা অন্যায়, অগণতান্ত্রিক ও সভ্যতা বিবর্জিত। অবিলম্বে এইসব প্রক্রিয়া বন্ধ এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আজ জনগণের দাবি।” তারেক রহমানের ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, “তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তিনি নিজে থেকে কিছু বলেননি। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর পরিস্থিতির উপর প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধ, পুস্তক এবং রেফারেন্স দিয়ে তার বক্তব্য রেখেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে যদি মামলা হয় ও ‘সেডিশন’ অভিযোগ গঠন হয়-তাহলে ওসব নিবন্ধ ও পুস্তকের লেখকদের বিরুদ্ধেই হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।” তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা ও অভিযোগ গঠনের নিন্দা জানিয়ে রিপন অভিযোগ করে বলেন, “বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার নয় বলেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে প্রশাসনিকভাবে হয়রানি এবং আইনের বেআইনি প্রয়োগের অপচেষ্টা করছে। আমরা সরকার ও সরকারি দলের এহেন অপচেষ্টা ও অরাজনৈতিক তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব রাজনৈতিকভাবে দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করবো সরকার রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবেন এবং বিভাজনের রাজনীতির অবসানকল্পে সকল বিতর্কের অবসানে হিংসাশ্রয়ী পথে নয়, দমন-নিপীড়ণের পথে নয়, মামলা-হামলার মাধ্যমে নয়, জাতীয় ঐক্য’র প্রক্রিয়ার কথা গভীরভাবে ভাববেন।” সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়