Sunday, June 28

রমজানেও ধোঁকা!


নাঈম বিন মাসউদ: অর্থলোভী একশ্রেণীর ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এ মাসে খাদ্যে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। সিন্ডিকেট করে খাদ্যের মজুদ আটকে রাখে, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত করে। নানা রঙের খাবারের পসরা সাজিয়ে রাখে অথচ সে খাবারে মেশানো রয়েছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। যারা রমজানে রোজাদারের সঙ্গে কিংবা যে কারও সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে তাদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, সে আমাদের লোক নয় এবং যে আমাদের প্রতারিত করবে, সেও আমাদের লোক নয়।' এ হাদিসে প্রতারককে মুসলমানের জামাত থেকে বহিষ্কার করে দেয়ার সতর্ক করা হয়েছে এবং প্রতারণার মাত্রানুযায়ী শাস্তিও প্রধান করা হবে। আরেক হাদিস থেকে জানা যায়, 'রাসুল (সা.) একবার রাস্তায় খাদ্যশস্য স্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তিনি এর ভেতরে হাত ঢোকালেন এবং ভেজা ভেজা অনুভব করলেন। অথচ স্তূপটির উপরিভাগ ছিল সম্পূর্ণ শুকনো। তিনি এ পণ্যের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এ খাদ্যশস্য বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। রাসুল (সা.) তাকে বললেন, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত খদ্যশস্য কেন স্তূপের উপরিভাগে রাখনি? তাহলে লোকজন তা দেখতে পেত। যে প্রতারক, সে তো আমাদের লোক নয়।' (মুসলিম)। প্রতারণা করা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। কোনো বিবেকবান মানুষ তা করতে পারে না। সত্যকে ইচ্ছেকৃতভাবে বিকৃত করে অন্যদের বিভ্রান্ত করা সততার পরিপন্থী। আর সততার জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা, সরলতা ও খোদাভীরুতা। এর মাঝে প্রবঞ্চনা, মিথ্যাচার, ধূর্ততা ও ফাঁকিবাজির কোনো স্থান নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অনেক স্থানেই এ কথা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতারণা যার সঙ্গেই হোক না কেন, সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম, যে কোনো কারণেই হোক, তা সব সময় নিষিদ্ধ। প্রতারণা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য পাপ। যে প্রতারণা করে, তার জন্য খুবই লজ্জাকর ও দুর্ভাগ্যের বিষয়। আর এ লজ্জা ইহকাল ও পরকাল উভয় জাহানে তাকে আজাবের পথে টেনে আনবে। রাসুল (সা.) প্রতারকদের নিন্দা করেছেন। তাদের মুসলিম সমাজে অন্তর্ভুক্ত করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি ঘোষণা করেছেন, শেষ বিচারের দিন প্রত্যেক প্রতারকের পুনরুত্থান হবে এ অবস্থায় যে, ওরা বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা বহন করে। হাশরের বিশাল ময়দানে একজন আহ্বানকারী প্রতারকের দিকে ইঙ্গিত করে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে চিৎকার দিয়ে বলবে, পুনরুত্থান দিবসে প্রত্যেক প্রতারকের একটি করে পতাকা থাকবে এবং সবার সামনে তার প্রতারণার ধরন তুলে ধরা হবে। (বোখারি)। সেদিন প্রতারকরা সবচেয়ে বেশি লজ্জিত হবে। যারা ভেবেছে, তাদের প্রতারণার বিষয়টি কেউ জানে না বা সবাই ভুলে গেছে তারা আশ্চর্য হয়ে যাবে যে, তাদের প্রতারণার কা-কীর্তি সব মানুষের সামনে প্রকাশ পেয়ে গেছে। আর চিহ্নস্বরূপ বিশেষ পতাকা বহন করবে। হাদিসে কুদসিতে এরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছের, 'আল্লাহ তায়ালা বলেন, হাশরের দিন আমি তিন ধরনের লোকের বিরোধিতা করব। তারা হলো- যে কথা দিয়ে কথা রাখেনি; যে আজাদ ব্যক্তিকে বিক্রি করে দিয়েছে; আর যে কাউকে ভাড়া করে তার শ্রমে লাভবান হয়েও মজুরি পরিশোধ করেনি।' (বোখারি)। যে মুসলমানের মধ্যে ইসলামের প্রকৃত অনুভূতি আছে, আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার সামান্য ভয় আছে, তার উচিত প্রতারণা, ফাঁকি দেয়া, ওজনে কমবেশি বর্জন করা। আর এসব করার কারণে কথিত লাভ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও এর থেকে বিরত থাকা। সুতরাং আসুন, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমরা আত্মশুদ্ধির পথ বেছে নিই। তবেই সুন্দর একটি সমাজ ও রাষ্ট্র বিশ্বকে উপহার দিতে পারব।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়