নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওয়াতাধীন কানাইঘাট পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসে নতুন মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে গ্রাহকদের নানা ভাবে হয়রানীর মাধ্যমে অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও দালাল চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সংবাদ সম্প্রতি কানাইঘাট নিউজ ডটকমে প্রকাশিত হওয়ার পর পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের নানা অনিয়ম দুর্নীতি বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সেবার পরিধি বেড়েছে বলে অফিসে আগত গ্রাহকরা কানাইঘাট নিউজ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন। কোন ধরনের হয়রানী ছাড়া বর্তমানে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে মিটার সংযোগ সহ অন্যান্য সেবা পাচ্ছেন বলে অনেক গ্রাহক জানিয়েছেন। অপরদিকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও দালালদের তলের বিড়াল বেরিয়ে আসায় তারা উৎকন্ঠায় রয়েছেন। এদিকে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিদ্যুৎ সেক্টরে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়ায় সারা দেশের ন্যায় কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। এ অবস্থায় অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, দালাল ও এলাকা ভিত্তিক একটি প্রতারক চক্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে গ্রাহকদের নানা ভাবে প্রতারিত করে অর্থ বাণিজ্যের নেশায় মেথে উঠেছে। তবে বর্তমান ডিজিএম প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম মোল্লা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে যোগদানের পর থেকে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কোন ধরনের হয়রানী ছাড়া সংযোগ পাওয়ার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। অফিসকে দালাল মুক্ত এবং মিটার সংযোগ দেয়ার নামে গ্রাহকদের হয়রানী বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। এদিকে খুটি, তার ও মিটার সংযোগ দেয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা যায়, পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের এলাকা পরিচালক আলমগীর হোসেন সুষ্ঠু ভাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা প্রতারনার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। উপজেলার মহেশপুর খলা গ্রামের আবুল কালাম জানান, এলাকা পরিচালক আলমগীর হোসেন তার প্রবাসী দোলা ভাই সোনাপুর গ্রামের ফারুক আহমদের বসত ঘরে মিটার সংযোগ দেয়ার নামে ৭ মাস পূর্বে ১০ হাজার টাকা নেন। এরপরও মিটার সংযোগ দিতে কালক্ষেপন শুরু করেন তিনি। কানাইঘাট নিউজে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকদিন পূর্বে আলমগীর হোসেন তাকে ৭ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত মিটার সংযোগ দেওয়া হয় নি। বীরদল পুরানফৌদ গ্রামের প্রবাসী মঈন উদ্দিনের স্ত্রী, তার বসত ঘরের একটি বৈদ্যুতিক খুটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য আলমগীর হোসেনকে ৩৫ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তিনি বৈদ্যুতিক খুটি না দিয়ে আরো একটি খুটির স্থান পরিবর্তন করে তার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ৩৫ হাজার টাকা ফেরত পাননি তিনি। এলাকা পরিচালক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় গুরুতর অভিযোগ, তিনি সরকারী ভাবে মাষ্টার প্ল্যানের আওতায় বীরদল ভাড়ারিফৌদ ও পুরানফৌদ গ্রামের আংশিক অংশে ৫২টি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে ১৮টি খুটি ও ৫২টি মিটারের অনকূলে যাবতীয় কাজ করে দেয়ার নামে নতুন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়েছেন। খুটি ও ওয়্যারিংয়ের কাজ হলেও ৪/৫ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও গ্রাহকরা অদ্যবধি পর্যন্ত ট্রান্সফরমার ও মিটার সংযোগ পাননি। সরকারী মাষ্টার প্ল্যানের আওতায় বিভিন্ন গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। আর এসব কাজ সম্পন্ন করে দেয়ার নামে বিদ্যুৎ গ্রাকদের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাষ্টার প্ল্যানের আওতায় উপজেলার উমাগড় ও ভাটিদিহি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মিটার সংযোগ দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৮/১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আর এ ক্ষেত্রে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দালাল, কিছু ইলেক্ট্রেশিয়ান ও এলাকা ভিত্তিক টাউট, বাটপার প্রকৃতির লোকজন জড়িত রয়েছেন বলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানিয়েছেন। দুর্নীতির সাথে অফিসের এজিএমকম মিনহাজ উদ্দিন শেখ, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার স্বপন, ওয়্যারিং ইন্সপেক্টর জাকির আহমদের জড়িত বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। তবে তারা এসব অস্বীকার করছেন। এলাকার সচেতন জনসাধারণ জানিয়েছেন সরকারী ভাবে মাষ্টার প্ল্যানের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বিষয়টি পল্লীবিদ্যুতের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত করলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। এদিকে অফিসে যথারীতি মিটারের আবেদন করার পরও বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যবধি পর্যন্ত দর্পনগর গ্রামের রাবেয়া বেগম চৌধুরী, নয়াগ্রামের শামসুন নাহার, কাজিরগ্রামের আব্দুল্লাহ ও কানাইঘাট দারুল উলূম মাদ্রাসার জন্য আবেদনকৃত মিটার পাননি। এসব গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কানাইঘাট পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম মোল্লা’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কোন ধরনের হয়রানী ছাড়াই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সেবা দেওয়ার জন্য অফিসের কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। তিনি ফেব্রুয়ারী মাসে কানাইঘাটে যোগদান করার পর অফিসের কেউ যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকে তাহলে তাঁর কাছে গ্রাহকদের অভিযোগ দেয়ার জন্য বলেন। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের আরো সচেতন এবং কাউকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে অফিসের কাগজপত্র ব্যাতীত টাকা পয়সা লেনদেন না করার জন্য বলেছেন। এলাকা পরিচালক আলমগীর হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে কোন দুর্নীতি হচ্ছে না বলে জানান।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
বিশেষ খবর

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়