কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
স্বাস্থ্যকর ও সুখী জীবনযাপনের একটি অপরিহার্য উপাদান হলো রাতে ভালো ঘুম। কিন্তু গরমের সময় এ কাজটিই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে কঠিন।
দিনভর যখন মাথার ওপর জ্বলজ্বলে সূর্য অসহনীয় তাপ ছড়াতে থাকে, সে তাপ রাতের বেলাতে কমে গেলেও গরমের অস্বস্তি কমে না মোটেই। এই গরমে যদি আপনি এরকমই কোনো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে রাতে শান্তিতে ঘুমানোর জন্য কয়েকটি সহজ ও কার্যকর কৌশল অনুসরণ করে চলুন, দেখুন যাদু!
শোবার ঘরে সুতির কাপড়
এমনিতে রেশম ও সাটিনের কাপড় বেশ ফ্যাশনেবল মনে হলেও এগুলোই কিন্তু বাড়তি গরমের অন্যতম কারণ। এসব কাপড় কখনোই গ্রীষ্মবান্ধব নয়। কাজেই ঘর সুন্দর দেখানোর জন্য যদি বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা বা এ ধরনের অনুষঙ্গে রেশম বা সাটিনের কাপড় ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আজই তা সরিয়ে ফেলুন। ব্যবহার করুন উজ্জ্বল রঙের সুতির কাপড়। এতে ঘর রাতভর থাকবে ঠাণ্ডা এবং বাতাসের চলাচলও বিঘ্নিত হবে না একদম।
ঘুমানোর আগে ঢিলেঢালা পোশাক
ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোনো পুরোনো, ঢিলেঢালা, হালকা টি-শার্ট বা গেঞ্জি ও প্যান্ট বা শর্টস পড়ে নিন। এতে ঘুমানোর সময় বেশ হালকা ও স্বস্তিবোধ করবেন। দেহ বাতাসের স্পর্শে জুড়িয়ে যাবে অনেকটাই। এছাড়া স্কার্ট বা লুঙ্গিও পরা যেতে পারে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে সঙ্গী করুন প্রকৃতিকে
পুরোনো ও আদ্যিকালের কথা মনে হতে পারে, তবে এই উপায়টি কিন্তু দারুণ ও অতুলনীয়। প্রাচীনপন্থায় ঘরে বসে নিজেই তৈরি করে নিন নিজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এবং প্রকৃতির সঙ্গী হোন। কিভাবে? একটি বড় পাত্র হিমশীতল ঠাণ্ডা পানি বা বরফ বা দু’টো দিয়েই ভর্তি করে নিন। এবার পাত্রটি রাখুন সরাসরি আপনার বৈদ্যুতিক পাখার নিচে, এবার পাখাটি ছেড়ে দিন। এছাড়া একই কায়দায় পানির বোতল ডিপ ফ্রিজে রেখে বরফ করে নিতে পারেন এবং টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যান ছেড়ে এর সামনে বোতলটি রেখে দিতে পারেন। এতে করে ঠাণ্ডা ও বরফ পানি থেকে বের হওয়া আর্দ্র ও শীতল বাতাস পাখার বাতাসের সংস্পর্শে এসে পুরো ঘরে ছড়িয়ে যাবে এবং পুরো ঘরেই স্বস্তিদায়ক ঠাণ্ডা বিরাজ করবে।
আলো নিভিয়ে রাখুন
ঘুমানোর আগে সব ধরনের আলো নিভিয়ে ফেলুন, কারণ এমনকি পরিবেশবান্ধব আলোও তাপ সৃষ্টি করে- যা অসহ্য গরমের অন্যতম কারণ। অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় বসে ল্যাপটপ বা মোবাইল ইত্যাদি ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকেন বা বিছানায় যাওয়ার আগে টেলিভিশন দেখেন। এগুলোর আলোও ঘরকে গরম করে ফেলে। যতক্ষণ এসব ব্যবহার করতে থাকবেন, ততক্ষণই ঘর গরম থেকে যাবে। তাই ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে এগুলো সব বন্ধ করে দিন।
ঠাণ্ডা শস্য
গমের গাছ ও ধান- এ দু’টো শস্য আশপাশের পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখে। চাইলে ঘুমানোর জন্য গম বা ধানগাছ মেশানো তুলার তৈরি বালিশ ব্যবহার করতে পারেন, অথবা একটি পুরোনো মোজায় ভাত ভর্তি করে তা ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করুন এবং ঘুমানোর আগে চোখের ওপর ভাতভর্তি ঠাণ্ডা মোজাটি কিছুক্ষণ রেখে দিন। মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
ঠাণ্ডা পানীয়
দেহকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য পুরো গরমের সময়জুড়ে নানারকম পানীয় পান করা খুবই জরুরি, তবে তা অবশ্যই বাজারের কৃত্রিম কোমল পানীয় নয়। প্রচুর পানির পাশাপাশি স্যালাইন, ফলের রস বা শরবত ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন নানারকম ফল ও সবজি, যেমন- তরমুজ, শসা, আম, পাকা পেঁপে, বেল ইত্যাদি নিয়মিত খান। এতে দেহ শুষ্ক হয়ে যাবে না, স্বাভাবিক পানি ও আর্দ্রতা বজায় থাকবে, দেহ থাকবে ঠাণ্ডা। বিছানার পাশেও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক বোতল পানি রেখে দিন।
গরমে শীতল হওয়ার মিশরীয় কায়দা
মরুভূমি অঞ্চলের দেশ মিশরে প্রাচীন মিশরীয়রা গরমে শরীর জুড়াতে কী করতেন, জানেন কি? একটি টাওয়েল বা চাদর জাতীয় কিছু পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে তা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। এতে করে যতো গরমই পড়ুক না কেন, তারা ঠাণ্ডাই রয়ে যেতেন। আপনিও একই কায়দায় বিছানায় যাওয়ার আগে একটি টাওয়েল বা হালকা চাদর জাতীয় কিছু ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে ও পানি নিঙড়ে নিয়ে তা কাঁথা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন কিংবা, তার ওপরেই শুয়েও পড়তে পারেন। তারপর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ুন।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ুন
সন্ধ্যা ও রাতের চাইতে ভোরবেলায় প্রকৃতি বেশ ঠাণ্ডা থাকে। তাই ঘুম থেকে উঠে পড়ুন একদম ভোরবেলা এবং কিছু ব্যায়াম করে নিন। এতে ভোরের ঠাণ্ডা ও মৃদুমন্দ বাতাস যেমন উপভোগ করবেন, তেমনি ক্লান্তিও আসবে। এই ক্লান্তির কারণেই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমও চলে আসবে।
তাহলে? গরমেও প্রশান্তির ঘুম পাওয়া মোটেই কঠিন কিছু নয়। ঠিকমতো ঘুমান, সুস্থ-সুন্দর ও হাসিখুশি থাকুন।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়