Saturday, January 31

খুলনায় বিএনপির ভিন্ন কৌশল!


আলমগীর হান্নান: বিএনপির চলমান আন্দোলনে দলটির বড় পদবীধারী নেতারা গ্রেফতার হচ্ছেন না। ধরা পড়ছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। মামলা হলেও শীর্ষ নেতারা থাকছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ধরা না পড়লেও তারা রাজপথে সক্রিয় না থাকায় মহানগর বিএনপি’র তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। রাজপথে নিষ্ক্রিয়তার জন্য মহানগর শাখার শীর্ষ নেতাদের দায়ী করছেন তারা। অন্যদিকে, মামলা ও গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে দলের পক্ষ থেকে আইনী সহায়তা না করায় রাজপথ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন কেসিসি’র বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররাও। এদিকে শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে কৌশল অবলম্বন করেই সামনে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আহুত অবরোধের ২৬তম দিন ছিল শনিবার। এরমধ্যে সারা দেশব্যাপী এবং জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে হরতাল পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে খুলনার রাজপথে পদবীধারী অধিকাংশ নেতাকে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। খানজাহান আলী থানার একাধিক কর্মীর অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে দলীয় কোনো কর্মসূচি পালিত হয় না দীর্ঘদিন। এমনকি সারাদেশে আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হলেও খানজাহান আলী থানা এলাকায় হয়নি। মহানগর শাখা আয়োজিত জানাজায়ও থানার শীর্ষ কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। খুলনা থানা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল জলিল খান কালাম ও সোনাডাঙ্গা থানার সভাপতি আনোয়ারুল কাদির খোকনের দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। নগরীর ১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি বেলায়েত হোসেনকে চলমান আন্দোলনে দেখতে পান না কর্মীরা। প্রথম দু’একদিন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শিকদার। কিছুদিন আগে তিনি চার মাসের জন্য তাবলীগে চলে গেছেন বলে নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। এছাড়া, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবীর মাসুম, ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি সেলিম খান, ৬নং ওয়ার্ড সভাপতি কাউন্সিলর শেখ শওকাত আলী, ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ১০নং ওয়ার্ড সভাপতি শেখ দাউদ আলী, ১১নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. আশরাফ হোসেন, ১৩ নম্বরের সভাপতি শাহীন তালুকদার, ১৪ নম্বরের সভাপতি বয়োবৃদ্ধ জহর মীর ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিন, ১৭, ১৮, ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, রাজুল হাসান রাজু, উত্তম কুমার ঘোষ ও আফজাল হোসেন পিয়াস, ২৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল লিটন, ২৮নং ওয়ার্ড সভাপতি শেখ মুহম্মদ আলীকেও চলমান আন্দোলনে রাজপথে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। আবার, ১৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ডিনো জেলহাজতে রয়েছেন, তবে সভাপতি আলমগীর হোসেন বাদশার নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা। ১২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনি ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেন বলে অভিযোগ তারই অনুসারীদের। এজন্য আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে দেখা যায় না। ২৮নং ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, অহিংস কর্মসূচি আপোষহীনভাবে চালিয়ে নিতে চাই। কিন্তু নেতাদেরইতো রাজপথে দেখি না। ৩১নং ওয়ার্ডের সেলিম ওরফে বড় মিয়া বলেন, এসব পানসে কর্মসূচিতে কিচ্ছু হবে না। নেতাদের রাজপথে থাকতে হবে। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মী বলেন, ৫ জানুয়ারির কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে সারাদেশে যখন টান-টান উত্তেজনা তখনও খুলনা ছিল সম্পূর্ণ নিরুত্তাপ। টানা অবরোধেও খুলনা শান্তিপূর্ণ। খুলনা বিএনপি’র কার্যক্রম হল- মিছিলগুলো পিটিআই মোড় থেকে শুরু হয়ে আহসান আহমেদ রোড, স্যার ইকবাল রোড হয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। আর সমাবেশগুলো দলীয় কার্যালয়ের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকে বলেও অভিযোগ তাদের। ফলে অঙ্গ-সংগঠনগুলির আন্দোলনেও চাঙ্গাভাব আসছেনা না বিএনপির। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুজ্জামান আরিফ চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ভারতে রয়েছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। ফলে সাধারণ সম্পাদক এসএম কামাল একাই চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলন। সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেল একাধিক মামলার আসামি। ছাত্রদলের কতিপয় নেতা-কর্মী মিছিল-সমাবেশে আসলেও রাজপথ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস নিরুত্তাপ। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মহানগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রিক। আন্দোলনে শ্রমিক দলের ভূমিকা নেতা-কর্মীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। মহানগর শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুর রহিম দুদু পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেন। আর সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান নিজে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে আসলেও সাংগঠনিক পরিসীমা বাড়াতে পারেননি বলেও অভিযোগ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম-সম্পাদক ও ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ ও আমজাদ হোসেন এবং নগর কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বাবুসহ ১৭১ সদস্যের মহানগর কমিটির অর্ধশতাধিক নেতার পদধুলি রাজপথে পড়ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। আবার, বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত ২৩ জন কাউন্সিলর খুলনা সিটি কর্পোরেশনে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তবে তাদের মধ্যে দুই-তিনজন ব্যতীত অন্যদেরও রাজপথে দেখতে পান না নেতা-কর্মীরা। এ ব্যাপারে ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও নগর যুবদলের সহ-সভাপতি প্যানেল মেয়র মো. আনিসুর রহমান বিশ্বাস বলেন, আমি আমার অবস্থান থেকে রাজপথে ছিলাম, আছি আর দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশনা মোতাবেক থাকবো। তার নির্দেশনা ব্যতীত কোনো ব্যক্তি স্বার্থের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। জাতীয়তাবাদী কাউন্সিলর ফোরামের আহ্বায়ক ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাহবুব কায়সার বলেন, সুবিধাবাদী নীতি ও পরস্পর বোঝা-পড়ার অভাবে কাউন্সিলররা চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ১০নং কাউন্সিলর মো. ফারুক হিল্টন বলেন, মামলায় জড়ালে বা গ্রেফতার হলে দলীয় কর্ণধাররা সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে আসেন না। এদিকে, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম বললেন, আমি বৈকালিতে আছি। বুকে অপারেশন, হাঁটুর ব্যথা ও ডায়াবেটিকসের কারণে খুলনায় যাওয়া হয় না। আমি সব আন্দোলনে আছি। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষুব্ধতা ও হতাশার সত্যতা স্বীকার করে মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, চেয়ারপারসন অবরুদ্ধ অবস্থায় তার প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছেন। তারপরও দেশের মানুষের স্বার্থে ও গণতন্ত্র রক্ষার্থে তিনি অপোষহীন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপি’র আন্দোলন যতই তীব্র হচ্ছে সরকার দমন-পীড়নের মাত্রা ততই বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কারণে কর্মসূচি পালনে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনেই দলীয় সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হবে। ----- ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়