Friday, December 19

নিভে গেল শত মায়ের আশার প্রদীপ


জাকির উসমান: প্রতিদিনের মতো ওরা পরিপাটি হয়ে ব্যাগ কাঁধে স্কুলে এলো। হাসিমুখে টিচারদের অভিবাদন জানাল। স্কুলের আঙিনা আর ক্লাসরুমগুলো মাতিয়ে রাখল খুনসুটি আর গল্পে। এ আনন্দের ভেতর ওরা জানতেই পারল না ওদের জন্য কী নির্মমতা অপেক্ষা করছে। ব্যাগ কাঁধে এ আসা, এ অভিবাদন, এ খুনসুটি আর গল্প ওদের জীবনের শেষ যাপন_ ওরা বুঝতেই পারল না। এ পৃথিবীর কোনো ক্লেদ, কোনো কদর্যতাই ওরা গায়ে মাখেনি, তবুও সেই ক্লেদ আর কদর্যতার ভেতরেই ওদের সেঁধিয়ে দেয়া হলো চিরকালের মতো। একদল অন্ধকার-মানুষের হিংস্রতার কাছে থেতলে গেল এক বাগান ফুল। ওদের কোনো অপরাধ নেই। পাপ করতে ওরা শেখেইনি এখনও। কিন্তু পাপীর আক্রোশ খালি করে দিয়ে গেল দেড়শ' মমতাময়ী বুক। সে মহাপ্রলয়ে যেন খালি হলো দেড়শ'টি সুন্দর পৃথিবী। ওদের চোখগুলো ছিল স্বপ্নে ভরা। প্রজাপতির ডানার রঙে সাজানো ছিল ওদের স্বপ্নের ভুবন। এক আকাশ রঙিন বেলুন হয়ে প্রতিদিন উড়ত ওরা আকাশের দেশে। আজ সেগুলো শূন্যে মিলিয়ে গেল। আমরা জানলাম না, ওদের কার কয়টা স্বপ্ন ছিল। শুধু দেখলাম, দেড়শ' দুরন্ত কৈশোর থেমে গেছে। এ কৈশোর আর কোলাহল করবে না। গাইবে না গান। মুখর কলরবে মাতাবে না দেড়শ' বাড়ি। শিশুদের ওপর এমন বর্বরতা কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। ধর্মের কোথাও এমন মৃত্যুর অনুমোদন নেই। সমর্থন নেই। কোনো ধর্মই বলেনি, এভাবে ফুলের মতো শিশুদের হত্যা কর। ইসলামে কল্পনাও করা যায় না এ নজিরবিহীন নৃশংসতা। এসব খুনির ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।' (সূরা মায়িদা : ৩২)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) দায় স্বীকার করলেও এ হত্যাযজ্ঞ কারা ঘটিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। আফগানিস্তানের তালেবান এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। ঘটনা নাটকীয়ভাবে মোড় নেয়ায় পৃথিবীজুড়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে যুগের পর যুগ সমস্যা জিইয়ে রেখে সাম্রাজ্যবাদের কালো নখর আবারও থাবা মেলেছে কিনা_ এ প্রশ্নও উচ্চারিত হচ্ছে সশব্দে। আমরা এর নেপথ্যের সত্য জানতে চাই। কঠোরতম বিচার আশা করি। যে বিচার বয়ে আনবে একটি নতুন পৃথিবীর বার্তা। যে সত্য খুলে দেবে সব শান্তিকামী মানুষের চোখ। এখনই জাগার সময় আমাদের। সব হিংস্রতা ও অন্ধত্বের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে। নইলে কালো ও অন্ধ মানুষের থাবা আমাদেরও ঘুম কেড়ে নেবে। বুকের পাঁজর ভেঙে দেবে চিরকালের মতো। তখন আবারও পাপের বিষমাখা তীরে ফুটো হবে আরও এক আকাশ রঙিন বেলুন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়