Wednesday, December 10

বছর পার, গোপীবাগ সিক্স মার্ডার রহস্যের জট খোলেনি


ঢাকা: এক বছরেও জট খোলেনি রাজধানীর পুরান ঢাকার গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের রহস্য। একের পর এক চাঞ্চল্যকর খবরের নিচে চাপা পড়ে আছে পুরো ঘটনাটি। বেশ কয়েকদিন লেখালেখির পর এটি এখন ধামাচাপা পড়ার উপক্রম হয়েছে। রাজধানীর ব্যস্ততম মানুষও প্রায় ভুলতে বসেছে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডটি। দৃশ্যত জনগনের কোন চাপ না থাকায় পুলিশও এই সুযোগে লম্বা ঘুম দিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দেখে শুনে মনে হচ্ছে সাধারণ মানুষও এসব নৃশংসতার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মামলার বাদী নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাবা লুৎফর ও ভাই মনিরসহ ছয় হত্যাকান্ডের পর তাদের কাছে যতটুকু তথ্য ছিল তা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আমরা জানিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের আশায় তদন্ত কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করে চলছি। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি হচ্ছেনা। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার ‘যতদুর সম্ভব চেষ্টা করছি, দেখছি, টেনশন নিয়েন না বলে আশ্বস্ত করা হলেও এক বছরেও কোনো আসামি ধরা না পড়ায় তিনি হতাশ। তারা ২ ভাই ১ বোন ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বর্তমানে থাকেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করছেন বলেও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর থেকে প্রতিটি দিন ভয়ে আর আতঙ্কে কাটছে। তবুও বাবা হত্যান্ডের ন্যায় বিচার দেখব বলে এখনো বেচে আছি। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবু আল খায়ের মাতুব্বর বলেন, মামলায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। কিন্তু গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বাকিদের নাম জানা যাবে। হত্যাকান্ডের মোটিভ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিহত লুৎফর একটি ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচার করতেন। যা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থি । তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে কোনো গোঁড়া উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর কয়েকজন তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, খুনীরা অত্যন্ত সুচতুর ও চালাক। তারা খুনের কোনো ক্লু রেখে যায় নি। পূর্ব পরিচয়ের জের ধরেই এই হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে। কারো না কারো রেফারেন্সেই খুনিরা লুৎফরের বাসায় প্রবেশ করে তাদের হত্যা করে। খুনিরা এতোই চালাক যে তারা ঘটনাস্থল কোনো মোবাইলও নিয়ে যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, খুনিদের শনাক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তথ্যগত সূত্রের ওপর ভিত্তি করেই এগুচ্ছে হত্যার তদন্ত। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ওয়ারী থানার ৬৪/৬ আরকে মিশন রোডের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসায় ছেলে ও মুরিদসহ খুন হন কথিত ‘আধ্যাত্মিক পীর’ ইমাম মাহদীর দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক। ওইদিন কথিত আধ্যাত্মিক পীর লুৎফর রহমান ফারুকের সাথে খুন হন তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, পীরের সেকেন্ড ইন কমান্ড শাহীন, মুরিদ মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম ও রাসেল ভূইয়া। বাসায় আরও পুরুষ ও মেয়ে মানুষ থাকলেও তাদের হত্যা করা হয়নি। কিংবা কোনো মালামাল ডাকাতি করাও হয়নি। খুন করা ছয়জনের তালিকায় লুৎফরের আরেক ছেলে মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল ফারুকেরও নাম ছিল। কিন্তু সে সময় আব্দুল্লাহ বাসায় না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। খুনীরা যাওয়ার সময় বাড়ির সদস্যদের হুমকি যায়, ‘এই শোন, ছয়জনকে মারার অর্ডার ছিল ছয়জনকে মারছি। তোরা যদি পুলিশ কিংবা মিডিয়ার কাছে মুখ খুলিস তাহলে তোদের অবস্থায় ওদের মতো হবে। আধ্যাত্মিক সাধক’ লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ’র দায়ের করা মামলার এজাহার হতে বিষয়টি জানা যায়। নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থানার চরভরুয়া গ্রামে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়