Monday, November 24

লতিফের আগমন নিয়ে সংশয়, তবুও বাড়িতে আলো!


টাঙ্গাইল:পবিত্র হজ ও মহানবীকে (স.) নিয়ে কটূক্তি করায় মন্ত্রিত্ব হারানো ও দল থেকে বহিষ্কার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করছে তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষ। তাঁর ঢাকা আসার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও লতিফ সিদ্দিকীর ঢাকা আসার ছবি কোনো মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি। এমনকি টিভি মিডিয়াতেও তাঁর দেখা মেলেনি। আজ সোমবার আগাম জামিন নিতে তাঁর হাইকোর্টে যাওয়া নিয়েও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন মিডিয়ায়। তবে তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকরা হন্যে হয়ে তাকে খোঁজলেও তার নাগাল পাওয়া যায়নি। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলেই কি লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় ফিরেছেন? লতিফ সিদ্দিকীর ঢাকায় আসা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের লোকজনও। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝেও এ ব্যাপারে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, লতিফ সিদ্দিকীর ঢাকা আসার সংবাদটি ¯্রফে গুজব। তাদের ধারণা, এ ধরনের গুজব সৃষ্টি করে দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাব বিশ্লেষণ করছেন তিনি। মনোভাব ইতিবাচক দেখলে তিনি হয়তোবা দেশে ফিরবেন। এদিকে মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি কালিহাতীর বাসভবনে দীর্ঘদিন পাহারাদার শূন্য থাকলেও সোমবার সন্ধ্যায় বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখা যায়। তবে কে আলো জ্বালিয়েছে তা জানা যায়নি। উল্লেখ্য, পবিত্র হজ, তাবলীগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে। পরে আওয়ামী লীগ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে লতিফ সিদ্দিকীর কালীহাতির বাসভবনে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির তত্ত্বাবধানের জন্য হাসান আলী হাসু নামে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মিডিয়ার বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে বাঁচতে তিনি নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। সোমবার লতিফের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতের বেলায়ও বাড়ির পাহারাদারদের দেখা যায়না। সন্ধ্যার পর বাসায় আলো জ্বালানোর মতো কাউকে লক্ষ্য করা যায় না। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কালিহাতি শহরের সন্নিকটে তার বাড়িতে তালা ঝুলছে। দীর্ঘ সময় সদর দরজায় নাড়া দেয়ার পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পথচারীরা জানালেন, মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যতো দূরের কথা নাইটগার্ড ও কেয়ারটেকারও বাসায় থাকছে না। এদিকে মন্ত্রীর এ অবস্থায় তার কাছের লোকজনও কোনো তথ্য দিতে নারাজ। স্থানীয়রা জানান, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে হাসু নামের একজনকে রাখা হলেও এখন তাকে বাসার দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়না। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলো মাঝি জয়দেব রাজবংশীর কাছে। মন্ত্রী কালিহাতী আসলেই যিনি মন্ত্রীর পছন্দের মাছ বাসায় সরবরাহ করতেন। অথচ তিনিও মুখ খুলতে নারাজ। তিনবার যোগাযোগ করার পর তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মন্ত্রীর বাসার লোকদের কোনো যোগাযোগ নাই। বাসায় নাইটগার্ড ও কেয়ারটেকারও থাকে না। সংবাদ পেলেই আমি আপনাদের জানাবো।’ ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের পাশেই মন্ত্রীর ছেলে অনিক সিদ্দিকী দেড় হাজার বিঘা জমির ওপর গড়া ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিং প্রজেক্ট। প্রতি সপ্তাহে প্রজেক্ট দেখতে হেলিকপ্টারে করে তিনি দু’একবার আসতেন। অথচ গত দুই মাসের মধ্যে তিনি একবারও প্রজেক্ট দেখতে আসেননি। তবে একটি সূত্র জানায়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। এ কারণে আসছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালী সাবেক এই মন্ত্রীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগে মামলায় পড়ে। টাঙ্গাইল আর্টিজেনের পরিচালক থাকার সময় তিনি সুঁতা বিক্রির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। সুঁতা বিক্রির দুর্নীতির কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তার ১৩ বছরের জেল হয়। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী। স্ত্রীর দৌঁড়ঝাঁপের কারণে এইচ এম এরশাদ কারাভোগ থেকে লতিফকে অব্যাহতি দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, বউয়ের কারণে এরশাদ সরকার তাকে বাঁচিয়েছিল। এখন তার পাশে কে দাঁড়াবে। শুনেছি তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এখন পরিবারের সদস্যদের কাউকে বাড়িতে দেখা যায় না। লতিফ সিদ্দিকী দেশে আসবেন কি না তা নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যেও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার মোল্লা জানান, ‘আমার সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকীর কোনো যোগাযোগ নাই। তবে এই আসনে উপনির্বাচনের কানাঘুষায় মন্ত্রীর ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীই ইতিবাচক বা নেতিবাচক কথা বলছে না। এ ব্যাপারে তারা সবাই নিশ্চুপ রয়েছেন।’

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়