Wednesday, October 22

সৃষ্টির বিস্ময় চাঁদ


ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৃষ্টি জগতে আল্লাহর কুদরতের যত বিস্ময় তার মধ্যে চাঁদ অন্যতম। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। আজ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদের জন্ম হয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এটি ২৯ দিন ১২ ঘণ্টায় পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করে। চাঁদের উপরিভাগে রয়েছে অসমতল টিলা, গর্ত, পাহাড়, গভীর পরিখা, প্রশস্ত মাঠ ও আগ্নেয়গিরি। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের যে দিকটি আমাদের দিকে তাতে ৬০ হাজার আগ্নেয়গিরির গর্ত রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির গভীরতা ৫২২ হাজার ৪০০ মিটার। চাঁদে কিছু পর্বত রয়েছে, যা পৃথিবীর চেয়ে উঁচু। পৃথিবীর সমুদ্রস্তর থেকে হিমালয়ের এভারেস্টের উচ্চতা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। সেখানে চাঁদের একটি পাহাড়ের উচ্চতা ৩৬ হাজার ফুট। চাঁদে বায়ু ও পানি নেই। তবে অ্যাপোলো-১৫ এর অভিযাত্রীরা সামান্য পানির অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে সমর্থ হন। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সূর্যের আলো চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রতিবিম্বিত হয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। চাঁদের যেদিকে সূর্যালোক পেঁৗছে না সেদিক অন্ধকারে আচ্ছাদিত। পূর্ণচাঁদ, অর্ধচাঁদ, নতুন চাঁদ ইত্যাদি আকৃতিতে আমরা চাঁদকে দেখি। যদি চাঁদের নিজস্ব আলো থাকত তাহলে সর্বদা আমরা পূর্ণচাঁদ দেখতে পেতাম। চাঁদের মাত্র ৬০ ভাগ পৃথিবীতে দেখা যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'চাঁদের জন্য আমি বিভিন্ন মানজিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে এটি পুরনো খেজুর শাখার অনুরূপ (ধনুকের মতো বাঁকা) হয়ে পড়ে।' (সূরা ইয়াসিন : ৩৯)। আল্লাহ তায়ালা চাঁদ ও সূর্য উভয়ের পরিক্রমণের জন্য বিশেষ সীমা নির্ধারণ করেন, যা মানজিল নামে খ্যাত। চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক অতি গভীর। মানুষ সব সময় চাঁদের রহস্য জানতে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছে। ১৯৬৯ সালে ২০ জুলাই অ্যাপোলো-১১ নভোযানযোগে নিল আর্মস্ট্রং ও বুজ অলড্রিন চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তারা চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২ কিলো ওজনের বিভিন্ন নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। চাঁদের পাথরখন্ডে সিলিকা, এলিউমিনা, লাইম, আয়রন অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়াম, টিটানিয়াম ডায়ক্সাইড ও সোডিয়াম অক্সাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। দূরত্বের দিক বিবেচনা করলে চাঁদ ও পৃথিবী একে অপরের অতি কাছে। তাই মহাকর্ষীয় আকর্ষণজনিত প্রভাবের ফলে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। চাঁদ ভূপৃষ্ঠের জল ও স্থলভাগকে অবিরাম আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণের ফলে ভূপৃষ্ঠের পানি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যহ এক স্থানে ফুলে ওঠে এবং অন্যত্র নেমে যায়। এভাবে প্রত্যেক ১২ ঘণ্টায় সমুদ্রের পানি একবার নিয়মিতভাবে ওঠানামা করে। জোয়ার-ভাটা প্রতি ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরপর হয়। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, বছরের বিভিন্ন সময় আকাশে পূর্ণ রক্তাক্ত চাঁদ (ঋঁষষ নষড়ড়ফ সড়ড়হ) দেখা যায়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে লাল রঙ ধারণ করে। চলতি বছরের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সময় সকাল ৬টা ২৫ মিনিট থেকে ৭টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশে বস্নাড মুন দেখা যায়। চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহ পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে। এরিস্টটল ও প্লিনির মতে পূর্ণচন্দ্র মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। দিবা-রাত্রির ২৪ ঘণ্টা যদি পৃথিবীতে সূর্যের আলো পড়ত অতি তাপমাত্রায় মানুষের বসবাস অসহনীয় হতো। চাঁদের আলোতে রাতের অন্ধকার বিদূরিত হয়ে স্বর্গীয় এক পরিবেশ তৈরি হয়। বাংলাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন গদ্য ও পদ্য সাহিত্যে চাঁদের অপরূপ বর্ণনা বিদ্যমান। সুপ্রাচীনকাল থেকে আকাশে চাঁদের পরিক্রমণ ভাষা, ক্যালেন্ডার ও মিথলজিতে সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছে। জ্যোৎস্না আলোকিত রাতের সি্নগ্ধ পরিবেশে আপনজনের সানি্নধ্য এক মোহনীয় আবেশের জন্ম দেয়। পারস্যের কবি ওমর খৈয়াম বলেন, 'সাকি সুরা ঢালো কাল নিশিথের ভরসা কই চাঁদনি জাগিবে যুগ যুগ ধরিয়া আমরা তো রইব না সই।' বাংলায় চাঁদের প্রতিশব্দ রয়েছে ২০টি। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ ও হিজরি সন চন্দ্রনির্ভর। নবচন্দ্র ও তারকা শত শত বছর ধরে অটোমান তুর্কিদের জাতীয় প্রতীক। চাঁদের সঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর একটি অলৌকিক ঘটনা জড়িত। তাঁর আঙুলের ইশারায় চাঁদ একবার দ্বিখন্ডিত হয়। এটা আল্লাহ তায়ালার কুদরত ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মুজেজা। পবিত্র কোরআনের সূরা আল কামার ও বিভিন্ন হাদিসে ঘটনার বিবরণ বিদ্যমান। লেখক : অধ্যাপক, ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়