Thursday, September 18

নবী (সা.) এর সময় চিকিৎসা পদ্ধতি


আলম শামস মহানবী (সা.) এর যুগে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূচনাও হয়নি। এখনকার শত শত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা অভিজ্ঞ ডাক্তার কিছুই ছিল না সে সময়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ব্যাপারে নানা দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সূরা রাদের ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, 'জেনে রাখুন কেবল আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমেই আত্মার প্রশান্তি লাভ করা যায়।' পবিত্র কোরআন মানসিক ও আত্মিক সমস্যার সমাধান সূত্রের পাশাপাশি দেহের নানা রোগ নিরাময়েরও পথ বাতলে দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম রোগ প্রতিরোধের ওপরই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসে এমনসব দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। যেমন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ক্ষুধার্ত না হলে খেতে বসো না এবং পেট পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই খাওয়া শেষ করো। রাসূল (সা.) ও ইমামরা এমনসব খাদ্যদ্রব্যের নাম উল্লেখ করেছেন, যা ব্যথা উপশমসহ নানা রোগ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখে। একই সঙ্গে কোরআনে অনেক খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে। মানুষের মনমানসিকতার ওপর খাদ্যের প্রভাবের কথাও কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সূরা বাকারার ১৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মানব জাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্য আছে, তা থেকে তোমরা খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। এসব খাদ্য ও পানীয় মানুষের শরীর ও মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে মদ, শূকরের মাংস ও মৃতপ্রাণীর মাংস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কোরআনে রোগ নিরাময়কারী কিছু খাদ্য এবং ওষুধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের একটি সূরার নাম আন নাহল বা মৌমাছি। ফুলের মধু আহরণ ও চাক তৈরিসহ মৌমাছির বিভিন্ন কর্মপ্রণালি সম্পর্কে বর্ণনা তুলে ধরে সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'ওদের উদর থেকে বিবিধ বর্ণবিশিষ্ট পানীয় নির্গত হয়ে থাকে, এতে মানুষের জন্য ব্যাধির প্রতিকার আছে।' রাসূল (সা.) বলেছেন, 'রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে মধুর মতো এত বেশি কার্যকর আর কোনো উপাদান নেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মধুর নানা বিশেষত্ব রয়েছে এবং তা রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর।' সূরা নাহলে আল্লাহ বলেছেন, 'তোমার প্রভুর নির্দেশে মৌমাছিরা বিভিন্ন বাগবাগিচা, ফুল, ফল ইত্যাদি থেকে মধু আহরণ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে এ মৌমাছি পরাগায়নও ঘটায়।' আল্লাহ তায়ালা মধু সম্পর্কে বলেছেন, 'ফিহি শিফাউ লিন্নাছ।' অর্থাৎ এ রোগের শেফাদানকারী। বোখারি শরিফের হাদিস, 'কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের ওষুধ।' প্রিয় নবী (সা.) প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ খাঁটি মধুর শরবত বানিয়ে খেতেন। এটা রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে দেহ-মনকে চাঙ্গা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) মধুকে মহৌষধ বলেছেন। এটা যেমন বলকারক, সুস্বাদু ও উত্তম উপাদেয় খাদ্যনির্যাস, তেমনি রোগ নিরাময়ের উপাদানও বটে। করতে পারে। মহানবী (সা.) বলেছেন, রোজা রাখুন তাহলে সুস্থ থাকবেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর নীতিশাস্ত্র। পবিত্র কোরআনের অনেকগুলো আয়াতে বলা হয়েছে, 'কোরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য শেফা ও হেদায়েতের উৎস।' আলোচ্য আয়াতগুলোতে উলি্লখিত 'শেফা' শব্দের তাফসিরে শাহ আবদুল হক মোহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) লিখেছেন, 'কোরআন শরিফের চেয়ে ব্যাপক উপকারী এবং মানবজাতির রোগব্যাধি নিরাময়কারী আর কিছু নাজিল হয়নি।' যেমন বলা হয়েছে, 'আর আমি কোরআনে এমন কিছু আয়াত নাজিল করেছি, যা মোমিনদের জন্য শেফা এবং রহমতস্বরূপ।' (বনি ইসরাইল : ৮২)। এতদসঙ্গে পবিত্র কোরআনের আয়াতে শেফা নামে পরিচিত আয়াতগুলোর কথা উল্লেখ করা যায়। আয়াতগুলো হচ্ছে_ ১. সূরা তওবার ১৪ নম্বর আয়াত, ২. সূরা ইউনূসের ৫৭ নম্বর আয়াত, ৩. সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াত, ৪. সূরা বনি ইসরাইলের ৮২ নম্বর আয়াত, ৫. সূরা আশ শুয়ারার ৮৫ নম্বর আয়াত এবং ৬. সূরা হা-মিম সেজদার ৪৪ নম্বর আয়াত। ওই আয়াতগুলোতে কোরআনে মোমিনদের জন্য 'শেফা', 'রহমত' প্রভৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে। ইমাম বায়হাকি (রহ.) 'শেফা' অর্থ আত্মা এবং দেহ উভয়ের শেফা বা নিরাময় বলেছেন। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে যেমন আত্মার যাবতীয় রোগ এবং মন্দ প্রবণতার চিকিৎসা রয়েছে, তেমনি দেহের যাবতীয় রোগব্যাধিরও চিকিৎসা রয়েছে। কোরআনের আয়াত দ্বারা রোগব্যাধির চিকিৎসা হতে পারে এ কথা অনুধাবন করার জন্য শেষ দুটি সূরার তাফসির ও শানে নুজুল পাঠ করাই যথেষ্ট। উল্লেখ্য যে, এ দুটি সূরা হজরত নবি করিম (সা.) কে জাদু করার পরিপ্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ জাদুর প্রতিকার করার উদ্দেশে সূরা দুটি নাজিল করেছিলেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) এর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। একবার সাহাবায়ে কেরাম কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদের খানাপিনা শেষ হয়ে যায় ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। তারা একটি অমুসলিম গ্রাম অতিক্রম করছিল। তারা ওই গ্রামে গিয়ে বলল, আমরা মুসাফির আমাদের খাদ্যদ্রব্য শেষ হয়ে গেছে। তোমাদের কাছে খাদ্যদ্রব্য থাকলে আমাদের দান করো। তারা খাদ্য দিতে অস্বীকার করল। সাহাবায়ে কেরাম কাফেলার বাইরে তাঁবু গেড়ে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আল্লাহর কুদরত, ওই গ্রামের সরদারকে সাপে কাটল, গ্রামবাসী সব ধরনের চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়ে সাহাবাদের তাঁবুর কাছে এসে জানতে চাইল, আপনাদের মধ্যে কেউ সাপের ঝারা জানেন কি? আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বললেন, আমি ঝেড়ে দেব, কিন্তু তোমরা তো কৃপণ লোক, মুসাফির কাফেলার খাদ্যের ব্যবস্থা করনি। তারা বলল, আমরা তোমাদের বকরির পাল দিয়ে দেব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূরা ফাতেহা পড়ে পড়ে দম দিলেন, আল্লাহর কুদরতে বিষ নেমে গেল। তারা বেজায় খুশি হয়ে বকরির পাল দিয়ে দিল। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এভাবে আমরা যে বকরি লাভ করেছি আমরা কি তা রাখব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের জন্য তা রাখা বৈধ; কিন্তু তুমি কীভাবে খোঁজ পেলে যে, সাপে কাটার চিকিৎসা এটা? আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বললেন, আমি চিন্তা করলাম বেহুদা কথার মধ্যে যদি ক্ষমতা থাকে আল্লাহর কালামে অবশ্যই ক্ষমতা থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এ আমলে খুশি হলেন, তাকে সমর্থন করলেন এবং বকরির পাল রাখার অনুমতি দিলেন। লেখক : সাংবাদিক

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়