বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে এক যুবতীর। সম্প্রতি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ
উপজেলার বেড়িগাঁও গ্রামের এই যুবতী ঘরের ভেতর ঝাড়ু দেয়ার সময় ঈঁদুরের গর্তে
হাত দিলে গর্তে থাকা একটি বিষধর সাপ তাকে দংশন করে। তাকে পরে উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সিলেট
ওসমানী হাসপাতালে তাকে স্থানামত্মরিক করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে যুবতীর লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে ঐ যুবতী ‘জীবিত
আছে’ বলে ঝাড়ফুঁক শুরম্ন করে কয়েকজন ‘ওঝা’। পরে অবশ্য তারা হাল ছেড়ে দেয়।
এক দিন ঝাড়ফুঁক করার পর যুবতীকে ‘মৃত’ বলেই ঘোষণা করে তারা। খবরটি প্রকাশিত
হয় একটি সহযোগী দৈনিকে। এমন ঘটনা ঘটছে প্রায় সময়ই। বিশেষ করে এমনি বর্ষা
মওসুমে সর্পদংশনে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। প্রতি বছরই সর্পদংশনে সাধারণ
মানুষের মৃত্যু হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। শহরেও দুয়েকটা ঘটনা ঘটছে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে-দেশে বছরে প্রতি এক লাখ মানুষের
মধ্যে সাপের কামড়ের শিকার হয় গড়ে ৬শ’ ২৩ জন। এই হিসেবে দেশে প্রতি বছর
প্রায় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯শ’ ১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়।এর মধ্যে মারা যায় ৬
হাজারের বেশি। জানা গেছে , সর্পদংশনের পর কমপÿÿ ৮৬ ভাগ মানুষ চিকিৎসার
জন্য ওঝার কাছে যায়। এছাড়া, গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে যায় ৬ ভাগ মানুষ।
হাসপাতাল এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৬ ভাগ মানুষ। দেশে সাপে
কামড়ানোর ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে। সেখানে বছরে প্রতি এক লাখের
মধ্যে দুই হাজার ৭২ জন সর্পদংশনের শিকার হয়। সাপে কামড়ের ঘটনা সবচেয়ে কম
ঘটে সিলেট বিভাগে। এখানে প্রতি এক লাখে তিন শ’ ২১ জন সর্পদংশনের শিকার হয়।
বেদে ও বেদেনীদের নিয়ে গান, গল্প, উপন্যাস রচিত হয়েছে প্রচুর।
বেদে-বেদেনীদের সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য
এখনও চোখে পড়ে। তারা সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এরা পোষ
মানিয়েছে হিংস্র প্রাণীকে। সাপ সচরাচর দংশন করে না তার প্রভুকে। তবে কদাচিৎ
সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। বছর কয়েক আগে দেশে প্রথমবারের
মতো প্রতিষ্ঠিত সাপের খামারের মালিকের মৃত্যু হয়েছে তারই খামারের সাপের
কামড়ে। আমাদের দেশে আছে অসংখ্য প্রজাতির সাপ। গবেষকদের মতে, ৬০ প্রজাতির
সাপ পাওয়া যায় দেশে। এর মধ্যে ২২ প্রজাতির সাপ হচ্ছে বিষাক্ত। বিশেষ করে
গোখরা, দুমুখো সাপ ও গাছে থাকা সাপসহ কয়েকটি প্রজাতির সাপ বিষাক্ত। এগুলোর
কামড়ে মানুষের মৃত্যু ঘটে। প্রকৃতপÿÿ সাপে কামড়ানো ৯০ শতাংশ রোগীই বেঁচে
যায়। তবে বিষধর সাপে কামড়ালে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে উন্নত চিকিৎসা দেয়া
গেলে রোগী বেঁচে যায়। প্রকৃতপÿÿ সচেতনতার অভাবে সাপে কাটা অনেক রোগীই
উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না।
আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় বিরাজ করছে কুসংস্কার , কুপ্রথা। এদেশে সাপে
কাটা রোগীদের চিকিৎসার প্রসঙ্গ এলেই ওঝা কবিরাজদের কথা এসে যায়। ওঝাদের
সাপে কাটা রোগীর ‘বিষ ঝারার’ দৃশ্য গ্রামাঞ্চলে খুবই পরিচিত। আর বেশিরভাগ
মানুষই সাপে কাটা রোগীকে নিয়ে যায় প্রথমে ওঝার কাছে। অথচ ওঝাদের দ্বারা
কোনো রোগীর বিষমুক্ত হওয়ার নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। অপর দিকে, সাপে
কামড়ানো রোধ ও প্রতিকারে সরকারের কোনো গুরম্নত্বপূর্ণ কর্মসূচি নেই। খুব
কমসংখ্যক চিকিৎসক এদেশে সাপে কামড়ানো নিয়ে কাজ করছেন। চিকিৎসার ওষুধও
যথেষ্ট নয় ।সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে সাপে কাটার ঘটনা ঘটে গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে
বেশি; কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে এর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এই ব্যাপারটিকে
গুরম্নত্ব দিতে হবে। সাপে কাটার চিকিৎসা যাতে উপজেলাসহ গ্রামাঞ্চলে পাওয়া
যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া, সাপে কাটা রোগীদের ওঝা কবিরাজের
শরণাপন্ন না হয়ে উন্নত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে
জনসাধারণকে। এ ব্যাপারে ওঝাদেরও প্রশিÿণ দিয়ে গড়ে তোলা যায় কি-না সেঠাও
ভেবে দেখা দরকার।
লেখাটি দৈনিক সিলেটের ডাকের সম্পাদকীয় পাতা থেকে নেওয়া।

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়