এলডিপির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, জোটগত বিভিন্ন কর্মসূচিতে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসহ ব্যানার টানানো, পোস্টার ছাপানোতে প্রকাশ্যে বাধা দেন অলি আহমেদ। এনিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কোণঠাসাও করে রাখেন তিনি। গত ২৬ অক্টোবর এলডিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকেই ব্যানারও তৈরি ছিল। যেখানে খালেদা জিয়ার ছবি থাকায় সেটি বাতিল করে তাৎক্ষণিক ঢাকা মহানগর এলডিপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাকে দিয়ে নিজের ছবিযুক্ত ব্যানার ঝুলিয়ে দেন অলি আহমেদ। বিষয়টি তখন আঁচ করতে পেরেছিলেন মির্জা ফখরুল। এছাড়া গত ৩০ মে মৃত্যুবার্ষিকীতে এবং ১৯ জানুয়ারি জন্মবার্ষিকীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এলডিপি নেতারা যাওয়ার উদ্যোগ নিলেও অলি আহমেদের বিরোধিতার মুখে তা আর হয়ে উঠেনি।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বিএনপির সঙ্গে জোটে গেলেও মানসিকভাবে এখনও জিয়া পরিবারের বিরোধিতা থেকে সরে আসতে পারেননি কর্নেল অলি (অব.)। যে কারণে গত রমজান মাসে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা কামনা করে এলডিপির দোয়া মাহফিল নিয়েও নিজের ক্ষোভের কথা ঘনিষ্ঠদের কাছে বলেছেন অলি আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি দলের চেয়ারম্যান। দোয়া করলে আমার জন্য করা যায়। কিন্তু তারেক রহমানের মতো একজন দুর্নীতিবাজের জন্য দোয়ার আয়োজন মেনে নেয়ার মতো না।’ ওই ঘটনার পর এলডিপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা অলি আহমেদের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলডিপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটে গেলেও বেগম জিয়া, তারেক রহমানকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না অলি আহমেদ। এমনকি জোটগত কর্মসূচিতেও বিএনপি চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি দেখান তিনি। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ২০১১ সালে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার লংমার্চের আগে কুমিল্লার চান্দিনা এলাকায় এক জনসভা মঞ্চে জিয়াউর রহমান, বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি থাকায় দ্রুত বক্তৃতা দিয়ে ওই জায়গা ছেড়ে যান তিনি। যা তখন জোট নেতারা ভালভাবে নেননি।
এলডিপির ওই নেতা বলেন, অলি আহমেদের এমন জিয়া পরিবার বিদ্বেষী মনোভাব বিএনপি নেতারা ভাল চোখে দেখছেন না। তার ওপর ইতিপূর্বে তিনি বিএনপিতে থাকা অবস্থায় তারেক রহমান সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে জড়িয়েও বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। এসব কারণে আগে থেকেই বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের অনেকে তাকে ভাল চোখে দেখেন না। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি বিরোধী তার এ অবস্থান ভবিষ্যতে জোটগত সম্পর্ক অটুট রাখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এর আগে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকতে অলি আহমেদ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘অনেকেই বলে থাকেন অমুক ভালো-ছেলে খারাপ। আমি বলি দুটোই বদমাশ। মা-বাবা ভালো হলে ছেলেমেয়েও ভালো হওয়ার কথা।’ তার এ বক্তব্যে ওই সময় বিএনপির ভেতরে-বাইরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। যদিও পরবর্তীতে তিনি এ কথা বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেননি বলে দাবি করেছিলেন। এছাড়া তারেক রহমানকে ‘অর্বাচীন’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন-‘চোরের মার বড় গলা।’
বিএনপিতে থেকে দলের হাইকমান্ড ও তাঁর পরিবারের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে কথা বলাকে ভালভাবে নেয়নি দলটি নেতাকর্মীরা। পরে তোপের মুখে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে কর্নেল অলি আহমেদ (অব.) গড়ে তোলেন এলডিপি। কিন্তু শেষতক তাতেও ভাঙন লাগে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্প ধারায় ফিরে গেলে এলডিপিতে একা হয়ে পড়েন অলি।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অলি আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।-ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
সর্বশেষ সংবাদ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়