Thursday, August 22

গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে নির্যাতন ও যৌন হয়রানি


ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া অনেক নারী শ্রমিক বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন। এদের একটি বড় অংশই যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

সম্প্রতি কাতার থেকে এমনই দু”জন দেশে ফিরে এসেছেন শরীরে নির্যাতনের নানা ক্ষতচিহ্ন নিয়ে। তারা বলছেন, দেশটিতে গৃহকর্মীর দায়িত্ব পালনের সময় এবং পরে রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তাদের হাতে তারা নির্যাতিত হয়েছেন।

বেসরকারি একটি সংস্থার অনুরোধে এ বিষয়ে আজ থেকে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখা সিআইডি।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দুদিন আগে কাতার থেকে ফেরা ফরিদপুরের কুলসুম আক্তার বলছিলেন, দেড় মাস আগে গার্মেন্টসে কাজের কথা বলে তাকে পাঠানো হলেও তার কাজ হয় গৃহকর্মী হিসেবে।

কিন্তু মালিকের বাড়িতে অন্যান্য পুরুষ সদস্যের অশোভন আচরণের কারণে টাকা পয়সা খরচ করে কাতার যাওয়ার দেড় মাসের মাথায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি।

তিনি বলেন, “মালিকের শ্যালক হাত ধরে টানাটানি করে এবং আমি একটা থাপ্পড় দেই। এছাড়া মালিকের পাঁচজন ছেলে, রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে দিতো না তারা। তারা বারবার এসে বিরক্ত করে। এক দুই ঘণ্টাও ঠিকমত ঘুমাতে পারি না।”

শুধু গৃহকর্তার বাড়িতেই নয়, ফিরে আসার অপেক্ষায় আটদিন এজেন্সি অফিসে থাকাকালেও প্রতিদিনই তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে জানান এই নারী।

তিনি বলেন, “এজেন্সি অফিসাররা সেখানে ব্যাচেলরদের মতোই থাকে, তারা বেশি নির্যাতন করে। এমনকি অফিসের নারী কর্মীদের দ্বারাও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়।”

অসুস্থতার কারণে স্বামী উপার্জনে অক্ষম হওয়ায় তারই মতো আরেকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আছিয়া বেগম পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে কাতারে যান ঈদের কয়েক দিন আগে। এর আগে ওমানে কাজ করেছেন তিনি। নির্যাতনের চিহ্ন তার শরীরেও।

মারধরের কারণে তার ডানপাশের চোখটিতে জমাট হয়ে রয়েছে রক্তের দাগ। যাওয়ার পর থেকেই তাকে স্থানীয় এজেন্সি অফিসে রেখে নির্যাতন চালানো হয় বলে তিনি জানান।

নিজেদের উপার্জিত টাকা পয়সাও ফেরত আনতে পারেন নি বলে জানান দুজন।

এই সমস্ত অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী নারীরা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিষয়টিতে সেখানকার দূতাবাস অফিসগুলোর কার্যক্রম অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় না বলে তিনি জানান।

“ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের দেশের মেয়েরা যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। প্লেস অব অকারেন্সটা এখানে একটা বিষয়। সেখানে সেই দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা যদি সেরকম না থাকে আর এম্ব্যাসি যদি ভূমিকা না নেয়, সেখানে যদি তাদের অ্যাকসেস না থাকে, সেগুলো মনিটর করা না হয় তাহলে এগুলো চলতেই তাকবে। এগুলো কিন্তু আমরা অনেকবার বলেছি। তারপরও সেভাবে কিছুই করা হচ্ছে না,” সালমা আলী বলেন।

তিনি বলেন কাতারে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। কিন্ত তারপরও তারা বলবে আমরা তো কিছু জানিনা।

সিআইডির কর্মকর্তারা এখন এই দুই মহিলার বিষয়টি তদন্ত করছেন।

সালমা আলী বলেন বেশ কিছু দেশ এই ধরনের নির্যাতনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের সরকারেরও বিষয়টিতে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে এসব নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে এবং তাদের কর্মস্থলে সুরক্ষার ব্যপারে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কতটা যত্নবান?

এ বিষয়ে বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, “সরকার অনুমোদিত কিছু এজেন্সি মূলত নারীদের বিদেশে কাজের জন্য পাঠাচ্ছে যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই এবং দুই প্রান্তে বিষয়টি সঠিকভাবে তদারকিও করা হচ্ছে না। আমাদের মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট কিছু রিক্রুটিং এজেন্সিকে এই নারী শ্রমিকদের পাঠানোর কাজ দিয়েছে কিছু অতিরিক্ত সিক্যুরিটি মানি নিয়ে। দুই দিকেই যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে এই সমস্যা হতো না।”

তবে এধরনের গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারা যথেষ্ট তৎপর বলে দাবি করেন সরকারের জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক আব্দুল লতিফ খান ।

তিনি বলেন, কর্মীদের পাঠানোর আগে পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কিছু কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়। যে দেশে যাচ্ছে সেদেশে দেখোশোনার দায়িত্ব লেবার অ্যাটাশের বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ””তারা শ্রমিকদের নির্যাতনের খবর পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। সেখানে হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে এইসব নারীকর্মীরা তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে পৌছাতেও পারেন না।”

সরকার বর্তমানে হংকং থাইল্যান্ডসহ নতুন যেসব দেশে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা তাতে বেশ আগ্রহও দেখাচ্ছেন।

এদিকে ফিরে আসা এই নারীরা জানান, তাদের মতো আরো কয়েকজনকে তারা দেখেছেন এজিন্স অফিসে নির্যাতনের শিকার হতে এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সূত্র: বিবিসি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়