ঢাকা: জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যরা বিনাশুল্কে গাড়ি এনে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। গত ছয়টি সংসদের সংসদ সদস্যদের নামে আনা গাড়িগুলোর ৮০ শতাংশই বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংসদেও এমপিদের গাড়ি বিক্রি বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছে। -খাসখবর
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অত্যাধুনিক বুলেট প্রুফ গাড়িসহ গত ছয়টি সংসদের এমপি’রা আমদানি করেছেন ৬০০ কোটি টাকার ১৩শ’রও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি। আর এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার ওপর। বিনাশুল্কে আনা এসব গাড়ির ৮০ শতাংশই ‘হাতবদল’ হয়ে গেছে। দেশে আমদানিকৃত প্রতিটি গাড়ি গড়ে প্রায় ৫০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকায় হাতবদল হয়। কিনে নেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। আমদানির জন্য সংসদ সদস্যদের পেছনে টাকাও ঢালেন তারা।
সংসদ সদস্যরা বিনাশুল্কে বিলাসবহুল গাড়ি আনলেও অনেকেই তা ব্যবহার করেন না। নানা রকম বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বিক্রি করে দেন। বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির শুরু থেকেই এ অবস্থা চলছে। আগে এ নিয়ে সামান্য রাখ-ঢাক থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য। অথচ এমপিদের আমদানি করা ৪০০০ সিসি গাড়ির ওপর রাজস্ব পড়ে ৮৪১ শতাংশ। আর ৩০০০ সিসি গাড়ির রাজস্ব ৫৫০ শতাংশ। অর্থাৎ এমপি ছাড়া অন্য কেউ এ ক্যাপাসিটির গাড়ি আনতে হলে এ হারে রাজস্ব গুনতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের এমপিরা সরকারি নিয়মে ব্যবহার করেন ১৩০০ সিসির গাড়ি। সেখানে বাংলাদেশের এমপিরা গড়ে ব্যবহার করছেন ৩০০০ সিসি থেকে সাড়ে ৫ হাজার সিসির বিলাসবহুল গাড়ি।
এমপিদের বিনাশুল্কে আনা গাড়ি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা কিনে নেন। চার বছর গাড়ির কাগজপত্র এমপির নামেই থাকে। বেশিরভাগ এমপিই চড়েন তুলনামূলক কম দামের গাড়িতে। নতুন এমপিরা শপথের পরপরই প্রথম দফা এবং পুরনো এমপিরা ৮ বছর পর দ্বিতীয় দফা শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার সুযোগ পান। এখন নিয়মনীতি এমন হয়ে গেছে, এমপি হলেই নতুন গাড়ি, তা যতবারই হোক না কেন। এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ির প্রতি সবসময় চোখ থাকে বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির। গাড়ির ডিলাররাও তক্কে তক্কে থাকেন। কেউ নতুন এমপি হলেই ছুটে যান তার কাছে। শুরু হয় প্রতিযোগিতা, কার আগে কে অফার দেবেন, কে কত টাকা বাড়তি দেবেন এ নিয়ে চলে দরকষাকষি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যতবার এমপি ততবারই মিলছে এখন নতুন গাড়ির সুবিধা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দফায় দফায় এমপি হওয়ার সুবাদে শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এ মজার সুবিধা ভোগ করে চলেছেন অনেকে। প্রথমবার এমপি হয়ে শুল্কমুক্ত গাড়ির আমদানি দু’অংকের লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। পরের বার তা কোটিতে ছাড়িয়ে যায়। চলমান সংসদে প্রথমবার এমপি হয়েই ৫ কোটি টাকা দামের গাড়ি এনে বাজিমাত করেছেন দু’এমপি। এরা হলেন নেত্রকোনার এমপি মোশতাক আহমেদ রুহি এবং রাজশাহীর এমপি শাহরিয়ার আলম। দু’জনই এনেছেন ‘ব্র্র্যান্ড নিউ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার’। গাজীপুরের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি দ্বিতীয়বারে এনেছেন ৫ কোটি টাকা দামের গাড়ি। চলমান সংসদের সদস্য আবদুল মমিন তালুকদার নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য হলফনামায় ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় দেখান। অথচ তিনিই আমদানি করেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দামের গাড়ি! নওগাঁর এমপি ইসরাফিল আলমের আয় বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো, অথচ তিনি এনেছেন ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা দামের গাড়ি! ময়মনসিংহের এমপি প্রমোদ মানকিন সর্বোচ্চ তিনবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেছেন। গতবার তার আনা গাড়ির দাম এক কোটি টাকার কাছাকাছি হলেও বর্তমান সংসদে থেকে তিনি এনেছেন সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের গাড়ি। শুধু প্রমোদ মানকিন নয়, তিনবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার তালিকায় চার প্রভাবশালী এমপি হলেন বিএনপি নেতা এমকে আনোয়ার, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক। চলমান সংসদে থাকা এমপিদের মধ্যে দু’বার শুল্কমুক্ত গাড়ি এনেছেন বগুড়ার এমপি আবদুল মুমিন তালুকদার, টাঙ্গাইলের এমপি খোন্দকার আসাদুজ্জামান, ঝিনাইদহের এমপি আবদুল হাই ও গাজীপুরের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী। এছাড়া সপ্তম ও অষ্টম সংসদের ১০৩ এমপি দু’বার করে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেছেন। এভাবে গত ছয়টি সংসদের সদস্যরা ৬০০ কোটি টাকা মূল্যে ১৩শ’রও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন।
সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কসহ যাবতীয় করমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারিকৃত এক সার্কুলারে এমপিদের শুল্ক ও যাবতীয় করমুক্ত গাড়ি আমদানির দ্বার খুলে দেয়া হয়। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ (১৫ ফেব্রুয়ারির) ও সপ্তম সংসদ এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এমপিরা একটি করে জিপ বা কার শুল্ক ও যাবতীয় করমুক্তভাবে আমদানি করেছেন। তবে ওই সার্কুলারে মাত্র একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির বিধান থাকায় একাধিকবার নির্বাচিতরা নতুন করে আমদানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট এ সার্কুলার সংশোধন করা হয়। সংশোধিত সার্কুলার অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য একাধিকবার নির্বাচিত হলে প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে ৮ বছর পর কিংবা তার পরে যে কোনো সময় সংসদ সদস্য থাকাকালীন তিনি আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কসহ যাবতীয় করমুক্তভাবে আরও একটি জিপ বা কার আমদানি করতে পারবেন। এ সুবিধা লাভের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে স্পিকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সার্কুলার অনুযায়ী, আমদানিকৃত জিপ বা কারটি সংসদ সদস্যপদে বহাল থাকাকালীন বা আমদানির পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত হস্তান্তর করা যাবে না। এ সময় কেউ গাড়িটি হস্তান্তর করতে চাইলে মওকুফকৃত যাবতীয় শুল্ক ও কর হস্তান্তরের আগেই সংশ্লিষ্ট কালেক্টরের কাছে পরিশোধ করতে হবে। পরে গাড়ি হস্তান্তরের সময় ৫ বছর করা হয়। সব মিলে এখন বার বার নির্বাচিত হয়ে একজন সংসদ সদস্য প্রতি বারই আনছেন শুল্কমুক্ত গাড়ি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সাবেক বিএনপি জোট সরকারের ব্যবসায়ী মন্ত্রীরা পরিকল্পিতভাবে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির নীতিমালা সংশোধনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের সাবেক এক মন্ত্রী গাড়ি আমদানি এবং লাভের ব্যাপারে নিজের ব্যবসায়িক চিন্তাকে বিএনপির তরুণ ব্যবসায়ীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সরকার ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও এর সুযোগ নিয়েছেন বিগত বিএনপি জোট সরকার আমলের সংসদ সদস্যরা। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট সংসদ সদস্যরা নিজেদের স্বার্থে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করান। সংসদ সদস্যদের সুবিধার্থে দেশে সাধারণের জন্য ১৫০০ সিসির নিচে গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময় গাড়ি আমদানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ করলেও তা ধোপে টেকেনি। ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেয়া হয় গাড়ির ক্যাপাসিটি। প্রজ্ঞাপন ২৬৬-তে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্যরা ১৬৫০ সিসি পর্যন্ত কার এবং ৩০০০ সিসি পর্যন্ত জিপ আনতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ওই সময় থেকেই দেশের গাড়ি বাজার চলে যায় সংসদ সদস্য নামধারী ওই ব্যবসায়ীদের কাছে। ফায়দা লুটতে ব্যবসায়ী এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানিতে ‘গাড়ির ক্যাপাসিটি কত সিসি হবে’ তা উল্লেখ করেন না। কারণ গাড়ির ক্যাপাসিটি যত বেশি, দামও ততই বেশি। বেশি দামি গাড়ি দেশে ঢুকছে স্রোতের মতো। পরে ৩০০০ সিসির ঊর্ধ্বে উঠে ৫০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আসতে থাকে। আর এ খাতে সরকার হারাতে থাকে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।
শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি শুরু হওয়ার পরপরই দেখা যায়, কনটেইনারে করে দেশে আসছে হরেক রকম ও ডিজাইনের বিলাসবহুল বিভিন্ন গাড়ি। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করে ঢাকার কমলাপুরের আইসিডিতে খালাস করা হয়। বিলাসবহুল ওই গাড়িগুলো অতি গোপনে আমদানি হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব আয়োজন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রভাবশালী সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না তারা। এসব গাড়ি কীভাবে দেশে আসছে, টাকার উৎস কোথায় এমনতর বিভিন্ন প্রশ্ন থাকলেও অদ্যাবধি নীরব ভূমিকাই পালন করে আসছে এনবিআর। চুপ করে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অত্যাধুনিক বুলেট প্রুফ গাড়িসহ গত ছয়টি সংসদের এমপি’রা আমদানি করেছেন ৬০০ কোটি টাকার ১৩শ’রও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি। আর এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার ওপর। বিনাশুল্কে আনা এসব গাড়ির ৮০ শতাংশই ‘হাতবদল’ হয়ে গেছে। দেশে আমদানিকৃত প্রতিটি গাড়ি গড়ে প্রায় ৫০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকায় হাতবদল হয়। কিনে নেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। আমদানির জন্য সংসদ সদস্যদের পেছনে টাকাও ঢালেন তারা।
সংসদ সদস্যরা বিনাশুল্কে বিলাসবহুল গাড়ি আনলেও অনেকেই তা ব্যবহার করেন না। নানা রকম বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বিক্রি করে দেন। বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির শুরু থেকেই এ অবস্থা চলছে। আগে এ নিয়ে সামান্য রাখ-ঢাক থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য। অথচ এমপিদের আমদানি করা ৪০০০ সিসি গাড়ির ওপর রাজস্ব পড়ে ৮৪১ শতাংশ। আর ৩০০০ সিসি গাড়ির রাজস্ব ৫৫০ শতাংশ। অর্থাৎ এমপি ছাড়া অন্য কেউ এ ক্যাপাসিটির গাড়ি আনতে হলে এ হারে রাজস্ব গুনতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের এমপিরা সরকারি নিয়মে ব্যবহার করেন ১৩০০ সিসির গাড়ি। সেখানে বাংলাদেশের এমপিরা গড়ে ব্যবহার করছেন ৩০০০ সিসি থেকে সাড়ে ৫ হাজার সিসির বিলাসবহুল গাড়ি।
এমপিদের বিনাশুল্কে আনা গাড়ি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা কিনে নেন। চার বছর গাড়ির কাগজপত্র এমপির নামেই থাকে। বেশিরভাগ এমপিই চড়েন তুলনামূলক কম দামের গাড়িতে। নতুন এমপিরা শপথের পরপরই প্রথম দফা এবং পুরনো এমপিরা ৮ বছর পর দ্বিতীয় দফা শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার সুযোগ পান। এখন নিয়মনীতি এমন হয়ে গেছে, এমপি হলেই নতুন গাড়ি, তা যতবারই হোক না কেন। এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ির প্রতি সবসময় চোখ থাকে বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির। গাড়ির ডিলাররাও তক্কে তক্কে থাকেন। কেউ নতুন এমপি হলেই ছুটে যান তার কাছে। শুরু হয় প্রতিযোগিতা, কার আগে কে অফার দেবেন, কে কত টাকা বাড়তি দেবেন এ নিয়ে চলে দরকষাকষি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যতবার এমপি ততবারই মিলছে এখন নতুন গাড়ির সুবিধা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দফায় দফায় এমপি হওয়ার সুবাদে শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এ মজার সুবিধা ভোগ করে চলেছেন অনেকে। প্রথমবার এমপি হয়ে শুল্কমুক্ত গাড়ির আমদানি দু’অংকের লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। পরের বার তা কোটিতে ছাড়িয়ে যায়। চলমান সংসদে প্রথমবার এমপি হয়েই ৫ কোটি টাকা দামের গাড়ি এনে বাজিমাত করেছেন দু’এমপি। এরা হলেন নেত্রকোনার এমপি মোশতাক আহমেদ রুহি এবং রাজশাহীর এমপি শাহরিয়ার আলম। দু’জনই এনেছেন ‘ব্র্র্যান্ড নিউ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার’। গাজীপুরের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি দ্বিতীয়বারে এনেছেন ৫ কোটি টাকা দামের গাড়ি। চলমান সংসদের সদস্য আবদুল মমিন তালুকদার নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য হলফনামায় ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় দেখান। অথচ তিনিই আমদানি করেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দামের গাড়ি! নওগাঁর এমপি ইসরাফিল আলমের আয় বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো, অথচ তিনি এনেছেন ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা দামের গাড়ি! ময়মনসিংহের এমপি প্রমোদ মানকিন সর্বোচ্চ তিনবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেছেন। গতবার তার আনা গাড়ির দাম এক কোটি টাকার কাছাকাছি হলেও বর্তমান সংসদে থেকে তিনি এনেছেন সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের গাড়ি। শুধু প্রমোদ মানকিন নয়, তিনবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার তালিকায় চার প্রভাবশালী এমপি হলেন বিএনপি নেতা এমকে আনোয়ার, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক। চলমান সংসদে থাকা এমপিদের মধ্যে দু’বার শুল্কমুক্ত গাড়ি এনেছেন বগুড়ার এমপি আবদুল মুমিন তালুকদার, টাঙ্গাইলের এমপি খোন্দকার আসাদুজ্জামান, ঝিনাইদহের এমপি আবদুল হাই ও গাজীপুরের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী। এছাড়া সপ্তম ও অষ্টম সংসদের ১০৩ এমপি দু’বার করে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করেছেন। এভাবে গত ছয়টি সংসদের সদস্যরা ৬০০ কোটি টাকা মূল্যে ১৩শ’রও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন।
সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কসহ যাবতীয় করমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারিকৃত এক সার্কুলারে এমপিদের শুল্ক ও যাবতীয় করমুক্ত গাড়ি আমদানির দ্বার খুলে দেয়া হয়। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ (১৫ ফেব্রুয়ারির) ও সপ্তম সংসদ এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত এমপিরা একটি করে জিপ বা কার শুল্ক ও যাবতীয় করমুক্তভাবে আমদানি করেছেন। তবে ওই সার্কুলারে মাত্র একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির বিধান থাকায় একাধিকবার নির্বাচিতরা নতুন করে আমদানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট এ সার্কুলার সংশোধন করা হয়। সংশোধিত সার্কুলার অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য একাধিকবার নির্বাচিত হলে প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে ৮ বছর পর কিংবা তার পরে যে কোনো সময় সংসদ সদস্য থাকাকালীন তিনি আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কসহ যাবতীয় করমুক্তভাবে আরও একটি জিপ বা কার আমদানি করতে পারবেন। এ সুবিধা লাভের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যকে স্পিকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সার্কুলার অনুযায়ী, আমদানিকৃত জিপ বা কারটি সংসদ সদস্যপদে বহাল থাকাকালীন বা আমদানির পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত হস্তান্তর করা যাবে না। এ সময় কেউ গাড়িটি হস্তান্তর করতে চাইলে মওকুফকৃত যাবতীয় শুল্ক ও কর হস্তান্তরের আগেই সংশ্লিষ্ট কালেক্টরের কাছে পরিশোধ করতে হবে। পরে গাড়ি হস্তান্তরের সময় ৫ বছর করা হয়। সব মিলে এখন বার বার নির্বাচিত হয়ে একজন সংসদ সদস্য প্রতি বারই আনছেন শুল্কমুক্ত গাড়ি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সাবেক বিএনপি জোট সরকারের ব্যবসায়ী মন্ত্রীরা পরিকল্পিতভাবে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির নীতিমালা সংশোধনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের সাবেক এক মন্ত্রী গাড়ি আমদানি এবং লাভের ব্যাপারে নিজের ব্যবসায়িক চিন্তাকে বিএনপির তরুণ ব্যবসায়ীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সরকার ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও এর সুযোগ নিয়েছেন বিগত বিএনপি জোট সরকার আমলের সংসদ সদস্যরা। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট সংসদ সদস্যরা নিজেদের স্বার্থে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করান। সংসদ সদস্যদের সুবিধার্থে দেশে সাধারণের জন্য ১৫০০ সিসির নিচে গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময় গাড়ি আমদানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ করলেও তা ধোপে টেকেনি। ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেয়া হয় গাড়ির ক্যাপাসিটি। প্রজ্ঞাপন ২৬৬-তে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্যরা ১৬৫০ সিসি পর্যন্ত কার এবং ৩০০০ সিসি পর্যন্ত জিপ আনতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ওই সময় থেকেই দেশের গাড়ি বাজার চলে যায় সংসদ সদস্য নামধারী ওই ব্যবসায়ীদের কাছে। ফায়দা লুটতে ব্যবসায়ী এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানিতে ‘গাড়ির ক্যাপাসিটি কত সিসি হবে’ তা উল্লেখ করেন না। কারণ গাড়ির ক্যাপাসিটি যত বেশি, দামও ততই বেশি। বেশি দামি গাড়ি দেশে ঢুকছে স্রোতের মতো। পরে ৩০০০ সিসির ঊর্ধ্বে উঠে ৫০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আসতে থাকে। আর এ খাতে সরকার হারাতে থাকে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।
শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি শুরু হওয়ার পরপরই দেখা যায়, কনটেইনারে করে দেশে আসছে হরেক রকম ও ডিজাইনের বিলাসবহুল বিভিন্ন গাড়ি। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করে ঢাকার কমলাপুরের আইসিডিতে খালাস করা হয়। বিলাসবহুল ওই গাড়িগুলো অতি গোপনে আমদানি হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব আয়োজন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। প্রভাবশালী সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না তারা। এসব গাড়ি কীভাবে দেশে আসছে, টাকার উৎস কোথায় এমনতর বিভিন্ন প্রশ্ন থাকলেও অদ্যাবধি নীরব ভূমিকাই পালন করে আসছে এনবিআর। চুপ করে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনও।
-খাসখবর
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়