Wednesday, June 26

কিশোরগঞ্জ-৪ উপনির্বাচন: অসীমের চেয়ে সম্পদ বেশি তৌফিকের

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থীই ব্যবসায়ী। তবে প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। ক্ষমতার দিক থেকেও তিনি এগিয়ে। তার আছে রাইফেল, টয়োটাগাড়ী, একাধিক বাড়ী, কোটি টাকার কাছাকাছি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। তার বাৎসরিক আয় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। অঢেল ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার স্বর্ণ শিখরে বাস করলেও তৌফিকের রাজনৈতিক কোন পদ-পরিচয় নেই। তার বিরুদ্ধে কোন মামলাও নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সৈয়দ মহিতুল ইসলাম অসীম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তুখোর নেতা। বর্তমানে অষ্টগ্রাম থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। অসীমের বিরুদ্ধে দাঙ্গাসহ চুরি মামলা ছিল ১টি। তার একমাত্র পেশা গার্মেন্টস ব্যবসা থেকে বৎসরিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে পৌনে ৯ লাখ টাকার সম্পদের মালিক তিনি। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা গেছে এসব তথ্য। 
হলফনামা বিশ্লেষণ করে আরো জানা যায় প্রর্থী তৌফিক বি.এস.এস পাস। তথ্যে পেশা উল্লেখ করেছেন ব্যবসা-মেডিক্যাল সার্ভিস । চাকুরীও করেন তিনি । চাকুরী থেকে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৩৮ হাজার, বাড়ী/এপার্টমেন্ট/দোকানভাড়া ১৩ হাজার ৫ শ টাকা। আর কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৮ শ’ টাকা মিলিয়ে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮ শ টাকা। তৌফিকের মোট সম্পদের পরিমান ৮৩ লাখ ১০ হাজার ৭শ ৯৭ টাকা। মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন পযর্ন্ত তার নিজ হাতে টাকা ছিল ৩৪ লাখ  ২ হাজার ৪৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমান ১০ লাখ ৬২ হাজার ৮ শ ৫৭ টাকা। ডিজিল্যাব কিশোরগঞ্জে শেয়ার রয়েছে ৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ৩৬ হাজার ১৯ টাকা। নিজ নামে ১টি পুরাতন টয়োটাকার রয়েছে, মূল্য ৬ লাখ টাকা। ২০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ ভরি স¦র্ণালংকার, ১ লাখ টাকার ফ্রিজ, টিভি, ল্যাপটপ। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের খাট, সোফা, আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল। এছাড়াও ২২ বোর রাইফেল, মূল্য ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে মিটামইনে কৃষি জমি রয়েছে ৩.১৯ একর, মূল্য ৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। মিটামইন বাজারে ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ১.৩৩ শতাংশ চান্দিনা ভিটি, ঢাকার মোহাম্মদ পুরে ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা মূল্যের ৯৯.২৫ অযুতাংশ ভূমি। একই এলাকায় ৪৯৫ অযুতাংশ জমি ও ৫ শ বর্গ ফুটের টিন শেড বাড়ির তিন ভাগের এক অংশের মালিক, মূল্য ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৭ টাকা। কিশোরগঞ্জ সদরের রশিদাবাদে ৮৪ হাজার টাকা মূল্যের ৭.৭৫ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে। আর প্রতিদ্বন্দ্বি অসীম ঢাকার উত্তরায় ইনডিগো ক্লথিং ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্তাধিকারী । তিনি পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ.এস.সি। হলফনামা অনুযায়ী অসীমের বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দাঙ্গাসহ একটি চুরির মামলা ছিল (মামলা নং ৫(১২)০১)। রায়ে খালাস। অসীম শুধু ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় করেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া তার নগদ ১ লাখ, ব্যাঙ্কে জমা ২ লখ ১০ হাজার, ৫ লাখ টাকার স্বর্নালঙ্কার মিলিয়ে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তবে স্বর্ণের পরিমাণ উল্লেখ করেননি। নিজ নামে কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। যৌথ মালিকানায় ১.২৩ একর কৃষি জমি, মূল্য ১৪ হাজার ৬৪২ টাকার, ৩.৬৭ শতাংশ অকৃষি ভূমি, মূল্য ১৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। ৩ লাখ টাকা মূল্যের আবাসিক ভবনের প্রাপ্য অংশ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকা মিলিয়ে প্রার্থীর অংশ ৬৬ হাজার ৩০৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ রয়েছে। 
কিশোরগঞ্জ শহরের বসিন্দা সুমন, মামুন, আজিজসহ অনেকে আলোকিত বাংলাদেশকে জানিয়েছেন প্রার্থী তৌফিক হলফনামায় বহু তথ্য গোপন করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি বিভিন্ন স্থানে নামের আগে প্রকৌশলী লিখতেন। তা তিনি হলফ নামায় লিখেননি। তৌফিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এসোসিয়েশন, জেলা শাখার সভাপতি হলেন কোন যোগ্যতার বলে, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। প্রার্থীদের হলফনামার সকল তথ্য নির্বাচনী এলাকায় মাইকিংসহ ব্যপক প্রচারের বিধান থাকলেও রিটানিং অফিসার এখনো তা না করায় যোগ্যতার প্রশ্নে ভোটাররা এখনো রয়েছেন অন্ধকারে। তারা তথ্য প্রচারের দাবী রাখেন। রিটার্নিং অফিসার মোঃ জাহিদ হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ,স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও মামলার বিষয়সহ অন্যান্য সকল তথ্য ভোটারদের জানানো হবে। এতদিন নির্বাচনী অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রার্থীদের তথ্য প্রচার করা সম্ভব হয়নি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্টপতি আবদুল হামিদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ছেলেদের রাজনৈতিক উত্তরসূরী করার চিন্তাও করেননি। এ কারণে দলের কোন কমিটিতে তৌফিকের নাম রাখা হয়নি। বাবার পরিচয়েই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়েছেন। আর অসীম ছাত্র জীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে তিনি জেলা ছাত্রলীগের নেতা হন। বর্তমানে অষ্টগ্রাম থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।  (ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়