ঢাকা: নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব ততই বাড়ছে। নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সংযোগ সেতু হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এনিয়ে উভয় দলই রুদ্ধদার বৈঠকে বসেছেন এরশাদের সঙ্গে।
এ পরিস্থিতিতে নিজেদের আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান। দলের সাংগঠনিক কাঠোমো জোরদার করতে তিনি শীর্ষ নেতাদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । প্রয়োজন সুর্নিদিষ্ট ও সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে দল থেকে। কিন্তু দলের অনেক হাইপ্রোফাইল নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না এরশাদ। বিশেষ করে দলের ‘সুযোগ সন্ধানী’ নেতাদের নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন তিনি।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় সুযোগ বুঝে যে সব নেতা দলত্যাগ করেছেন আবার দলে এসেছেন। তাদের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না জাপা চেয়ারম্যান। অতীতের মত ভবিষ্যতেও সুযোগ সন্ধানীরা যদি দল ছেড়ে যান তবে বিপাকে পড়তে হবে। তাই দলে ‘পরীক্ষিত’ নেতাদের গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবছেন তিনি। এ নিয়ে এরশাদ তার ঘনিষ্ঠদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কারো মধ্যে সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা জানানোর জন্য বলেছেন। জানা গেছে, দলের অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্যও এ নিয়ে শঙ্কিত।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদধারী এমন অনেক নেতা এর আগে একাধিকবার দল পরিবর্তন করেছেন। পরে কূলকিনারা করতে না পেরে ঘরে ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ। যিনি দলে চরম আওয়ামী লীগ বিরোধী বলে পরিচিত। প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি ভেঙে বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি (বিজেপি) করলে কাজী ফিরোজ রশীদ দলটির মহাসচিব হন। পরে এক-এগারোতে পট পরিবর্তনের পর বিজেপি ছেড়ে ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (পিডিপি) যোগ দেন জাপার এ প্রেসিডিয়াম সদস্য। পরে গত নির্বাচনে মহাজোট গঠনের আগে জাপাতে ফিরে আসেন তিনি।
জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ। তাকে নিয়েও দলের ভেতর ও বাইরে আছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পুরোপুরি বিএনপি ঘেষা হিসেবে জাতীয় পার্টিতে তার পরিচিতি রয়েছে। সূত্র জানায়, কাজী জাফরের বিভিন্ন পরামর্শের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না জাপা চেয়ারম্যান। তাকে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে। জাতীয় পার্টিকে মহাজোট থেকে বের করে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধতে কাজী জাফর জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম চৌধুরী। চারদলীয় সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর ২০০৬ সালে বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দেন এই নেতা। সেবার কুড়িগ্রাম থেকে মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচন বাতিল হয়ে ১/১১ সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপি ছেড়ে পিডিপিতে যোগ দেন তাজুল ইসলাম। তার পর সুবিধা করতে না পেরে মহাজোট করার আগে জাতীয় পার্টিতে ফেরেন দলের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য। জাতীয় পার্টির সাংসদ একেএম মহিদুল ইসলাম শুরু থেকে বিএনপির রাজনীতির যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। গত ২০০৬ সালের বাতিল হওয়ার নির্বাচনের আগে জাপা ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মহিদুল ইসলাম। দল থেকে মনোনয়নও পেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন বাতিল হওয়ার পর ফের জাপার ছায়া তলেই ফিরে আসেন। এরশাদের কাছে নিজ ভুলের জন্য অনুতপ্ত হলে বিগত নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়। সেবার বিজয়ী হয়ে দলে নিজের মুখ রেখেছিলেন তিনি।
কিশোরগঞ্জে জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু। এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন তাকে। যদিও ওই সময় বয়সে একেবারেই তরুণ ছিলেন মুজিবুল হক। পরে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক যোগ দেয়ার আগে বিএনপিতে গিয়েছিলেন চুন্নু। ওসমান ফারুক বিএনপিতে যোগদিলে মুজিবুল হক দল ত্যাগ করে আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসেন। ওই বার জাপা থেকে মনোনয়নও পেয়েছিলেন এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
কুষ্টিয়ার আহসান হাবিব লিংকন। বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের আসন থেকে মনোনয়ন পান লিংকন। কিন্তু মনোনয়ন দেয়ার একদিন পর তা বাতিল করে অধ্যাপক শহীদুল ইসলামকে ফের মনোনয়ন দেয়া হলে বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে ফেরেন তিনি। সাবেক মন্ত্রী নোয়াখালীর অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। শুরুর দিকে জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে নোয়াখালীর চাটখিল থেকে বিএনপির সাংসদ হন। পরে আবার জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসেন দলের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য।
যশোরের কেসবপুরে জামায়াতে ইসলামীর সাংসদ ছিলেন মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন। পরে তিনি জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। কিন্তু বিএনপিতেও শেষ পর্যন্ত থাকেন সাখাওয়াত হোসেন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। পরে ১/১১-এর সময় পিডিপিতে যোগ দেন তিনি। সেখানেও স্থায়ী হতে পারেননি। পিডিপি ছেড়ে নতুন একটি ইসলাম দল গড়ে তোলেন। সর্বশেষ জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন সাবেক এ জামায়াত নেতা। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও এরশাদ সরকারের সময়কার প্রতিমন্ত্রী এম কোরবান আলীও দলত্যাগীদের তালিকায় আছেন। জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের এই নেতা। পরবর্তীতে কূল কিনারা করতে না পেরে কয়েক বছর পর জাপাতেই ফিরে আসেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যারা ইতিপূর্বে জাতীয় পার্টি ছেড়ে অন্য দলে গিয়েছিলেন পরবর্তীতে ভুল বুঝে তারা আবার ফিরে এসেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন জাতীয় পার্টিতে একমাত্র সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চা হয়। তাছাড়া জাতীয় পার্টিতে থাকতে তাদের জনপ্রিয়তা যা ছিল দলত্যাগ করার পর তাতে ভাটা পড়েছে। তাই ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে। তবে অতীত ভুলে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও জোরালো করতে সবাই সম্মলিতভাবে কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে জনগণের চাহিদা প্রতিফলন ঘটাতে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়